crossorigin="anonymous">     crossorigin="anonymous"> B.A 1st Semester History SEC Long Questions and Answers Suggestion Kalyani University

B.A 1st Semester History SEC Long Questions and Answers Suggestion Kalyani University

University of Kalyani Suggestion

এখানে প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর সিলেবাস অনুযায়ী সাজানো আছে

Kalyani University B.A 1st Semester History SEC Long Questions and Answers Suggestion

Course Code: HIST-SEC-H-1

(Looking into Indian Heritage Through Art and Architecture)

My Phone Number- 6295668424

এখানে স্যাম্পল হিসাবে অল্প কিছু প্রশ্নোত্তর আপলোড করা হয়েছে যদি তোমার মনে হয় সাজেশনটি BUY করতে পারো ।

UNIT-1

****1) প্রশ্ন. ভারতীয় ঐতিহ্যের বিবর্তন ও ইতিহাস নিজের ভাষায় মূল্যায়ন করো। (৫/১০)

ভারতীয় ঐতিহ্যের বিবর্তন ও ইতিহাস: ভারতীয় ঐতিহ্য হাজার বছরের সমৃদ্ধ ইতিহাস, সংস্কৃতি, এবং চর্চার উপর প্রতিষ্ঠিত। এই ঐতিহ্যের বিবর্তন এবং ইতিহাস মানবজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে এক গভীর ছাপ রেখে গেছে। ভারতীয় ঐতিহ্য শুধুমাত্র সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেই নয়, বরং আধ্যাত্মিক, দার্শনিক এবং জ্ঞানতাত্ত্বিক ক্ষেত্রেও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এখানে ভারতীয় ঐতিহ্যের বিবর্তন এবং ইতিহাসের উপর একটি মূল্যায়ন দেওয়া হলো।

প্রাচীন যুগের ভারতীয় ঐতিহ্য: ভারতীয় ঐতিহ্যের সূত্রপাত প্রাচীন যুগে, যা প্রাচীন সিন্ধু সভ্যতার সময় থেকে শুরু হয়। খ্রিস্টপূর্ব ৩৩০০-১৩০০ অব্দের মধ্যে বিকশিত এই সভ্যতা ছিল বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন সভ্যতা। মোহেঞ্জোদাড়ো এবং হরপ্পার মতো নগরগুলি এই সময়ে উন্নত নগর পরিকল্পনা এবং জল ব্যবস্থাপনার নিদর্শন বহন করে।

এই সময়ে বৈদিক সংস্কৃতির বিকাশ ঘটে, যা ভারতীয় ঐতিহ্যের ভিত্তি স্থাপন করে। ঋগ্বেদ, সামবেদ, যজুর্বেদ এবং অথর্ববেদের মতো প্রাচীন বৈদিক সাহিত্য মানবজীবনের ধর্মীয় এবং আধ্যাত্মিক দিকগুলি ব্যাখ্যা করে। এই সময়েই ঋষি-মুনিদের দার্শনিক চর্চার মাধ্যমে উপনিষদ ও পুরাণ রচিত হয়।

মৌর্য ও গুপ্ত সাম্রাজ্যের সময়: মৌর্য সাম্রাজ্যের অধীনে ভারতীয় ঐতিহ্যের একটি সোনালি যুগের সূচনা হয়। চাণক্যের অর্থশাস্ত্র এবং অশোকের ধর্মপ্রচার ভারতীয় সংস্কৃতিকে একটি নতুন দিকনির্দেশ দেয়। অশোকের শাসনামলে বৌদ্ধ ধর্মের প্রসার ঘটে, যা ভারতীয় ঐতিহ্যে অহিংসা এবং সাম্যবাদের ধারণা যুক্ত করে।

গুপ্ত সাম্রাজ্যের সময় ভারতীয় ঐতিহ্যের স্বর্ণযুগ হিসেবে বিবেচিত হয়। এই সময়ে সাহিত্য, বিজ্ঞান, শিল্পকলা এবং স্থাপত্যের ব্যাপক উন্নতি ঘটে। কালিদাসের সাহিত্যকর্ম, আর্যভট্টের জ্যোতির্বিজ্ঞান, এবং নালন্দা মহাবিহারের মতো প্রতিষ্ঠানগুলি ভারতীয় ঐতিহ্যের গৌরবময় অধ্যায়।

মধ্যযুগের ভারতীয় ঐতিহ্য: মধ্যযুগে ভারতের ঐতিহ্যে মুসলিম শাসকদের আগমনের ফলে একটি নতুন দিক সংযুক্ত হয়। দিল্লি সালতানাত এবং মুঘল সাম্রাজ্যের সময়ে ভারতীয় সংস্কৃতিতে একটি মিশ্র সংস্কৃতির উদ্ভব ঘটে। তাজমহল, লাল কেল্লার মতো স্থাপত্যকর্ম এবং মুঘল চিত্রকলার মতো শিল্পকর্ম এই সময়ের বিশেষ নিদর্শন।

মধ্যযুগে ভক্তি আন্দোলন এবং সুফি আন্দোলনের মাধ্যমে ধর্মীয় ঐক্যের প্রচেষ্টা করা হয়। রামানন্দ, কবীর, মীরাবাই এবং গুরু নানকের মতো সাধু-সন্তরা মানুষের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রচার করেন।

ঔপনিবেশিক যুগের ভারতীয় ঐতিহ্য: ঔপনিবেশিক যুগে ভারতীয় ঐতিহ্যের উপর বিদেশি শাসনের প্রভাব পড়ে। ব্রিটিশ শাসনের ফলে ভারতীয় সমাজে বিভিন্ন আধুনিক পরিবর্তন আসে। এই সময়ে শিক্ষাব্যবস্থা এবং প্রশাসনিক কাঠামোয় আধুনিকতার সংযোজন ঘটে।

উনবিংশ এবং বিংশ শতাব্দীতে ভারতীয় ঐতিহ্যে পুনর্জাগরণ ঘটে। রাজা রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, এবং স্বামী বিবেকানন্দের মতো নেতারা ভারতীয় ঐতিহ্যকে আধুনিকীকরণের জন্য কাজ করেন। মহাত্মা গান্ধীর অহিংসা আন্দোলন এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাহিত্যকর্ম এই সময়ের ভারতীয় ঐতিহ্যের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে।

স্বাধীন ভারতের ঐতিহ্য: ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পর ভারতীয় ঐতিহ্যে একটি নতুন অধ্যায় শুরু হয়। ভারত তার বহুত্ববাদী সংস্কৃতি এবং ঐক্যের মধ্যে বৈচিত্র্যের আদর্শ ধরে রাখে। ভারতীয় সংবিধান দেশের ঐতিহ্য এবং আধুনিকতার মধ্যে একটি সেতুবন্ধন স্থাপন করে।

স্বাধীনতার পর থেকে ভারতীয় ঐতিহ্যের বিকাশ অব্যাহত রয়েছে। ভারতীয় চলচ্চিত্র, সংগীত, এবং সাহিত্য বিশ্বব্যাপী পরিচিতি লাভ করে। যোগ এবং আয়ুর্বেদ আজকের বিশ্বে ভারতীয় ঐতিহ্যের অন্যতম প্রতীক।

উপসংহার: ভারতীয় ঐতিহ্য তার বিবর্তন এবং ইতিহাসের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী এক অনন্য স্থান দখল করেছে। প্রাচীন কাল থেকে আধুনিক যুগ পর্যন্ত ভারতীয় ঐতিহ্য তার বহুমুখী রূপ এবং গভীরতার জন্য সুপরিচিত। এটি শুধু অতীতের সম্পদ নয়, বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি শিক্ষণীয় দিক। ভারতীয় ঐতিহ্যের এই গৌরবময় যাত্রা আমাদের দেশকে আরও সমৃদ্ধ এবং গৌরবান্বিত করেছে।

UNIT-2

****2) প্রশ্ন. সুলতানি আমলের স্থাপত্যে বাংলার বিকাশ কীভাবে হয়েছিল? (১০)

সুলতানি আমল (১২০৬-১৫২৬) বাংলাদেশের ইতিহাসে এক বিশেষ যুগ হিসেবে চিহ্নিত, যেখানে রাজনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক পরিবর্তন ঘটে। এই সময়কালটি বাংলাদেশের স্থাপত্যের ক্ষেত্রে এক বিপ্লবী পরিবর্তন নিয়ে আসে। সুলতানি শাসকদের শাসনামলে বাংলার স্থাপত্যে এক নতুন দিশা জন্ম নেয়, যা পূর্ববর্তী মুঘল, গৌড়ীয় ও হিন্দু স্থাপত্য শৈলীর সংমিশ্রণে রূপ নেয়। সুলতানি আমলের স্থাপত্যে বাংলার বিকাশে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক রয়েছে যা এই বিশেষ সময়ের স্থাপত্য বৈশিষ্ট্যকে চিহ্নিত করে।

১. সুলতানি স্থাপত্যের প্রাথমিক পরিবর্তন: বাংলার সুলতানি আমল শুরু হওয়ার আগে, এই অঞ্চলে হিন্দু স্থাপত্যের প্রভাব ছিল। কিন্তু সুলতানি শাসকদের আগমনে আরব, তুর্কি ও পারস্য স্থাপত্যের প্রভাব বাংলার স্থাপত্যে দৃশ্যমান হয়। এর ফলে, বাংলার স্থাপত্য শৈলীতে ইসলামী প্রভাব সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। সুলতানি শাসকরা মসজিদ, মাদরাসা, মেহরাব, মিনার, গম্বুজ ও শিলালিপি নির্মাণে বিশেষ আগ্রহী ছিলেন। এই সময়ে গম্বুজ, শিলালিপি, ও খিলান কাঠামো তৈরি করা হতে থাকে, যা পূর্ববর্তী স্থাপত্যের থেকে নতুন এক বৈশিষ্ট্য নিয়ে আসে।

২. মসজিদ ও মাদরাসার নির্মাণ: সুলতানি আমলে মসজিদ নির্মাণের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। তৎকালীন শাসকরা ইসলামের প্রচার ও ধর্মীয় স্থাপনাগুলোর উন্নতির জন্য প্রচুর মসজিদ নির্মাণ করেন। বাংলার বেশ কিছু বিখ্যাত মসজিদ সুলতানি স্থাপত্যের উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেমন, বাগেরহাটের ষাটগম্বুজ মসজিদ এবং ঢাকার জাহাঙ্গীরনগরের বড় মসজিদ। এগুলির গম্বুজ, মিনার ও মার্বেল পাথরের ব্যবহার সুলতানি স্থাপত্যের একটি চিহ্ন।

এছাড়াও, মাদরাসার প্রতিষ্ঠা ও নির্মাণও সুলতানি স্থাপত্যের একটি বিশেষ দিক। মাদরাসা বা ইসলামিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো নির্মাণে গুরুত্ব দেওয়া হয়, যেগুলির স্থাপত্যে ইসলামী কারুকার্য এবং তুর্কি স্থাপত্যের প্রভাব স্পষ্ট।

৩. ফরিদপুর ও বাগেরহাটের স্থাপত্য: সুলতানি স্থাপত্যের এক বিশেষ কেন্দ্র ছিল বাগেরহাট এবং ফরিদপুর অঞ্চল। বাগেরহাটে তৈরি ষাটগম্বুজ মসজিদ, সমরেশ্বর মন্দির, ও অন্যান্য ধর্মীয় স্থাপত্য নির্মাণ বাংলার স্থাপত্যের ইতিহাসে এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত হিসেবে চিহ্নিত। এখানকার গম্বুজী ও খিলান কাঠামো, কাঠামোগত শক্তি এবং ইসলামী কারুকার্য বাংলার স্থাপত্যে এক নতুন মাত্রা যোগ করে।

৪. মিনার ও গম্বুজের ব্যবহার: সুলতানি আমলে মিনার ও গম্বুজের ব্যবহার নতুনত্বের পরিচায়ক হিসেবে দেখা যায়। পূর্ববর্তী যুগে এই ধরনের কাঠামো দেখা না গেলেও, সুলতানি আমলে গম্বুজ নির্মাণ একটি বড় অগ্রগতি ছিল। এসব গম্বুজের ভেতরে উঁচু মিনার তৈরি করা হতো, যা স্থাপত্যের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করত। বিশেষত, ষাটগম্বুজ মসজিদে দেখা যায় যে, গম্বুজগুলির মধ্যে আকাশের দিকে তাকিয়ে এক অদ্ভুত দৃশ্য তৈরি করা হয়েছে।

৫. স্থাপত্যের সজ্জা ও কারুকাজ: সুলতানি স্থাপত্যের এক বিশেষ দিক ছিল সজ্জা এবং কারুকাজ। মিনার, গম্বুজ এবং মসজিদের দেয়ালে ইসলামী শিলালিপি, কুরআনের আয়াত ও নানা ধরনের জ্যামিতিক নকশা তৈরি করা হতো। এছাড়া, পাথরের খোদাই, নকশা আঁকা এবং রঙিন শিলালিপি দিয়ে স্থাপত্যকে অত্যন্ত শোভিত করা হত। বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলের মসজিদ এবং ধর্মীয় স্থাপনাগুলোতে এই ধরনের সজ্জা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

৬. তুর্কি ও মোগল স্থাপত্যের প্রভাব: সুলতানি আমলের স্থাপত্যে তুর্কি এবং মোগল স্থাপত্যের প্রভাবও দেখা যায়। মোগল আমলে স্থাপত্যে গম্বুজের ব্যবহার এবং সজ্জার মধ্যে নতুনত্ব আসে। যদিও সুলতানি আমলে অনেক মসজিদ নির্মিত হয়, মোগল আমলে এসব মসজিদে নতুন রূপ পায় এবং স্থাপত্যের আঙ্গিকও পরিবর্তিত হয়। তবে সুলতানি আমলেই প্রথম এই ধরনের ধর্মীয় স্থাপনাগুলির যাত্রা শুরু হয়।

৭. বাংলার বিকাশে সুলতানি স্থাপত্যের অবদান: সুলতানি স্থাপত্য বাংলার সাংস্কৃতিক বিকাশে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এটি শুধু ধর্মীয় স্থাপত্যের ক্ষেত্রে নয়, শহর পরিকল্পনার ক্ষেত্রে সহায়িকা হিসেবে কাজ করেছে। সুলতানি আমলের স্থাপত্যের মাধ্যমে বাংলায় ইসলামী সংস্কৃতির অগ্রযাত্রা শুরু হয় এবং এটি ভবিষ্যতে মোগল আমলের স্থাপত্যেও প্রভাব বিস্তার করে।

উপসংহার: সুলতানি আমলে বাংলার স্থাপত্যে যে বিকাশ ঘটেছিল, তা আজও আমাদের চোখে পড়ে। মসজিদ, মাদরাসা, গম্বুজ, মিনার এবং খিলান কাঠামো আধুনিক বাংলার স্থাপত্যে এক নতুন পরিচয় দিয়েছে। সুলতানি স্থাপত্যের এই বৈশিষ্ট্যগুলির সাথে হিন্দু এবং মোগল স্থাপত্যের মিলিত প্রভাব বাংলার স্থাপত্য ঐতিহ্যকে এক বিশেষ গুণে পরিণত করেছে।

****3) প্রশ্ন. গান্ধার শিল্প সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা কর। ৫

গান্ধার শিল্প প্রাচীন ভারতীয় শিল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা, যা বর্তমান পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের কিছু অংশে প্রচলিত ছিল। এটি খ্রিস্টপূর্ব ৫ম থেকে ৭ম শতকের মধ্যে বিশেষভাবে বিকশিত হয়েছিল এবং এটির প্রধান বৈশিষ্ট্য হল গ্রিক, পার্সিয়ান এবং ভারতীয় সাংস্কৃতিক ধারার মিশ্রণ। গান্ধার শিল্প বিশেষভাবে তার বৈশিষ্টপূর্ণ মূর্তি শিল্পের জন্য পরিচিত, যা মূলত বৌদ্ধধর্মের সাথে সম্পর্কিত।

১. গান্ধার শিল্পের প্রভাব: গান্ধার অঞ্চলে শিল্পের বিকাশের জন্য গ্রিক উপাদান বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। গ্রিক রাজা আলেকজান্ডার দ্য গ্রেটের ভারত আক্রমণের পর, ভারতীয় সংস্কৃতির সঙ্গে গ্রিক শিল্পের মিশ্রণ ঘটে। এর ফলে গান্ধার শিল্পে প্রাথমিকভাবে গ্রিক মূর্তি শিল্পের প্রভাব পড়েছিল, বিশেষত মানুষের অবয়ব এবং তাদের চিত্রণ শৈলীতে। গান্ধার শিল্পীরা বৌদ্ধ ধর্মের চিত্রকল্পনাগুলিকে গ্রিক শিল্পের তাত্ত্বিকতা ও শৈলীর সঙ্গে সংমিলিত করেছিল।

২. বৌদ্ধ মূর্তি শিল্প: গান্ধার শিল্পে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক ছিল বৌদ্ধ মূর্তি তৈরির ক্ষেত্রে গ্রিক শৈলীর প্রভাব। এই মূর্তিগুলি অত্যন্ত নিখুঁত এবং জীবন্ত মনে হয়, যা ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের বৌদ্ধ মূর্তির তুলনায় অনেক বেশি বাস্তবসম্মত। বিশেষত, গান্ধার শিল্পীরা বৌদ্ধ দেবতা যেমন গৌতম বুদ্ধের মূর্তি তৈরি করার সময় তার শারীরিক বৈশিষ্ট্যগুলো, যেমন মুখাবয়ব, শরীরের গঠন ও পোশাক ইত্যাদি খুব সূক্ষ্মভাবে তুলে ধরেছেন। এই মূর্তিগুলি সাধারণত পাথর বা স্যান্ডস্টোনে খোদিত করা হত এবং এর সাথে অতি সূক্ষ্ম খোদাইয়ের কাজও দেখা যায়।

৩. রোমান ও পার্সিয়ান প্রভাব: গান্ধার শিল্পের মধ্যে রোমান এবং পার্সিয়ান শিল্পের প্রভাবও ছিল স্পষ্ট। রোমান মুদ্রায় দেখা যাওয়া কিছু চিত্রকর্মের ধরণ গান্ধার শিল্পে পুনরাবৃত্তি পাওয়া যায়। পার্সিয়ান শাসকরা গান্ধার অঞ্চলে শাসন কার্য পরিচালনা করার সময় তাদের নিজস্ব শৈলীও এতে যুক্ত করেছিল। এর ফলে গান্ধার শিল্পে সেমেটিক আর্টের উপাদানও দেখা যায়, বিশেষ করে প্যাটার্ন, মুখাবয়ব ও অলঙ্করণে।

৪. বৌদ্ধ শিল্পকর্মের চরিত্র: গান্ধার শিল্পে বৌদ্ধ ধর্মের নানা দিক উঠে এসেছে। এখানে বুদ্ধের জীবনের ঘটনাগুলির কাহিনী, যেমন বুদ্ধের জন্ম, তৎপরবর্তী শিক্ষা, সাধনা এবং পরিনির্বাণের চিত্রকল্প বিশেষভাবে গুরুত্ব পেয়েছে। এছাড়াও, গান্ধার শিল্পকর্মে বুদ্ধের চেহারা সাধারণত প্রাপ্তবয়স্ক ও মহিমান্বিত হয়ে থাকে, যেখানে বুদ্ধের মাথায় উজ্জ্বল মুকুট এবং দেহে বিলাসী পোশাক দেখা যায়।

৫. শিল্পের বিবর্তন: গান্ধার শিল্পের শৈলী ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হয়েছে। শুরুর দিকে, এটি গ্রিক এবং পার্সিয়ান প্রভাবিত ছিল, কিন্তু পরবর্তীতে এটি ভারতীয় ধর্মীয় শিল্পের সাথে আরও বেশি সমন্বিত হতে শুরু করে। গান্ধার শিল্পের বিকাশ ঘটেছে বৌদ্ধ মন্দির, স্তূপ, মূর্তি এবং চিত্রকর্মের মাধ্যমে। তবে, মুসলিম শাসকদের আগমনের পর, গান্ধার শিল্পের ধারা একসময় ধীরে ধীরে অবহেলিত হতে শুরু করে।

৬. গান্ধার শিল্পের ঐতিহাসিক গুরুত্ব: গান্ধার শিল্প কেবলমাত্র শিল্পশাস্ত্রের জন্যই নয়, বরং ইতিহাস এবং সাংস্কৃতিক মেলবন্ধনের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি ভারতীয় এবং বিদেশী সংস্কৃতির সংমিশ্রণ এবং একে অপরের সাথে সাংস্কৃতিক যোগাযোগের সোপান হিসেবে কাজ করেছে। গান্ধার শিল্পের মাধ্যমে ইতিহাসবিদরা গ্রিক, পার্সিয়ান এবং ভারতীয় ঐতিহ্যের মিশ্রণ দেখতে পান যা তাদের আরও গভীরভাবে ইতিহাসের বিভিন্ন দিক বিশ্লেষণ করতে সহায়তা করে।

উপসংহার: গান্ধার শিল্প একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহ্য যা প্রাচীন ভারতীয় শিল্পের বিকাশের পথে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছিল। এটি শুধু ভারতীয় শিল্পকলা ও সংস্কৃতির জন্যই নয়, বরং বিশ্বের অন্যান্য সংস্কৃতির সাথে সম্পর্ক স্থাপনেও এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। গ্রিক, পার্সিয়ান ও ভারতীয় শিল্পের মিশ্রণ গান্ধার শিল্পকে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য করে তোলে, এবং এটি আজও ইতিহাসবিদদের গবেষণার জন্য এক অনুপ্রেরণা।

UNIT-3

****3) প্রশ্ন. পল্লব যুগের শিল্পকলার উপর একটি সংক্ষিপ্ত টীকা (১০)

পল্লব যুগ (৩য় থেকে ৯ম শতাব্দী) দক্ষিণ ভারতের ইতিহাসে একটি স্বর্ণযুগ হিসেবে পরিচিত। এই সময়কালে, রাজনীতি, ধর্ম এবং সংস্কৃতির পাশাপাশি শিল্পকলার অসাধারণ বিকাশ ঘটে। পল্লব রাজারা মৈসুর, অন্ধ্রপ্রদেশ এবং তামিলনাড়ু অঞ্চলে তাদের শাসন প্রতিষ্ঠা করেন এবং এক অভিনব স্থাপত্য ও ভাস্কর্যশৈলীর সূচনা করেন।

পল্লব স্থাপত্যশিল্পের বৈশিষ্ট্য:

পল্লব স্থাপত্যশিল্পে প্রধানত মন্দির নির্মাণ ও গুহামন্দির নির্মাণের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। স্থাপত্যে শৈল্পিক দক্ষতার পাশাপাশি ধর্মীয় চেতনার প্রতিফলন দেখা যায়। পল্লব স্থাপত্যকে তিনটি প্রধান পর্যায়ে ভাগ করা যায়:

1. মহেন্দ্রগিরি বা রক-কাট পর্যায়: এই পর্যায়ে মন্দির নির্মাণের জন্য পাহাড় কেটে গুহামন্দির তৈরি করা হয়। মহেন্দ্রবর্মণ (৬০০-৬৩০ খ্রিস্টাব্দ) এই শিল্পকলার বিকাশে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ‘মহেন্দ্রগিরি গুহামন্দির’ এই সময়ের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উদাহরণ। গুহামন্দিরগুলোতে খোদাই করা স্তম্ভ ও অলঙ্করণ শিল্প পল্লবদের সৃজনশীলতার সাক্ষর বহন করে।

2. নবরথ বা মনোলিথিক পর্যায়:
পঞ্চ রথ (যা মহাবলীপুরম বা মামল্লপুরমে অবস্থিত) পল্লব স্থাপত্যের এই পর্যায়ের শ্রেষ্ঠ উদাহরণ। একক পাথর থেকে খোদাই করে তৈরি করা এই রথগুলো বিভিন্ন হিন্দু দেবদেবীর উদ্দেশ্যে উৎসর্গীকৃত। প্রতিটি রথ ভিন্ন ভিন্ন আকার ও নকশায় নির্মিত, যা পল্লবদের স্থাপত্যশৈলীর বহুমুখিতা প্রমাণ করে।

3. মন্দির নির্মাণের নাগর শৈলী: পল্লব রাজা নরসিংহবর্মণ ও রাজসিমা এই পর্যায়ে মন্দির নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। শোর মন্দির (মহাবলীপুরমে অবস্থিত) এবং কৈলাসনাথ মন্দির (কাঞ্চিপুরমে অবস্থিত) এই সময়ের বিখ্যাত মন্দির। মন্দিরগুলোর স্তম্ভ, গর্ভগৃহ ও অলঙ্করণ শৈলীতে সূক্ষ্মতার নিদর্শন রয়েছে।

পল্লব ভাস্কর্যশিল্পের বৈশিষ্ট্য:

পল্লব ভাস্কর্যশিল্প মূলত ধর্মীয় প্রেক্ষাপটে বিকাশ লাভ করে। মন্দিরের দেয়াল, স্তম্ভ এবং গুহার অভ্যন্তরীণ অংশে খোদাই করা ভাস্কর্যগুলো তাদের অসাধারণ শৈল্পিক দক্ষতার প্রতিফলন।

1. দেব-দেবীর ভাস্কর্য: শিব, বিষ্ণু, দুর্গা এবং অন্যান্য হিন্দু দেবদেবীর মূর্তি খোদাই করা হয়েছিল। প্রতিটি মূর্তিতে সূক্ষ্মতা ও প্রাণবন্ত ভাব ফুটে ওঠে।

2. মহাবলীপুরমের ভাস্কর্য:
মহাবলীপুরমের ‘অর্জুনের তপস্যা’ বা ‘গঙ্গার অবতরণ’ নামক ভাস্কর্য পল্লব ভাস্কর্যশিল্পের শ্রেষ্ঠ উদাহরণ। বিশাল প্রস্তরফলকে খোদাই করা এই ভাস্কর্যগুলোর মধ্যে দৈনন্দিন জীবনের চিত্র এবং পৌরাণিক কাহিনির মিশ্রণ লক্ষ্য করা যায়।

3. গজলক্ষ্মী ও অন্যান্য অলংকরণ:
মন্দির ও গুহার অলংকরণে গজলক্ষ্মীর চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। পশুপাখি, ফুল ও লতাপাতার অলঙ্করণও পল্লব শিল্পকলার নান্দনিক সৌন্দর্যকে বৃদ্ধি করেছে।

পল্লব চিত্রকলার বৈশিষ্ট্য:

পল্লব যুগে চিত্রকলাও ব্যাপক উন্নতি লাভ করে। মন্দির ও গুহাগুলোর অভ্যন্তরে আঁকা চিত্রগুলোতে পৌরাণিক কাহিনির দৃশ্যাবলী এবং ধর্মীয় চেতনার প্রতিফলন দেখা যায়। পল্লব চিত্রকলা তাদের রঙের সূক্ষ্ম ব্যবহার এবং জীবনের নিখুঁত চিত্রায়ণের জন্য পরিচিত।

পল্লব শিল্পকলার ধর্মীয় ও সামাজিক গুরুত্ব:

পল্লব যুগের শিল্পকলা শুধুমাত্র ধর্মীয় কার্যকলাপেই সীমাবদ্ধ ছিল না, এটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনের প্রতিফলনও ছিল। এই শিল্পকলা:
• ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে কাজ করত।
• স্থানীয় জনগণের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং ধর্মীয় বিশ্বাসের বিকাশ
ঘটাত।
• পর্যটকদের আকর্ষণ করত এবং রাজ্যের অর্থনীতিতে অবদান রাখত।

উপসংহার:

পল্লব যুগের শিল্পকলা তাদের সময়ের শাসন, ধর্ম এবং সংস্কৃতির প্রতিচ্ছবি। পল্লব রাজারা যে স্থাপত্য, ভাস্কর্য ও চিত্রকলার উত্তরাধিকার রেখে গেছেন, তা শুধু ভারতের নয়, সমগ্র বিশ্বের স্থাপত্য ইতিহাসে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। পল্লব শিল্পকলা তাদের শৈল্পিক দক্ষতা, ধর্মীয় চেতনা এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের এক অমূল্য সম্পদ।

HISTORY Major Short Questions Answers

HISTORY Major SAQ Questions Answers

Leave a Comment