crossorigin="anonymous">     crossorigin="anonymous"> Kalyani University B.A 3rd Semester History Major Long Question Answer 2024-2025

Kalyani University B.A 3rd Semester History Major Long Question Answer 2024-2025

এখানে প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর সিলেবাস অনুযায়ী সাজানো আছে

University of Kalyani Suggestion

History Major Long Question Answer 2024-2025

Course Code: HIST-M-T-3

UNIT-1

****1) প্রশ্ন. মৌর্য শাসন ব্যবস্থার মূল বৈশিষ্ট্য সমূহ আলোচনা কর। ৫

Kalyani University BA 3rd Semester History Major Long Question Answer Suggestion PDF টি পেতে.. আপনি 39 টাকা পেমেন্ট করুন। পেমেন্টের পর এক সেকেন্ডের মধ্যে কাঙ্ক্ষিত সাজেশনটি পাবেন। টাকা টি পেমেন্ট করার জন্য নিচে PAY বাটনে ক্লিক করুন। ধন্যবাদ।

এখানে অল্প কিছু প্রশ্নোত্তর আপলোড করা হয়েছে যদি তোমার মনে হয় সাজেশনটি BUY করতে পারো ।

উত্তর: মৌর্য শাসন ব্যবস্থার মূল বৈশিষ্ট্য সমূহ-:

ভারতের ইতিহাসে মৌর্য শাসন একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। খ্রিস্টপূর্ব ৩২১ সালে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য দ্বারা প্রতিষ্ঠিত এই সাম্রাজ্যটি খ্রিস্টপূর্ব ১৮৫ সাল পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। মৌর্য শাসনব্যবস্থার মূল বৈশিষ্ট্যগুলি নিম্নে আলোচনা করা হলো:

১. কেন্দ্রীয়কৃত শাসন ব্যবস্থা:

মৌর্য সাম্রাজ্যের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য ছিল এর কেন্দ্রীয়কৃত শাসন ব্যবস্থা। সমস্ত শাসন ক্ষমতা রাজা এবং তার কেন্দ্রীয় প্রশাসনের হাতে কেন্দ্রীভূত ছিল। রাজা সর্বোচ্চ শাসক এবং বিচারক হিসেবে অধিষ্ঠিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী এবং অন্যান্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা রাজাকে সাহায্য করতেন।

২. দক্ষ প্রশাসন:

মৌর্য শাসনব্যবস্থা অত্যন্ত সুসংগঠিত এবং দক্ষ প্রশাসনের উপর ভিত্তি করে ছিল। সাম্রাজ্যকে বিভিন্ন প্রদেশে বিভক্ত করা হয়েছিল, এবং প্রতিটি প্রদেশের শাসনের জন্য একজন রাজ্যের প্রতিনিধিকে নিয়োগ করা হয়েছিল, যিনি প্রদেশের শাসন পরিচালনা করতেন। প্রাদেশিক শাসকগণ কেন্দ্রীয় শাসনের প্রতি জবাবদিহি থাকতেন এবং নিয়মিতভাবে রিপোর্ট দিতেন।

৩. অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি:

মৌর্য শাসনকালে ভারতের অর্থনীতি ছিল অত্যন্ত সমৃদ্ধ। কৃষি ছিল প্রধান অর্থনৈতিক কার্যকলাপ, এবং রাজ্য কৃষকদের থেকে কর আদায় করত। রাজ্যটি রাস্তা, সেচ ব্যবস্থা এবং অন্যান্য পরিকাঠামো উন্নয়নে প্রচুর বিনিয়োগ করেছিল, যা বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক কার্যকলাপকে ত্বরান্বিত করেছিল। বাণিজ্যিক কার্যকলাপের জন্য রাস্তা এবং বন্দরগুলির উন্নয়নও ঘটেছিল।

৪. সামাজিক ন্যায় বিচার:

মৌর্য শাসনব্যবস্থায় সামাজিক ন্যায় বিচারের উপর গুরুত্বারোপ করা হতো। রাজা এবং তার প্রশাসনিক কর্মকর্তাগণ জনগণের কল্যাণের প্রতি দায়বদ্ধ ছিলেন। আর্থ-সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য মৌর্য শাসকগণ বিভিন্ন সংস্কারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন।

৫. সেনাবাহিনী এবং প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা:

মৌর্য সাম্রাজ্যের একটি শক্তিশালী এবং সুসংগঠিত সেনাবাহিনী ছিল। চাণক্যের “অর্থশাস্ত্র” থেকে জানা যায়, সেনাবাহিনীর মধ্যে পদাতিক, অশ্বারোহী, হাতির বাহিনী এবং রথ বাহিনী অন্তর্ভুক্ত ছিল। প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল অত্যন্ত শক্তিশালী, যা সাম্রাজ্যের সীমান্তকে সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করেছিল।

৬. বিচারব্যবস্থা:

মৌর্য শাসনব্যবস্থায় একটি সুসংগঠিত বিচারব্যবস্থা ছিল। রাজা নিজেই প্রধান বিচারপতির ভূমিকা পালন করতেন, এবং প্রতিটি প্রদেশে বিচারক নিয়োগ করা হত। বিচারব্যবস্থা ছিল দ্রুত এবং কার্যকরী, এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত ছিল।

৭. সংস্কৃতি এবং ধর্ম:

মৌর্য শাসনকালে সংস্কৃতি এবং ধর্মের উন্নতি ঘটেছিল। চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের শাসনকালে জৈনধর্ম এবং অশোকের শাসনকালে বৌদ্ধধর্মের প্রসার ঘটেছিল। অশোকের ধর্মীয় নীতি ছিল অত্যন্ত সহিষ্ণু, এবং তিনি ধম্ম প্রবর্তনের মাধ্যমে সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠা করতে চেষ্টা করেছিলেন।

৮. সুশাসনের উদাহরণ:

মৌর্য শাসনব্যবস্থা সুশাসনের একটি উজ্জ্বল উদাহরণ। চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য এবং তার পরবর্তী শাসকগণ সুশাসনের জন্য প্রসিদ্ধ ছিলেন। তাদের শাসনকাল শান্তি, স্থিতিশীলতা, এবং সমৃদ্ধির সময় হিসেবে বিবেচিত হয়।

৯. লেখনী এবং পুস্তক রচনা:

মৌর্য শাসনকালে চাণক্য (কৌটিল্য) "অর্থশাস্ত্র" রচনা করেন, যা তৎকালীন রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, এবং সামরিক বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল হিসেবে বিবেচিত হয়। এই গ্রন্থে মৌর্য সাম্রাজ্যের শাসনব্যবস্থা, প্রশাসনিক কাঠামো, এবং রাজনীতি সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ প্রদান করা হয়েছে।

উপসংহার:

মৌর্য শাসনব্যবস্থা ভারতের প্রাচীন ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এর কেন্দ্রীয়কৃত প্রশাসন, দক্ষ অর্থনৈতিক নীতি, শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, এবং সুশাসনের উদাহরণ আজও শিক্ষণীয়। মৌর্য শাসকদের কৃতিত্ব তাদের সমৃদ্ধ সাম্রাজ্য এবং প্রগতিশীল শাসননীতির জন্য ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

***2) প্রশ্ন. মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের জন্য সম্রাট অশোক কতটা দায়ী ছিলেন? 10

ভূমিকা:

মৌর্য সাম্রাজ্য ভারতীয় উপমহাদেশে প্রথম বৃহৎ ও কেন্দ্রিয়কৃত সাম্রাজ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের মাধ্যমে এবং তার পুত্র সম্রাট অশোকের শাসনামলে এটি তার সর্বোচ্চ পরাকাষ্ঠায় পৌঁছেছিল। কিন্তু অশোকের মৃত্যুর পর, এই মহিমান্বিত সাম্রাজ্য দ্রুত পতনের দিকে ধাবিত হয়। এই পতনের পেছনে সম্রাট অশোক কতটা দায়ী ছিলেন, তা নিয়ে ইতিহাসবিদদের মধ্যে বিতর্ক রয়েছে।

অশোকের শাসনামলের বৈশিষ্ট্য:

অশোক একজন প্রতিভাবান শাসক এবং সেনাপতি ছিলেন, যিনি তার সাম্রাজ্যকে সমৃদ্ধি ও শান্তির শিখরে নিয়ে গিয়েছিলেন। কলিঙ্গ যুদ্ধের পর বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ এবং অহিংসা ও ধর্ম প্রচারের পথে পরিচালিত হওয়া তার শাসনামলের বিশেষ বৈশিষ্ট্য। অশোকের বৌদ্ধধর্ম প্রচারের জন্য সমগ্র এশিয়ায় প্রভাব বিস্তার হয়েছিল।

সাম্রাজ্যের শাসনব্যবস্থা:

অশোকের সময়ে মৌর্য সাম্রাজ্য একটি কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রিত সাম্রাজ্য ছিল যেখানে রাজা ছিলেন সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। অশোকের সময়ে সাম্রাজ্যের প্রশাসনিক কাঠামো সুসংহত ও শক্তিশালী ছিল। কিন্তু, অশোকের মৃত্যুর পর তার উত্তরাধিকারীরা সেই শাসনব্যবস্থা বজায় রাখতে সক্ষম হননি।

অর্থনৈতিক নীতি ও প্রশাসনিক দুর্বলতা:

অশোকের বৌদ্ধধর্ম প্রচারের উদ্যোগের ফলে সাম্রাজ্যের অর্থনৈতিক নীতি পরিবর্তিত হয়েছিল। অনেকগুলি বৌদ্ধ স্তূপ ও বিহার নির্মাণের ফলে রাজকোষ থেকে প্রচুর অর্থ ব্যয়িত হয়েছিল, যা সাম্রাজ্যের আর্থিক অবস্থাকে দুর্বল করে দেয়। এছাড়াও, অশোকের পরবর্তী শাসকরা দক্ষ প্রশাসক না হওয়ায় সাম্রাজ্যের প্রশাসনিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে।

সামরিক দুর্বলতা:

অশোকের সময়ে সাম্রাজ্যের সামরিক শক্তি তার চরম সীমায় পৌঁছেছিল। কিন্তু কলিঙ্গ যুদ্ধের পর অশোকের অহিংস নীতির কারণে সাম্রাজ্যের সামরিক শক্তি কমতে থাকে। তার উত্তরাধিকারীরা সাম্রাজ্যের সীমান্ত রক্ষা করতে ও বিদ্রোহ দমন করতে সক্ষম হননি। ফলে আক্রমণকারী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলি সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অংশ দখল করতে শুরু করে।

অন্তর্দ্বন্দ্ব ও বিদ্রোহ:

অশোকের মৃত্যুর পর, তার উত্তরাধিকারীদের মধ্যে ক্ষমতার লড়াই ও অন্তর্দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এতে সাম্রাজ্যের শাসনব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ে এবং বিদ্রোহ ও গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। এই বিদ্রোহগুলি সাম্রাজ্যের স্থিতিশীলতা নষ্ট করে দেয় এবং সাম্রাজ্যের পতনের পথ প্রশস্ত করে।

আঞ্চলিক শাসকদের ক্ষমতা বৃদ্ধি:

অশোকের সময়ে বিভিন্ন প্রদেশ ও অঞ্চলের শাসকরা কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও, তার মৃত্যুর পর এই শাসকদের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। তারা স্বাধীনভাবে শাসন করতে শুরু করে এবং কেন্দ্রের প্রতি আনুগত্য কমিয়ে দেয়। এর ফলে সাম্রাজ্যের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ দুর্বল হয়ে পড়ে।

ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ:

ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে যে মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের জন্য শুধুমাত্র অশোক দায়ী ছিলেন কিনা। কিছু ঐতিহাসিক মনে করেন যে অশোকের নীতিমালা ও ধর্মীয় প্রচার সাম্রাজ্যের পতনের প্রধান কারণ ছিল। অন্যদিকে, কিছু ঐতিহাসিক মনে করেন যে অশোকের পরবর্তী শাসকদের অদক্ষতা এবং প্রশাসনিক দুর্বলতা সাম্রাজ্যের পতনের জন্য দায়ী ছিল।

উপসংহার:

মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের জন্য সম্রাট অশোক কতটা দায়ী ছিলেন তা নির্ধারণ করা কঠিন। অশোকের শাসনামলে সাম্রাজ্য তার পরাকাষ্ঠায় পৌঁছেছিল, কিন্তু তার অহিংস নীতি এবং ধর্ম প্রচার সাম্রাজ্যের অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তিকে দুর্বল করে দেয়। তার পরবর্তী শাসকরা সাম্রাজ্যকে ধরে রাখতে ব্যর্থ হন। তাই বলা যায় যে, অশোক এবং তার উত্তরাধিকারীদের যৌথ কারণে মৌর্য সাম্রাজ্যের পতন ঘটে।

UNIT-2

****4) প্রশ্ন. চোল শাসকদের স্বায়ত্বশাসন ব্যবস্থার বিশ্লেষণ করো। ৫

চোল শাসকদের স্বায়ত্বশাসন ব্যবস্থার বিশ্লেষণ:

চোল সাম্রাজ্য, যা তামিলনাড়ুর একটি প্রধান ঐতিহাসিক সাম্রাজ্য ছিল, তার প্রশাসনিক দক্ষতা এবং স্বায়ত্বশাসনের জন্য প্রসিদ্ধ। চোল শাসকদের অধীনে, স্বায়ত্বশাসনের একটি সমৃদ্ধ এবং কার্যকরী ব্যবস্থা গড়ে ওঠে যা স্থানীয় প্রশাসনকে শক্তিশালী করে তুলেছিল। এই ব্যবস্থা চোল শাসকদের স্থায়িত্ব এবং সমৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ ছিল।

স্থানীয় প্রশাসন ও গ্রাম পঞ্চায়েত:

চোল শাসকদের শাসনকালে গ্রাম প্রশাসন একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত। প্রত্যেকটি গ্রামে একটি পঞ্চায়েত বা সভা ছিল, যা স্থানীয় প্রশাসন, কর সংগ্রহ, এবং বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করত। এই পঞ্চায়েতগুলি বিভিন্ন স্তরে বিভক্ত ছিল এবং বিভিন্ন নাম দ্বারা পরিচিত ছিল, যেমন 'উর', 'সবহা' এবং 'মাহাসভা'।

উর: উর ছিল সাধারণত ছোট গ্রামগুলির জন্য ব্যবহৃত পঞ্চায়েত। এটি একটি সাধারণ পঞ্চায়েত যা গ্রামবাসীদের দ্বারা পরিচালিত হত। উর পঞ্চায়েত গ্রামবাসীদের সমস্যা সমাধান, জল সরবরাহ, এবং অন্যান্য সাম্প্রদায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করত।

সবহা: সবহা ছিল বৃহত্তর গ্রামগুলির পঞ্চায়েত ব্যবস্থা। সবহা সাধারণত ব্রাহ্মণ গ্রামগুলিতে দেখা যেত এবং এর কার্যক্রম ছিল আরও বিস্তৃত। সবহা জমি বিতরণ, কর নির্ধারণ, এবং আইন কার্যকর করার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিত।

মাহাসভা: মাহাসভা ছিল একটি বড় পঞ্চায়েত যা বৃহত্তর অঞ্চলের প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা করত। মাহাসভা স্থানীয় রাজস্ব সংগ্রহ, বিচার কার্যক্রম, এবং সাম্প্রদায়িক উন্নয়নমূলক কাজ পরিচালনা করত। এটি ছিল চোল সাম্রাজ্যের সর্বোচ্চ স্থানীয় প্রশাসনিক স্তর।

প্রশাসনিক কাঠামো:

চোল শাসকরা একটি সুবিন্যস্ত প্রশাসনিক কাঠামো প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তারা রাজ্যকে বিভিন্ন মন্ডলে বা প্রদেশে বিভক্ত করেছিলেন, যা আরও ছোট ছোট গ্রাম বা নগরে বিভক্ত ছিল। প্রত্যেকটি মন্ডলের শীর্ষে একজন রাজকর্মচারী নিযুক্ত ছিলেন, যাকে 'বৈলান' বলা হত। বৈলান ছিলেন মন্ডলের প্রধান প্রশাসক এবং তিনি রাজকীয় আদেশ বাস্তবায়ন করতেন।

রাজস্ব ব্যবস্থা:

চোল শাসকরা একটি কার্যকরী রাজস্ব ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। রাজস্ব মূলত কৃষি, বাণিজ্য, এবং শুল্ক থেকে সংগ্রহ করা হত। জমির উর্বরতা এবং উৎপাদন ক্ষমতার ভিত্তিতে কর নির্ধারণ করা হত। চোল শাসকদের রাজস্ব ব্যবস্থা ছিল অত্যন্ত সুসংগঠিত এবং এটি রাজ্যের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়ক ছিল।

বিচার ব্যবস্থা:

চোল শাসকদের বিচার ব্যবস্থা ছিল অত্যন্ত উন্নত। গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি স্থানীয় বিরোধ নিষ্পত্তি করত এবং ছোটখাটো মামলাগুলি পরিচালনা করত। বড় এবং গুরুতর মামলাগুলি মন্ডল এবং রাজ্যের উচ্চতর আদালতে প্রেরিত হত। বিচার ব্যবস্থায় ন্যায়বিচারের গুরুত্ব ছিল অপরিসীম এবং চোল শাসকরা এ বিষয়ে খুবই কঠোর ছিলেন।

সামরিক ও বাণিজ্যিক ব্যবস্থা:

চোল শাসকদের স্বায়ত্বশাসন ব্যবস্থায় সামরিক ও বাণিজ্যিক ব্যবস্থারও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। চোল সাম্রাজ্য ছিল একটি শক্তিশালী সামরিক শক্তি এবং তাদের নৌবাহিনী ছিল অত্যন্ত উন্নত। তারা সমুদ্রপথে বাণিজ্য বিস্তার করেছিল এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক স্থাপন করেছিল।

চোল শাসকদের স্বায়ত্বশাসন ব্যবস্থা একটি আধুনিক ও প্রগতিশীল প্রশাসনিক মডেল ছিল। তাদের কার্যকরী প্রশাসনিক কাঠামো, সুসংগঠিত রাজস্ব ব্যবস্থা, এবং শক্তিশালী বিচার ব্যবস্থা চোল সাম্রাজ্যকে একটি সমৃদ্ধ এবং স্থিতিশীল সাম্রাজ্যে পরিণত করেছিল। স্থানীয় প্রশাসনের উপর তাদের গুরুত্ব এবং স্বায়ত্বশাসনের কার্যকরী মডেল আধুনিক প্রশাসনিক ব্যবস্থার জন্য একটি আদর্শ উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হয়।

***5) প্রশ্ন. মৌর্যোত্তর যুগের শিল্পকলা তথা কুষাণ স্থাপত্য ভাস্কর্যের পরিচয় দাও।১০

মৌর্যোত্তর যুগের শিল্পকলা তথা কুষাণ স্থাপত্য ভাস্কর্যের পরিচয়:

মৌর্যোত্তর যুগের শিল্পকলা ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে এক বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে। এই সময়কালে শিল্পকলা ও স্থাপত্যশিল্পে বিপুল পরিবর্তন ও উন্নতি ঘটে। কুষাণ সাম্রাজ্যের শাসনকালে (প্রায় ১ম থেকে ৩য় শতাব্দী) এই পরিবর্তনগুলি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। কুষাণ সাম্রাজ্যের অধীনে স্থাপত্য ও ভাস্কর্যশিল্পে গ্রিক, পারসিক, ভারতীয় এবং মধ্য এশীয় প্রভাবের সম্মিলন ঘটে, যা এক অনন্য ও সমৃদ্ধ শিল্পধারা সৃষ্টি করে।

কুষাণ সাম্রাজ্য ও তাদের শিল্পকলা:

কুষাণরা ছিলেন মধ্য এশিয়া থেকে আগত এক যাযাবর জনগোষ্ঠী, যারা ক্রমে ভারতীয় উপমহাদেশে এসে সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে। তাদের শাসনামলে সংস্কৃতি ও শিল্পকলার ক্ষেত্রে এক নবজাগরণের সূচনা হয়। কুষাণ শাসকরা বৌদ্ধ ধর্মের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন এবং বৌদ্ধ শিল্পকলার প্রচার ও প্রসারে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন।

গন্ধার ও মথুরা শিল্পধারা:

কুষাণ যুগের শিল্পকলায় প্রধান দুটি ধারা লক্ষ্য করা যায় – গন্ধার ও মথুরা। গন্ধার শিল্পধারা মূলত উত্তর-পশ্চিম ভারতের গন্ধার অঞ্চলে (বর্তমান পাকিস্তান) বিকশিত হয়। এই ধারায় গ্রিক ও রোমান শিল্পের প্রভাব লক্ষ করা যায়। অন্যদিকে, মথুরা শিল্পধারা মধ্য ভারতের মথুরা অঞ্চলে বিকশিত হয়, যা বিশুদ্ধ ভারতীয় শৈলীতে প্রভাবিত।

গন্ধার শিল্পধারা:

গন্ধার শিল্পধারা গ্রিক-রোমান শিল্পের সাথে ভারতীয় উপাদানের মিশ্রণ ঘটায়। এখানে বুদ্ধমূর্তির নির্মাণে গ্রিক দেবদেবীদের মূর্তির শৈলী ব্যবহার করা হয়। বুদ্ধের মূর্তির মুখমণ্ডল, বসন, এবং অঙ্গভঙ্গি গুলিতে গ্রিক শিল্পকলার প্রভাব স্পষ্ট। এই মূর্তিগুলিতে সুশ্রীতা ও প্রকৃতিবাদী শৈলীর মেলবন্ধন ঘটে।

মথুরা শিল্পধারা:

মথুরা শিল্পধারা সম্পূর্ণভাবে ভারতীয় শৈলীতে প্রভাবিত। এখানে বুদ্ধমূর্তি এবং অন্যান্য দেবদেবীর মূর্তিতে স্থানীয় উপাদান ও প্রতিকৃতি ব্যবহৃত হয়। মথুরার মূর্তিগুলি সাধারণত রক্তিম বেলে পাথর দিয়ে নির্মিত এবং এখানে দেবদেবীর মূর্তিতে ভারতীয় বৈশিষ্ট্য ও প্রতীকীতা স্পষ্ট।

স্থাপত্যশিল্প:

কুষাণ স্থাপত্যশিল্পে বৃহত্তর মঠ, বিহার, স্তূপ এবং মন্দির নির্মাণ লক্ষ্য করা যায়। এই স্থাপনাগুলি নির্মাণে পাথর, ইট এবং কাঠের ব্যবহার হতো। স্থাপত্যশৈলীর ক্ষেত্রে গ্রীক ও পারসিক প্রভাব স্পষ্ট। কুষাণ যুগে স্থাপত্যশিল্পে স্থায়িত্ব, সৌন্দর্য এবং শৈল্পিকতা একসাথে মেলবন্ধন ঘটে।

বিহার ও মঠ:

কুষাণ শাসনামলে বিহার ও মঠ নির্মাণের ক্ষেত্রে বিশেষ দক্ষতা অর্জিত হয়। এই বিহারগুলিতে বিশাল হলঘর, অধ্যয়ন কক্ষ, এবং স্তুপা ছিল। এগুলি ধর্মীয় শিক্ষার কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হতো। বিহারগুলির নির্মাণশৈলী ছিল স্থায়িত্বশীল এবং শিল্পময়।

স্তূপ:

কুষাণ যুগের স্তূপগুলি ধর্মীয় স্থাপত্যে গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে। এগুলির নির্মাণে পাথর ও ইট ব্যবহৃত হতো এবং স্থাপত্যশৈলীতে দক্ষতা ও শৈল্পিকতার মিশ্রণ দেখা যেত। এই স্তূপগুলিতে বুদ্ধের জীবনের বিভিন্ন ঘটনা এবং বৌদ্ধ ধর্মের আদর্শ চিত্রিত করা হতো।

মন্দির:

কুষাণ যুগে হিন্দু ও বৌদ্ধ মন্দির নির্মাণেও উন্নতি ঘটে। এই মন্দিরগুলির স্থাপত্যশৈলী ও অলংকরণে কুষাণ শিল্পকলার প্রতিফলন ঘটে। মন্দিরগুলির দেওয়ালে খোদাই করা বিভিন্ন দেবদেবীর মূর্তি ও প্রতীকী চিত্রগুলি সেই সময়ের শৈল্পিক উৎকর্ষের পরিচায়ক।

ভাস্কর্যশিল্প:

কুষাণ যুগে ভাস্কর্যশিল্পে বিপুল উন্নতি ঘটে। এখানে বুদ্ধমূর্তি এবং অন্যান্য দেবদেবীর মূর্তি নির্মাণে দক্ষতা ও শৈল্পিকতার পরিচয় পাওয়া যায়। এই সময়ে নির্মিত বুদ্ধমূর্তিগুলি শান্তি, সৌন্দর্য, এবং শৈল্পিকতার মেলবন্ধন।

বুদ্ধমূর্তি:

বুদ্ধমূর্তি নির্মাণে কুষাণ শিল্পকলায় বিশেষ দক্ষতা ও শৈল্পিকতা প্রদর্শিত হয়। বুদ্ধমূর্তিগুলিতে মুখমণ্ডল ও অঙ্গভঙ্গির বিশুদ্ধতা এবং সুক্ষ্মতা লক্ষ্যণীয়। এই মূর্তিগুলিতে বুদ্ধের প্রশান্ত ও ধ্যানমগ্ন রূপ তুলে ধরা হয়।

অন্যান্য দেবদেবীর মূর্তি:

কুষাণ যুগে হিন্দু দেবদেবীর মূর্তি নির্মাণেও দক্ষতা প্রদর্শিত হয়। এই মূর্তিগুলিতে দেবদেবীর মহিমা ও শক্তি প্রকাশ পায়। কুষাণ ভাস্কর্যশিল্পে মূর্তিগুলির অলংকরণ ও খোদাইয়ের ক্ষেত্রে সৃজনশীলতা ও শৈল্পিকতার পরিচয় পাওয়া যায়।

উপসংহার:

মৌর্যোত্তর যুগের কুষাণ স্থাপত্য ও ভাস্কর্যশিল্প ভারতীয় উপমহাদেশের শিল্পকলার ইতিহাসে এক গৌরবময় অধ্যায়। এই সময়ের শিল্পকলা ও স্থাপত্যশিল্পে গ্রিক, পারসিক, ভারতীয় এবং মধ্য এশীয় প্রভাবের মিশ্রণ ঘটে, যা এক অনন্য ও সমৃদ্ধ শিল্পধারা সৃষ্টি করে। কুষাণ যুগের শিল্পকলা আজও আমাদের শৈল্পিক ঐতিহ্যের এক মূল্যবান অংশ হিসেবে স্বীকৃত।

****7) প্রশ্ন. প্রাচীন ভারতের ইতিহাসে হর্ষবর্ধনকে কেন বিশিষ্ট শাসক হিসেবে বিবেচনা করা হয়? ৫

প্রাচীন ভারতের ইতিহাসে হর্ষবর্ধন বা হর্ষবর্ধন এক বিশিষ্ট শাসক হিসেবে পরিচিত, যিনি হর্ষ নামে আরও বিখ্যাত। গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতনের পর সপ্তম শতাব্দীতে তিনি উত্তর ভারতে এক শক্তিশালী সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। হর্ষবর্ধনের শাসনামল ইতিহাসে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য এবং তার শাসনব্যবস্থা, প্রশাসনিক দক্ষতা, সাংস্কৃতিক পৃষ্ঠপোষকতা এবং ধর্মীয় উদারতার জন্য তিনি প্রশংসিত হয়েছেন।

১. রাজনৈতিক ও সামরিক শক্তি:

হর্ষবর্ধন শাসনক্ষমতায় আসার পর তার সাম্রাজ্য বিস্তৃত হয়েছিল হিমালয় থেকে নিম্ন গঙ্গা অবধি। তার নেতৃত্বে সেনাবাহিনী ছিল সুসজ্জিত ও সুপ্রশিক্ষিত। হর্ষবর্ধন বিভিন্ন রাজ্যকে তার অধীনে আনতে সফল হয়েছিলেন, যা তার রাজনৈতিক দক্ষতা এবং সামরিক কৌশলের পরিচায়ক। তার সাম্রাজ্যের সীমা ও প্রভাবকে বিস্তৃত করতে তিনি দক্ষতার সাথে যুদ্ধ পরিচালনা করেছিলেন।

২. প্রশাসনিক দক্ষতা:

হর্ষবর্ধনের প্রশাসনিক দক্ষতা ছিল প্রশংসনীয়। তিনি তার সাম্রাজ্যকে বিভিন্ন প্রদেশে ভাগ করেছিলেন এবং প্রতিটি প্রদেশে দক্ষ প্রশাসক নিযুক্ত করেছিলেন। কর সংগ্রহ, বিচার ব্যবস্থা এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থায় তিনি শৃঙ্খলা বজায় রেখেছিলেন। তার শাসনামলে প্রজারা ছিল সন্তুষ্ট এবং সুস্থ, যা তার দক্ষ প্রশাসনিক নীতির ফল।

৩. ধর্মীয় উদারতা:

হর্ষবর্ধন হিন্দু ধর্মাবলম্বী হলেও, তিনি ধর্মীয় সহিষ্ণুতা এবং উদারতার জন্য পরিচিত ছিলেন। তিনি বৌদ্ধধর্মের প্রতি বিশেষ সহানুভূতি দেখিয়েছিলেন এবং বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের সাহায্য করেছিলেন। বিখ্যাত চীনা ভিক্ষু হিউয়েন সাং তার শাসনামলে ভারতে এসেছিলেন এবং হর্ষবর্ধনের উদারতার প্রশংসা করেছিলেন। হিউয়েন সাং-এর বিবরণে হর্ষবর্ধনের ধর্মীয় উদারতার পরিচয় পাওয়া যায়, যা তার শাসনের একটি বিশেষ দিক।

৪. সাংস্কৃতিক পৃষ্ঠপোষকতা:

হর্ষবর্ধন একজন মেধাবী লেখক এবং সংস্কৃত পণ্ডিত ছিলেন। তিনি নিজেও সাহিত্য রচনা করেছিলেন, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য 'নাগানন্দ', 'রত্নাবলী' এবং 'প্রিয়দর্শিকা'। তার শাসনামলে সংস্কৃত সাহিত্যের ব্যাপক উন্নতি হয়েছিল। হর্ষবর্ধন তার রাজ্যে সাহিত্যিক, পণ্ডিত এবং কবিদের পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করেছিলেন, যা তার শাসনামলের সাংস্কৃতিক উন্মেষকে চিহ্নিত করে।

৫. আন্তর্জাতিক সম্পর্ক:

হর্ষবর্ধন তার শাসনামলে আন্তর্জাতিক সম্পর্কও বজায় রেখেছিলেন। চীনা ভিক্ষু হিউয়েন সাং-এর ভারত সফর এবং তার বিবরণে হর্ষবর্ধনের শাসনের প্রশংসা পাওয়া যায়। এছাড়াও, হর্ষবর্ধন অন্যান্য দেশের সাথে সম্পর্ক বজায় রেখে কূটনৈতিক দক্ষতার পরিচয় দিয়েছিলেন।

৬. সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন:

হর্ষবর্ধনের শাসনামলে কৃষি, বাণিজ্য এবং শিল্পের উন্নতি হয়েছিল। তিনি সেচব্যবস্থা উন্নত করেছিলেন এবং কৃষকদের বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করেছিলেন। তার শাসনামলে রাজ্য ছিল শান্তিপূর্ণ এবং সমৃদ্ধ। প্রজারা ছিল সন্তুষ্ট এবং সুখী, যা তার সামাজিক এবং অর্থনৈতিক নীতির সাফল্যের প্রতিফলন।

উপসংহার:

হর্ষবর্ধন প্রাচীন ভারতের ইতিহাসে এক বিশিষ্ট শাসক হিসেবে বিবেচিত হন তার রাজনৈতিক দক্ষতা, প্রশাসনিক নীতি, ধর্মীয় উদারতা, সাংস্কৃতিক পৃষ্ঠপোষকতা এবং সামাজিক উন্নয়নের জন্য। তার শাসনামল ইতিহাসের একটি উজ্জ্বল অধ্যায় এবং তার শাসন ব্যবস্থার বিভিন্ন দিক এখনও গবেষকদের জন্য প্রাসঙ্গিক ও অনুপ্রেরণামূলক।

উপসংহার:

সাতবাহন রাজত্বকালে দক্ষিণ ভারতের ধর্মীয় অবস্থা ছিল বৈচিত্র্যময় ও সহিষ্ণু। এই সময়ে বৌদ্ধধর্ম, জৈনধর্ম ও বৈদিক ধর্মের প্রভাব দক্ষিণ ভারতে গভীরভাবে অনুভূত হয়। সাতবাহন রাজারা ধর্মীয় সহিষ্ণুতা ও মৈত্রীর মাধ্যমে একটি স্থিতিশীল ও সমৃদ্ধ সমাজ গড়ে তোলেন। তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলির উন্নয়ন ঘটে এবং ধর্মীয় শিল্প ও সাহিত্য সমৃদ্ধ হয়। এই সবকিছু মিলিয়ে সাতবাহন আমল দক্ষিণ ভারতের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হয়।

UNIT-3

****9) প্রশ্ন. তুমি কি গুপ্ত যুগকে 'স্বর্ণযুগ' বলে মনে কর? যদি কর, তবে কেন? 10

গুপ্ত যুগ (৩২০-৫৫০ খ্রিষ্টাব্দ) ভারতের ইতিহাসে এক বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ স্থান অধিকার করে আছে। অনেক ঐতিহাসিক এবং গবেষকরা এই যুগকে 'স্বর্ণযুগ' বলে অভিহিত করেন। এই মতবাদ কেন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তার বিভিন্ন কারণ ও দিক আছে। গুপ্ত যুগে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, সাংস্কৃতিক উন্নতি, শিল্প-সাহিত্যের বিকাশ এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ইত্যাদি কারণগুলির ভিত্তিতে এই যুগকে 'স্বর্ণযুগ' বলা হয়।

১. রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা:

গুপ্ত সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা শ্রীগুপ্ত এবং তাঁর উত্তরসূরীগণ একটি স্থিতিশীল ও শক্তিশালী সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। বিশেষত সমুদ্রগুপ্ত ও চন্দ্রগুপ্ত বিক্রমাদিত্যের শাসনকালে সাম্রাজ্যের বিস্তার এবং সুশাসন সুনিশ্চিত হয়। এই সময়ে সাম্রাজ্য ছিল ঐক্যবদ্ধ এবং শান্তিপূর্ণ, যা সমাজের সর্বস্তরে স্থিতিশীলতা এবং নিরাপত্তা প্রদান করেছিল।

২. অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি:

গুপ্ত যুগে কৃষি, শিল্প, ও বাণিজ্য ব্যাপক উন্নতি লাভ করে। সুদৃশ্য রাস্তাঘাট ও সড়ক নির্মাণের ফলে বাণিজ্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় উন্নতি ঘটে। মুদ্রা ব্যবস্থার উন্নতি, বিশেষ করে স্বর্ণমুদ্রার প্রচলন, অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করে। সেই সাথে বাণিজ্যিক কেন্দ্রগুলি এবং বন্দরগুলি বিভিন্ন সামগ্রী রপ্তানি ও আমদানির মাধ্যমে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে অবদান রাখে।

৩. শিক্ষা ও বিদ্যার উন্নতি:

গুপ্ত যুগে শিক্ষা ও বিদ্যার ক্ষেত্রে ব্যাপক অগ্রগতি হয়। তক্ষশিলা, নালন্দা এবং বিক্রমশিলা বিশ্ববিদ্যালয়গুলির প্রতিষ্ঠা এই সময়ের উল্লেখযোগ্য ঘটনা। এ সময়ে জ্যোতির্বিদ্যা, গণিত, আয়ুর্বেদ, এবং অন্যান্য বিজ্ঞানশাস্ত্রে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি ঘটে। আর্যভট্ট এবং বরাহমিহিরের মত মহান বিজ্ঞানী এবং গণিতবিদরা এই সময়ে তাঁদের অমূল্য অবদান রেখেছেন।

৪. সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিকাশ:

গুপ্ত যুগে সাহিত্য এবং সংস্কৃতির এক অসাধারণ বিকাশ ঘটে। সংস্কৃত ভাষা এই সময়ে প্রধান সাহিত্য ও বিদ্যার মাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। কাব্য, নাটক, এবং গদ্যসাহিত্যে এই সময়ে অনেক উল্লেখযোগ্য সৃষ্টি হয়। কালিদাসের 'অভিজ্ঞান শকুন্তলম', 'মেঘদূত', এবং 'রঘুবংশ' এই সময়ের উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্ম। পাশাপাশি, বিভিন্ন শাস্ত্র, পুরাণ, এবং ধর্মগ্রন্থ রচিত হয় যা হিন্দু ধর্মের মৌলিক দিকগুলি সংরক্ষণ করে।

৫. শিল্প ও স্থাপত্য:

গুপ্ত যুগে শিল্প ও স্থাপত্যের ক্ষেত্রে অসামান্য উন্নতি হয়। এই সময়ে নির্মিত মন্দির, বিহার, এবং স্তুপগুলি স্থাপত্যশিল্পের উৎকর্ষতার নিদর্শন। গুপ্ত যুগের মুদ্রা ও ভাস্কর্যগুলি এই সময়ের শিল্পের উৎকর্ষতা প্রকাশ করে। বিশেষত, সাঁচি এবং অজন্তা গুহার চিত্রকলা এবং ভাস্কর্যগুলি এই সময়ের শিল্পের উৎকর্ষতার প্রতীক।

৬. ধর্ম ও দর্শনের বিকাশ:

গুপ্ত যুগে হিন্দু ধর্মের পুনরুজ্জীবন ঘটে। বৈদিক ধর্মের পাশাপাশি পুরাণিক হিন্দুধর্মের প্রসার ঘটে। বৌদ্ধ এবং জৈন ধর্মও এই সময়ে প্রচলিত ছিল এবং বিভিন্ন দার্শনিক মতবাদ বিকশিত হয়। এই সময়ে ধর্মীয় সহনশীলতা এবং সমন্বয় লক্ষ্য করা যায় যা সমাজে শান্তি ও সম্প্রীতির বাণী প্রচার করে।

উপসংহার:

উপরোক্ত কারণগুলির ভিত্তিতে, গুপ্ত যুগকে 'স্বর্ণযুগ' বলা হয়। এই যুগের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, শিক্ষা ও বিদ্যার উন্নতি, সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিকাশ, শিল্প ও স্থাপত্যের উৎকর্ষতা, এবং ধর্ম ও দর্শনের বিকাশ ইত্যাদি দিকগুলি এই যুগকে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য করে তুলেছে। এই যুগের বিভিন্ন অগ্রগতি ও উন্নয়নগুলি পরবর্তী সময়ের জন্য এক শক্ত ভিত্তি স্থাপন করেছে এবং ভারতীয় সভ্যতার ইতিহাসে এক স্বর্ণোজ্জ্বল অধ্যায় রচনা করেছে।

UNIT-4

****11) প্রশ্ন. গান্ধার শিল্পের উপর একটি টীকা লেখ। ৫

গান্ধার শিল্প বলতে প্রাচীন ভারতের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে গড়ে ওঠা একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্পকলার ধারা বোঝায়। এই শিল্প ধারা মূলত খ্রিস্টপূর্ব ১ম শতাব্দী থেকে খ্রিস্টাব্দ ৫ম শতাব্দীর মধ্যে বিকাশ লাভ করে। গান্ধার শিল্পের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল এটি গ্রিক এবং রোমান শিল্পকলার সাথে ভারতীয় ঐতিহ্যের সংমিশ্রণে গড়ে উঠেছিল। গান্ধার শিল্পের উল্লেখযোগ্য নিদর্শনগুলি মূলত বর্তমান পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশ এবং আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় এলাকায় পাওয়া যায়।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট:

গান্ধার শিল্পের উৎপত্তি এবং বিকাশের ক্ষেত্রে বেশ কিছু ঐতিহাসিক ঘটনার অবদান রয়েছে। আলেকজান্ডার দ্য গ্রেটের ভারত আক্রমণ এবং তার পরবর্তী হেলেনিস্টিক প্রভাব এই অঞ্চলের শিল্পকলায় উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছিল। খ্রিস্টপূর্ব ৩২৬ সালে আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট গান্ধার অঞ্চলে প্রবেশ করেন এবং এই অঞ্চলে গ্রিক সংস্কৃতির সূচনা করেন। এরপরের সময়ে কুষাণ সাম্রাজ্যের অধীনে গান্ধার শিল্প তার শীর্ষে পৌঁছায়। কুষাণ রাজা কণিষ্কের সময়ে এই শিল্পকলার সর্বাধিক বিকাশ ঘটে।

গান্ধার শিল্পের বৈশিষ্ট্য:

গান্ধার শিল্পের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল এর মূর্তিগুলির শৈল্পিক ভঙ্গি এবং খোদাইয়ের সূক্ষ্মতা। এই শিল্পধারায় বুদ্ধের মূর্তি এবং অন্যান্য ধর্মীয় চিত্রকর্ম প্রধানত নির্মিত হত। গান্ধার শিল্পে বুদ্ধের মূর্তি গঠন এবং আলংকারিক কাজের মধ্যে গ্রিক এবং রোমান প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। বুদ্ধের মুখমণ্ডল, চুলের স্টাইল, পোশাক এবং ভঙ্গিমা গ্রিক দেবতার মূর্তির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ ছিল।

গান্ধার শিল্পের আরেকটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল এর উপাদান নির্বাচন। এই শিল্পে প্রধানত ধাতু, পাথর এবং মাটি ব্যবহার করা হত। পাথরের মূর্তি এবং খোদাইগুলির ক্ষেত্রে মথুরার লাল বেলেপাথর এবং শ্বেতপাথরের ব্যবহার বেশি পরিলক্ষিত হয়। মূর্তিগুলি সাধারণত ধ্রুপদী গ্রিক শিল্পকলার আদলে খোদাই করা হত এবং এতে সূক্ষ্ম খোদাইয়ের কাজ করা হত।

উল্লেখযোগ্য নিদর্শন:

গান্ধার শিল্পের অন্যতম উল্লেখযোগ্য নিদর্শন হল বুদ্ধের মূর্তি। এই মূর্তিগুলিতে বুদ্ধের বিভিন্ন ভঙ্গিমা যেমন ধ্যানমুদ্রা, ভূমিস্পর্শ মুদ্রা এবং ধর্মচক্র মুদ্রা ফুটে ওঠে। এছাড়াও গান্ধার শিল্পে বিভিন্ন যক্ষ, যক্ষিণী এবং ধর্মীয় ঘটনার চিত্রকর্মও পাওয়া যায়।

প্রভাব ও উত্তরাধিকার:

গান্ধার শিল্প পরবর্তী সময়ে ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের শিল্পকলার উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিল। বিশেষ করে মথুরা এবং গুপ্ত যুগের শিল্পকলায় গান্ধার শিল্পের প্রভাব লক্ষণীয়। গুপ্ত যুগে বুদ্ধের মূর্তিগুলির শৈল্পিকতা এবং খোদাইয়ের সূক্ষ্মতা গান্ধার শিল্পের প্রভাবকেই নির্দেশ করে। গান্ধার শিল্পের প্রভাব শুধু ভারতেই সীমাবদ্ধ ছিল না, এটি এশিয়ার অন্যান্য দেশ যেমন চীন, জাপান এবং মধ্য এশিয়ার শিল্পকলার উপরেও প্রভাব ফেলেছিল। বৌদ্ধ ধর্ম প্রচারের সাথে সাথে গান্ধার শিল্পের নিদর্শন এবং শৈল্পিক ধারা এই দেশগুলিতে ছড়িয়ে পড়ে।

উপসংহার:

গান্ধার শিল্প প্রাচীন ভারতের একটি গুরুত্বপূর্ণ শৈল্পিক ধারা, যা গ্রিক এবং রোমান শিল্পকলার সাথে ভারতীয় ঐতিহ্যের সংমিশ্রণে গড়ে উঠেছিল। এর নিদর্শনগুলি প্রাচীন ভারতের শৈল্পিক উৎকর্ষতার সাক্ষ্য বহন করে। গান্ধার শিল্পের প্রভাব ভারতীয় উপমহাদেশের শিল্পকলায় আজও বিদ্যমান এবং এটি আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়।

Kalyani University BA 3rd Semester History Major Long Question Answer Suggestion PDF টি পেতে.. আপনি 39 টাকা পেমেন্ট করুন। পেমেন্টের পর এক সেকেন্ডের মধ্যে কাঙ্ক্ষিত সাজেশনটি পাবেন। টাকা টি পেমেন্ট করার জন্য নিচে PAY বাটনে ক্লিক করুন। ধন্যবাদ।

এখানে অল্প কিছু প্রশ্নোত্তর আপলোড করা হয়েছে যদি তোমার মনে হয় সাজেশনটি BUY করতে পারো ।

Leave a Comment