crossorigin="anonymous">     crossorigin="anonymous"> B.A 1st Semester Bengali Minor Long Question Answer Suggestion | Kalyani University 2025

B.A 1st Semester Bengali Minor Long Question Answer Suggestion | Kalyani University 2025

University of Kalyani Suggestion

প্রাচীন-মধ্য বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস ও ভাষাতত্ত্ব:

Kalyani University B.A 1st Semester Bengali Minor Long Question Answers Suggestion 2025

My Phone Number- 7364983019

• সাজেশন পিডিএফ পেজের পেজ সংখ্যা 55 টি।
• নিরক্ষরেখে বলতে পারি এই সাজেশনের বাইরে কোন প্রশ্ন উত্তর আসবে না।
• ১০০% তোমরা কমন পাবে।
• এই সাজেশনে প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর সিলেবাস অনুযায়ী এবং ইউনিট অনুযায়ী সাজানো রয়েছে ।
• তোমরা চাইলে খুব সহজে BUY করতে পারো।
• THANK YOU.

এখানে অল্প কিছু প্রশ্নোত্তর আপলোড করা হয়েছে যদি তোমার মনে হয় সাজেশনটি BUY করতে পারো ।

• ১ মার্কের ৮টি প্রশ্ন থাকবে, যেখান থেকে ৫টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।
• ৫ মার্কের ৪টি প্রশ্ন থাকবে, যেখান থেকে ২টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।
• ১০ মার্কের ৪টি প্রশ্ন থাকবে, যেখান থেকে ২টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।

এখানে প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর সিলেবাস অনুযায়ী সাজানো আছে

গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তর:

পর্ব-১: ----চর্যাপদ----

*****1) প্রশ্ন. চর্যাপদের ঐতিহাসিক গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা কর। ৫

ভূমিকা: চর্যাপদ বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন। এটি একাদশ থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যে রচিত বৌদ্ধ সাধকদের রচনা। চর্যাপদের মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যের সূচনা হয়। এটি শুধুমাত্র সাহিত্যের একটি প্রাচীন নিদর্শন নয়, বরং তা মধ্যযুগীয় সমাজ, ধর্ম এবং ভাষার বিবর্তনের ঐতিহাসিক সাক্ষ্য বহন করে। চর্যাপদের মাধ্যমে আমরা তৎকালীন সমাজব্যবস্থা, সংস্কৃতি এবং বৌদ্ধ ধর্মের তত্ত্ব-তথ্যের সাথে পরিচিত হই।

১. ভাষার ঐতিহাসিক মূল্য: চর্যাপদ বাংলা ভাষার আদি নিদর্শন হিসেবে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এতে যে ভাষা ব্যবহৃত হয়েছে তা সংস্কৃত, প্রাকৃত, এবং অপভ্রংশ ভাষার মিশ্রণ। এই রচনাগুলিতে মধ্যযুগীয় বাংলা ভাষার আদি রূপ পাওয়া যায়, যা বাংলা ভাষার বিকাশের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। চর্যাপদ থেকে প্রমাণিত হয় যে বাংলা ভাষা একসময় ধর্মীয় এবং সাহিত্যিক রচনার মাধ্যম ছিল।

২. সাহিত্যের আদি নিদর্শন: চর্যাপদ বাংলা কাব্যের সূচনা চিহ্নিত করে। এতে ধর্মীয় দর্শন, সাধনপদ্ধতি এবং গূঢ় তাত্ত্বিক বিষয় ব্যাখ্যা করা হয়েছে। চর্যাগুলি মুলতঃ দোহা আকারে রচিত, যা বৌদ্ধ সাধকদের সহজিয়া ধর্মীয় ভাবনা প্রকাশ করেছে। চর্যাপদের সহজ-সরল ভঙ্গিমা ও গূঢ় রস প্রকাশের ক্ষমতা বাংলা সাহিত্যের ভবিষ্যৎ বিকাশের ভিত্তি স্থাপন করেছে।

৩. বৌদ্ধ ধর্ম ও তত্ত্বের চিত্র: চর্যাপদ বৌদ্ধ ধর্মের সহজিয়া মতবাদের ধারক ও বাহক। এই মতবাদে দেহকে সাধনার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে গণ্য করা হয়। চর্যাপদে সাধনার বিভিন্ন স্তর এবং মানবজীবনের সত্যকে উপলব্ধি করার পদ্ধতি বর্ণনা করা হয়েছে। এই কাব্যগুলি বৌদ্ধ ধর্মের গূঢ় দিকগুলি যেমন তন্ত্র, মন্ত্র, এবং যোগপদ্ধতি তুলে ধরে।

৪. তৎকালীন সমাজব্যবস্থার প্রতিফলন: চর্যাপদ থেকে মধ্যযুগীয় বাংলার সমাজের একটি স্পষ্ট চিত্র পাওয়া যায়। এতে কৃষক, শ্রমিক, গৃহস্থ, তান্ত্রিক, সাধু প্রভৃতি শ্রেণির মানুষের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সমাজের বৈষম্য, দারিদ্র্য এবং ধর্মীয় সংকীর্ণতার ছবি চর্যাপদের কাব্যে প্রতিফলিত হয়েছে। এটি সমাজের নিত্যদিনের জীবনযাত্রা এবং সাধনজীবনের সংমিশ্রণ তুলে ধরে।

৫. সংগীত ও নৃত্যকলার উন্নয়ন: চর্যাপদ শুধুমাত্র সাহিত্য নয়, সংগীতের ইতিহাসেও গুরুত্বপূর্ণ। চর্যাগুলি গান আকারে পরিবেশিত হত। এর প্রতিটি চর্যা নির্দিষ্ট রাগে রচিত। এতে সংগীতশাস্ত্রের তত্ত্ব ও অনুশীলনের প্রমাণ মেলে। এই গীতিকবিতাগুলি বাংলা সংগীতের প্রাচীনতম নিদর্শন।

৬. ঐতিহাসিক সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধার: চর্যাপদ সংরক্ষণের মাধ্যমে বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রাচীন ঐতিহ্য রক্ষা করা হয়েছে। ১৯০৭ সালে হরপ্রসাদ শাস্ত্রী নেপালের রাজদরবারের পুঁথি সংগ্রহ থেকে চর্যাপদ আবিষ্কার করেন। এটি বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করেছে এবং প্রমাণ করেছে যে বাংলা ভাষার শিকড় বহু গভীরে।

৭. বহুমুখী প্রভাব: চর্যাপদ বাঙালি সংস্কৃতির বহুমুখী বিকাশে অবদান রেখেছে। এটি ধর্ম, দর্শন, ভাষা এবং সাহিত্যের মেলবন্ধন ঘটিয়েছে। চর্যাপদে ব্যবহৃত প্রতীক, চিত্রকল্প এবং ভাষার গঠন মধ্যযুগীয় সাহিত্য এবং তত্ত্বে গভীর প্রভাব ফেলে।

উপসংহার: চর্যাপদ বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনতম গ্রন্থ এবং ঐতিহাসিক দলিল। এটি ভাষা, ধর্ম, সমাজ এবং সাহিত্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে এক অমূল্য সম্পদ। বাংলা ভাষার বিকাশের ধারায় চর্যাপদের অবদান অতুলনীয়। এটি আমাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির গভীরে পৌঁছানোর এক উজ্জ্বল সেতু। তাই

চর্যাপদকে বাংলা সাহিত্যের প্রাথমিক ইতিহাসের প্রাণ বলা যায়। সংক্ষেপে বলা যায়, চর্যাপদ কেবলমাত্র একটি প্রাচীন সাহিত্যিক সৃষ্টি নয়, এটি আমাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অতীতের সাথে সংযোগ স্থাপন করে আমাদের ভাষা ও সাহিত্যের শিকড় চেনায়।

*****2) প্রশ্ন. কে, কবে, কোথা থেকে চর্যাপদের আবিষ্কার করেন? চর্যাপদে সমাজ জীবনের যে ছবি ফুটে উঠেছে তা আলোচনা কর। (৫/১০)

চর্যাপদের আবিষ্কার: চর্যাপদ বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন এবং এটি ভারতীয় সাহিত্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি রচনা। চর্যাপদ আবিষ্কার করেন ড. হরপ্রসাদ শাস্ত্রী। তিনি ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে নেপালের রাজদরবারের গ্রন্থাগারে ‘চর্যাচর্যবিনিশ্চয়’ নামক একটি পুঁথি আবিষ্কার করেন। পুঁথিটি তিব্বতীয় বৌদ্ধধর্মের বিভিন্ন বিষয় সংকলিত ছিল। এর মধ্যে চর্যাপদ ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

ড. হরপ্রসাদ শাস্ত্রী এই পুঁথিটি নেপালের রাজদরবার থেকে সংগ্রহ করেন। পরে ১৯১৬ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এটি প্রকাশিত হয়। এই পুঁথিতে মোট ৫০টি পদ সংকলিত ছিল, যার মধ্যে ২৪ জন বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্যের রচিত পদসমূহ রয়েছে।

চর্যাপদের সমাজ জীবন: চর্যাপদ শুধুমাত্র আধ্যাত্মিক এবং তান্ত্রিক দর্শনের নিদর্শন নয়; এটি তৎকালীন সমাজের এক অনন্য দলিল। এই কাব্যগ্রন্থে তৎকালীন সমাজব্যবস্থা, মানুষের জীবনযাত্রা, পেশা, ধর্মীয় আচার-আচরণ এবং সংস্কৃতি ফুটে উঠেছে।

১. পেশাগত জীবনের প্রতিফলন: চর্যাপদে তৎকালীন সমাজের বিভিন্ন পেশার বর্ণনা পাওয়া যায়। কৃষক, জেলে, তাঁতী, ব্যবসায়ী, ইত্যাদি বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষের কথা এখানে উল্লেখিত হয়েছে। যেমন, চর্যাপদের একটি পদে বলা হয়েছে, "মাছি নাহি জানাই জাল পাইলে রণ।" এটি থেকে বোঝা যায়, মাছ ধরা তৎকালীন সমাজে একটি গুরুত্বপূর্ণ পেশা ছিল।

২. ধর্মীয় জীবন: চর্যাপদ তিব্বতীয় বৌদ্ধধর্মের তান্ত্রিক ধারার একটি নিদর্শন। চর্যাপদে বিভিন্ন তান্ত্রিক আচার-আচরণ এবং ধর্মীয় মতবাদ ফুটে উঠেছে। এখানে সিদ্ধাচার্যরা আধ্যাত্মিক মুক্তির কথা বলেছেন, যা তাদের চিন্তাধারার একটি অংশ। পাশাপাশি, বৌদ্ধ দর্শনের সহজ সরল প্রকাশ ঘটেছে।

৩. নারীর অবস্থা: চর্যাপদে নারীর অবস্থার উল্লেখ রয়েছে। নারীদেরকে কখনও দুঃখিনী, কখনও চঞ্চলা হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে। তবে নারীরা সমাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতেন, যা কিছু পদের মাধ্যমে প্রকাশ পায়।

৪. সমাজে দ্বন্দ্ব এবং বৈষম্য: চর্যাপদে সমাজের ভিন্নধর্মী দ্বন্দ্বের কথা উল্লেখিত হয়েছে। সমাজে ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে বৈষম্য ছিল। সমাজে শোষণ এবং দুর্বলদের প্রতি অবিচারের বিষয়গুলো এখানে কাব্যিক রূপে প্রকাশ পেয়েছে।

৫. প্রকৃতি এবং দৈনন্দিন জীবন: চর্যাপদে তৎকালীন প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং মানুষের দৈনন্দিন জীবনের কথা বিস্তারিতভাবে বর্ণিত হয়েছে। নদী, খাল, মাঠ, গ্রাম এবং জনজীবনের ছবি এখানে তুলে ধরা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, চর্যাপদের একটি পদে বলা হয়েছে, "সন্ধ্যায় গৃহে ফিরিয়া জ্বালাইয়া বাতি।" এতে বোঝা যায়, সন্ধ্যায় মানুষ আপন ঘরে ফিরে এসে দিনশেষের কর্মসমাপ্তি উদযাপন করত।

৬. ভাষা এবং সাহিত্যিক দিক: চর্যাপদ বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শন হওয়ায় এর ভাষায় রয়েছে প্রাচীন বাংলা, অপভ্রংশ, এবং সংস্কৃত ভাষার মিশ্রণ। এতে বোঝা যায় যে, তৎকালীন সমাজে ভাষার একটি বিবর্তন চলছিল। তদুপরি, চর্যাপদে ব্যবহৃত প্রতীক এবং রূপকের মাধ্যমে সমাজের গভীর ভাবধারা প্রকাশিত হয়েছে।

চর্যাপদের মূল্যায়ন: চর্যাপদ শুধুমাত্র বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শন নয়, এটি তৎকালীন সমাজব্যবস্থার প্রতিফলন। এর মাধ্যমে তৎকালীন মানুষের জীবনযাত্রা, ধর্মীয় চর্চা এবং পেশাগত জীবনের একটি সুস্পষ্ট চিত্র পাওয়া যায়। চর্যাপদ বাংলা ভাষা এবং সাহিত্যের শেকড় বুঝতে একটি অনন্য দলিল।

সর্বশেষে, চর্যাপদের মাধ্যমেই বাংলা সাহিত্যের যাত্রা শুরু হয়েছিল, যা আজকের বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে। এটি একটি ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে আমাদের সমাজ, সংস্কৃতি এবং ইতিহাসের গভীরতর অনুসন্ধানে অনুপ্রাণিত করে।

পর্ব-২: ----অনুবাদ সাহিত্য ও চৈতন্য জীবনীসাহিত্য----

*****3) প্রশ্ন. বাংলা ভাষায় রামায়ণের প্রথম অনুবাদক কে? তার কাব্যের মৌলিকতার বা অভিনবত্বের দিকগুলি বিচার করো।১০

বাংলা সাহিত্য ইতিহাসে রামায়ণ অনুবাদের এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান রয়েছে। মধ্যযুগে বাংলা ভাষায় রামায়ণের প্রথম অনুবাদ করেন কৃত্তিবাস ওঝা। তার অনূদিত রামায়ণ "কৃত্তিবাসী রামায়ণ" নামে পরিচিত। এটি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কাব্য এবং যুগ যুগ ধরে বাঙালি সমাজে জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

কৃত্তিবাস ওঝা: বাংলা রামায়ণের প্রথম অনুবাদক:

কৃত্তিবাস ওঝা পঞ্চদশ শতকের কবি ছিলেন। তার জন্ম বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলায়, ১৪০১ সালে। তিনি একজন ব্রাহ্মণ পণ্ডিত ছিলেন এবং শাস্ত্রবিদ্যায় পারদর্শী ছিলেন। কথিত আছে, তিনি একদা স্বপ্নাদেশ পেয়ে মহর্ষি বাল্মীকির সংস্কৃত রামায়ণকে বাংলায় অনুবাদ করার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তার এই অনুবাদ সাধনা বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের এক অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে আছে।

কৃত্তিবাসী রামায়ণের মৌলিকতা ও অভিনবত্ব: কৃত্তিবাসী রামায়ণ শুধুমাত্র বাল্মীকির রামায়ণের সাধারণ অনুবাদ নয়, এটি স্বকীয়তার দৃষ্টিকোণ থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। বাংলা ভাষায় এটি এক নতুন আঙ্গিক ও ভাবধারার সংযোজন ঘটিয়েছে। এর মৌলিকতা ও অভিনবত্ব বিভিন্ন দিক থেকে বিচার করা যায়—

১. সহজ ও সরল ভাষার ব্যবহার: কৃত্তিবাস তার কাব্যে এমন এক ভাষা ব্যবহার করেছেন যা সহজবোধ্য ও মনোগ্রাহী। সংস্কৃত রামায়ণ ছিল উচ্চকোটির পণ্ডিতদের জন্য, কিন্তু কৃত্তিবাস তার অনুবাদকে সাধারণ মানুষের উপযোগী করে তুলেছিলেন।

২. বাঙালি সমাজ ও সংস্কৃতির প্রভাব: বাল্মীকির সংস্কৃত রামায়ণ অনেকটাই আর্য সংস্কৃতির প্রতিফলন ঘটায়। কিন্তু কৃত্তিবাসী রামায়ণে বাঙালি সমাজের প্রতিচ্ছবি স্পষ্ট। এখানে বাংলার গ্রাম্য জীবন, সামাজিক রীতিনীতি, লোকবিশ্বাস ইত্যাদির প্রভাব সুস্পষ্টভাবে দেখা যায়।

৩. কাব্যিক অলঙ্করণ ও ছন্দের নৈপুণ্য: কৃত্তিবাস তার রামায়ণে প্রচুর অলঙ্কার ও ছন্দ ব্যবহার করেছেন। তার রচনা ছিল রীতিমতো ছন্দোবদ্ধ এবং ছড়ার মতো সহজ-সরল। তিনি অনুপ্রাস, উপমা, উৎপ্রেক্ষা প্রভৃতি অলঙ্কার কৌশলে ব্যবহার করেছেন, যা তার কাব্যকে আকর্ষণীয় করে তুলেছে।

৪. চরিত্রগুলোর নতুন রূপায়ণ: কৃত্তিবাসী রামায়ণে অনেক চরিত্রের চিত্রায়ণ নতুনভাবে করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, এখানে লক্ষ্মণকে তুলনামূলকভাবে আরও আবেগপ্রবণ ও রাগী হিসেবে দেখানো হয়েছে। রাবণের চরিত্রেও কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে, যাতে তার শক্তিশালী রূপ ফুটে ওঠে।

৫. ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা: কৃত্তিবাসী রামায়ণে ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষার গুরুত্ব অনেক বেশি। এটি শুধু একটি পৌরাণিক কাহিনি নয়, এটি নৈতিক ও আধ্যাত্মিক শিক্ষার বাহক। রামচন্দ্রের চরিত্রের মাধ্যমে আদর্শ পুরুষের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হয়েছে, যা বাঙালি সমাজে সুদীর্ঘকাল ধরে প্রচলিত।

৬. জনপ্রিয়তা ও লোকগাথা হিসেবে প্রতিষ্ঠা: কৃত্তিবাসী রামায়ণ শুধুমাত্র একটি সাহিত্যিক গ্রন্থ নয়, এটি বাংলার লোকসংস্কৃতির অঙ্গ হয়ে উঠেছে। এর কাহিনি সাধারণ মানুষের মুখে মুখে প্রচলিত হয়েছে এবং কীর্তন, পালাগান ইত্যাদির মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

উপসংহার: কৃত্তিবাস ওঝার রামায়ণ শুধু একটি অনুবাদ নয়, এটি এক অনন্য সৃষ্টি যা বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সম্পদ। তার কাব্য মৌলিকত্ব ও অভিনবত্বের জন্য চিরকালীন হয়ে থাকবে। বাংলা ভাষার প্রথম রামায়ণ অনুবাদক হিসেবে কৃত্তিবাসের অবদান অসামান্য এবং তার রামায়ণ আজও বাঙালি সমাজে সমানভাবে জনপ্রিয়।

----পর্ব-৩: মঙ্গলকাব্য---

*****4) প্রশ্ন. "ভারতচন্দ্রের অন্নদামঙ্গল কাব্য রাজকণ্ঠের মণিমালার মত"- মন্তব্যটি কার সম্পর্কে করা হয়েছে? তার কাব্য সম্পর্কে উদ্ধৃত মন্তব্যটির যৌক্তিকতা বিচার করুন। ১+২+২+৫

উত্তর: এই মন্তব্যটি ভারতীয় কাব্যসাহিত্যের এক মহান কবি, ভারতচন্দ্র রায়-এর কাব্য অন্নদামঙ্গল সম্পর্কে করা হয়েছে। অন্নদামঙ্গল কাব্যটি ভারতচন্দ্রের শ্রেষ্ঠ রচনা, যা মূলত বাংলা সাহিত্যের একটি অন্যতম ঐতিহাসিক সাহিত্যকর্ম হিসেবে পরিচিত। এই মন্তব্যে অন্নদামঙ্গল কাব্যকে রাজকণ্ঠের মণিমালা কাব্যের মতো উচ্চারিত করা হয়েছে, যা মূলত কবির কাব্যশৈলী ও ভাষার মাধুর্যতার প্রশংসা করে।

১. অন্নদামঙ্গল কাব্য সম্পর্কে: ভারতচন্দ্রের অন্নদামঙ্গল কাব্যটি একটি পবিত্র মঙ্গলকাব্য, যা মূলত গ্রামীণ জীবনের প্রেক্ষাপটে লিখিত। এই কাব্যের মাধ্যমে তিনি মঙ্গল কাব্যের ঐতিহ্যকে নতুনভাবে তুলে ধরেছেন। কাব্যের মূল বিষয়বস্তু হলো কৃষক সম্প্রদায়ের দুঃখ-দুর্দশা ও তাদের আশার প্রতীক অন্নদা নামক দেবীর প্রতি তাঁদের শ্রদ্ধা। ভারতচন্দ্র এই কাব্যটি লেখার মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যে মঙ্গলকাব্যের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেন। তিনি মঙ্গল কাব্যকে গৌণ বিষয় থেকে মৌলিক চেতনায় উন্নীত করেন।

২. "রাজকণ্ঠের মণিমালা" রূপক: এখন, এই মন্তব্যটি অন্নদামঙ্গল কাব্যের বিষয়ের শৈলী ও কাঠামোর সাথে সম্পর্কিত। 'রাজকণ্ঠ' শব্দটি একজন রাজা বা শাসকের উচ্চকণ্ঠের রূপক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। এটির মাধ্যমে বলা হয়েছে, কাব্যের ভাষা ও শৈলী অনেকটা রাজকণ্ঠের মতো উজ্জ্বল ও মাধুর্যপূর্ণ। মণিমালা কাব্যটি তামিল সাহিত্যের একটি বিখ্যাত কাব্য, যা তার ভাষার পরিশীলিততা এবং উচ্চতর শৈলী দ্বারা চিহ্নিত। এটি কাব্যিক সৌন্দর্য ও ভাষার গভীরতার জন্য প্রশংসিত হয়েছে। অন্নদামঙ্গল কাব্যটি ঠিক তেমনি, উজ্জ্বল কাব্যিক ভাষার মাধ্যমে এক অনন্য রূপ পায়।

৩. উদ্ধৃত মন্তব্যটির যৌক্তিকতা: এই মন্তব্যটির যৌক্তিকতা প্রতিষ্ঠিত হয় ভারতচন্দ্রের কাব্যিক কৌশল ও ভাষাশৈলীর মধ্যে। অন্নদামঙ্গল কাব্যের ভাষায় স্নিগ্ধতা, ধীরতা এবং মাধুর্যতা পরিস্ফুটিত। কবি তাঁর কাব্যে মাধুর্যের প্রয়োগ করেছেন, যা একদিকে প্রাসঙ্গিক, অন্যদিকে সঠিক কাব্যিক রূপে উপস্থাপিত। ভারতের কাব্যিক ঐতিহ্য মেনে, ভারতচন্দ্র তাঁর কাব্যের মধ্যে মণিমালা কাব্যের মতো একটি উচ্চতর গতি এবং প্রাঞ্জলতা ধরতে সক্ষম হন।

৪. মন্তব্যটির বিশ্লেষণ: ভারতচন্দ্রের অন্নদামঙ্গল কাব্যটির ভাষায় যে রাজকণ্ঠের মণিমালা এর মতো একটি চিত্র আনা হয়েছে, তার মধ্যে বড় ধরনের যুক্তি রয়েছে। ভারতচন্দ্র কাব্য রচনা করেছেন অত্যন্ত মিষ্টি ও আকর্ষণীয় ভাষায়। তাঁর কবিতা একদিকে যেমন সমাজের বাস্তবতা ও সাধারণ মানুষের জীবনকে উপস্থাপন করে, তেমনি অন্যদিকে তাঁর ভাষার সৌন্দর্যও বিশেষভাবে প্রশংসনীয়। ভারতচন্দ্র তাঁর কাব্যরচনায় যে উচ্চতর শৈলী ও ভাষা ব্যবহার করেছেন, তা একেবারে রাজকণ্ঠের মতো উজ্জ্বল এবং শ্রুতিমধুর। এই তুলনাটি কেবলমাত্র কাব্যশৈলীর পরিপূর্ণতা ও গাম্ভীর্যকেই তুলে ধরে, যা বাংলা সাহিত্যকে নতুন দিগন্তে নিয়ে গিয়েছে।

মন্তব্যটি আরও যুক্তিসংগত হয়ে ওঠে কারণ অন্নদামঙ্গল কাব্যের ভাষা ও গঠন পরিস্কারভাবে মণিমালা কাব্যের মতো পরিশীলিত। ভারতচন্দ্র যেভাবে তাদের কাব্যশিল্পে সামাজিক এবং ধর্মীয় বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেছেন, তাতে কাব্যের সৌন্দর্য আরও প্রগাঢ় হয়েছে।

৫. উপসংহার: এখন, এই মন্তব্যটির যৌক্তিকতা বিচার করলে আমরা দেখতে পাই যে ভারতচন্দ্রের অন্নদামঙ্গল কাব্য ও তামিল সাহিত্যের মণিমালা কাব্যের মধ্যে ভাষাশৈলী এবং কাব্যিক সৌন্দর্যে এক ধরনের সামঞ্জস্য বিদ্যমান। ভারতচন্দ্র তাঁর কাব্যের মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যে একটি নতুন শৈলী প্রতিষ্ঠা করেছেন যা একই সঙ্গে দার্শনিক, সামাজিক এবং সাহিত্যিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে উপস্থাপন করেছে। অন্নদামঙ্গল কাব্যটি কবিতার মাধুর্য, ভাষার সৌন্দর্য এবং সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতার এক অনন্য উদাহরণ, যা তাকে "রাজকণ্ঠের মণিমালার মত" মন্তব্যটির অধিকারী করে তুলেছে।

পর্ব-৪ --বাংলা ভাষাতত্ত্ব—

*****5) প্রশ্ন. প্রাচীন বাংলা ভাষার ভাষাতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো। (৫/১০)

ভূমিকা: বাংলা ভাষার ইতিহাস দীর্ঘ এবং সমৃদ্ধ। ভাষাতাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলা ভাষার বিকাশ তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত: প্রাচীন বাংলা (৯৫০-১৩৫০ খ্রিস্টাব্দ), মধ্য বাংলা (১৩৫০-১৮০০ খ্রিস্টাব্দ) এবং আধুনিক বাংলা (১৮০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে বর্তমান পর্যন্ত)। প্রাচীন বাংলা ভাষা মূলত বিভিন্ন লিপিতে সংরক্ষিত হয়েছিল, যার মধ্যে চর্যাপদ অন্যতম। এই সময়ের ভাষার কিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য ছিল, যা বর্তমান বাংলার ভিত্তি স্থাপন করেছে।

প্রাচীন বাংলা ভাষার ভাষাতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য:

১. ধ্বনিতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য: প্রাচীন বাংলা ভাষায় ধ্বনিতাত্ত্বিক পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। এই ভাষায় সংস্কৃত ও প্রাকৃতের প্রভাব ছিল সুস্পষ্ট। কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো:

• নাসিক্য ধ্বনির ব্যবহার: প্রাচীন বাংলায় "ং" এবং "ঞ" ধ্বনির ব্যবহার বেশি পরিলক্ষিত হয়।
• সংস্কৃত শব্দের সরলীকরণ: যেমন, 'অগ্নি' → 'অগি', 'কৃষ্ণ' → 'কিসন'।
• দন্ত্য ও মৌখিক ধ্বনির পার্থক্য: 'স' এবং 'শ' শব্দের মাঝে স্পষ্ট পার্থক্য ছিল না।

২. রূপতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য: রূপতাত্ত্বিক দিক থেকে প্রাচীন বাংলা ভাষার কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য ছিল:

• কারক বিভক্তির সহজীকরণ: সংস্কৃত ও প্রাকৃতের তুলনায় প্রাচীন বাংলায় কারকের ব্যবহার সহজ হয়ে গিয়েছিল।
• পদ রূপান্তরের পরিবর্তন:
বিশেষ্যে বিভক্তি যোগে পরিবর্তন আসতো, যেমন 'পুত্র' → 'পুত্তা'।
• ক্রিয়াপদের রূপান্তর: প্রাচীন বাংলায় ক্রিয়াপদ পরিবর্তন লক্ষণীয় ছিল। যেমন, 'করিয়াছি' → 'করিলাম', 'আসিয়াছি' → 'এলাম'।

৩. বাক্যতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য: প্রাচীন বাংলার বাক্যগঠন আধুনিক বাংলা থেকে কিছুটা ভিন্ন ছিল।

• বাক্যগঠনের স্বতন্ত্রতা: প্রাচীন বাংলা ভাষায় বাক্যগঠন সরল ছিল এবং কখনো কখনো ক্রিয়াপদ বাক্যের শেষে না-ও থাকত।
• সমাসের বহুল ব্যবহার: দ্বন্দ্ব, তৎপুরুষ, বহুব্রীহি সমাসের প্রচলন বেশি ছিল।
• প্রত্যয় ব্যবহারে বৈচিত্র্য: প্রাচীন বাংলায় বিভিন্ন ধরনের প্রত্যয় ব্যবহৃত হতো, যেমন – 'কর' + 'ইয়া' → 'করিয়া'।

৪. শব্দতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য: প্রাচীন বাংলা ভাষায় অনেক সংস্কৃত, প্রাকৃত ও অপভ্রংশ শব্দের ব্যবহার লক্ষ করা যায়।

• সংস্কৃত শব্দের অপভ্রংশ: 'দীপ' → 'দিয়া', 'গম' → 'গেল'।
• লোকায়ত শব্দের সংযোজন: সাধারণ মানুষের ব্যবহৃত অনেক শব্দ যোগ হয়েছিল।

উপসংহার: প্রাচীন বাংলা ভাষা পরবর্তীতে মধ্য ও আধুনিক বাংলায় রূপান্তরিত হয়েছে। চর্যাপদের ভাষা এই পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন, যা বাংলা ভাষার প্রাচীন বৈশিষ্ট্য বোঝার অন্যতম উৎস। এই ভাষার বৈশিষ্ট্যগুলি বাংলা ভাষার বিবর্তনের মূল ভিত্তি স্থাপন করেছে এবং বাংলা ভাষাকে সমৃদ্ধ করেছে।

এখানে অল্প কিছু প্রশ্নোত্তর আপলোড করা হয়েছে যদি তোমার মনে হয় সাজেশনটি BUY করতে পারো ।

Leave a Comment