Kalyani University B.A 1st Semester Education Minor Long Question Answers Suggestion 2025
Kalyani University BA 1st Semester Education Minor Long QUESTIONS ANSWERS Suggestion PDF টি পেতে.. আপনি 39 টাকা পেমেন্ট করুন। পেমেন্টের পর এক সেকেন্ডের মধ্যে কাঙ্ক্ষিত সাজেশনটি পাবেন। ধন্যবাদ। টাকা টি পেমেন্ট করার জন্য নিচে PAY বাটনে ক্লিক করুন।
• সাজেশন পিডিএফ পেজের পেজ সংখ্যা 68 টি।
• এই সাজেশনের প্রশ্ন সংখ্যা 29 টি।
• নিরক্ষরেখে বলতে পারি এই সাজেশনেরর বাইরে কোন প্রশ্ন উত্তর আসবে না।
• ১০০% তোমরা কমন পাবে।
• এই সাজেশনের প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর সিলেবাস অনুযায়ী এবং ইউনিট অনুযায়ী সাজানো রয়েছে ।
• তোমরা চাইলে খুব সহজে BUY করতে পারো।
• THANK YOU.
এখানে অল্প কিছু প্রশ্নোত্তর আপলোড করা হয়েছে যদি তোমার মনে হয় সাজেশনটি BUY করতে পারো ।
এখানে প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর সিলেবাস অনুযায়ী সাজানো আছে
Course Code: EDU-MI-T-1
গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তর:
ইউনিট I: সমাজবিজ্ঞান এবং শিক্ষামূলক সমাজবিজ্ঞান
****1) প্রশ্ন. সমাজ বিজ্ঞান কাকে বলে? সমাজ বিজ্ঞানের ক্ষেত্র বা পরিধি সম্পর্কে আলোচনা কর। ৫/১০
সমাজ বিজ্ঞান কাকে বলে?
সমাজ বিজ্ঞান (Sociology) হল সমাজ, সামাজিক আচরণ, প্রতিষ্ঠান এবং মানব মিথস্ক্রিয়ার বৈজ্ঞানিক অধ্যয়ন। এটি মানব সমাজের গঠন, পরিবর্তন এবং বিকাশের মূল বিষয়গুলিকে বোঝার জন্য গবেষণা করে। সমাজ বিজ্ঞান বিভিন্ন পদ্ধতি ও তত্ত্বের মাধ্যমে মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক এবং সামাজিক কাঠামোগুলি বিশ্লেষণ করে। এটি একটি বহুমাত্রিক বিষয়, যা সমাজের বিভিন্ন দিক, যেমন সংস্কৃতি, ধর্ম, রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষা, পরিবার, সামাজিক শ্রেণি এবং আচরণগত নিদর্শন ইত্যাদি নিয়ে গবেষণা করে।
সমাজ বিজ্ঞান মূলত মানুষের জীবনযাত্রা, সমাজের পরিবর্তন এবং এর গঠন সম্পর্কে বিস্তারিত বিশ্লেষণ করে। ১৮৩৮ সালে অগাস্ট কোম্ত "Sociology" শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন। তিনি সমাজকে একটি বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করেন এবং সমাজ বিজ্ঞানের ভিত্তি স্থাপন করেন।
১. সামাজিক কাঠামো ও প্রতিষ্ঠান: সমাজ বিজ্ঞানের অন্যতম প্রধান ক্ষেত্র হল সামাজিক কাঠামো ও প্রতিষ্ঠান নিয়ে গবেষণা। প্রতিটি সমাজে কিছু নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠান থাকে, যেমন পরিবার, শিক্ষা ব্যবস্থা, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক সংগঠন এবং অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। এই প্রতিষ্ঠানগুলি কিভাবে গঠিত হয় এবং কীভাবে কাজ করে তা সমাজ বিজ্ঞানীরা বিশ্লেষণ করেন।
২. সামাজিক সম্পর্ক ও সামাজিক পরিবর্তন: সমাজ বিজ্ঞানীরা মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক এবং সামাজিক পরিবর্তনের কারণ ও প্রভাব বিশ্লেষণ করেন। সমাজের পরিবর্তন কিভাবে ঘটে এবং কীভাবে এটি মানুষের জীবনে প্রভাব ফেলে তা গবেষণার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আধুনিক প্রযুক্তির বিকাশ, নগরায়ণ, বিশ্বায়ন, এবং সংস্কৃতির পরিবর্তন সামাজিক পরিবর্তনের প্রধান কারণগুলোর মধ্যে পড়ে।
৩. সামাজিক শ্রেণিবিন্যাস ও বৈষম্য: সমাজে ধনী ও দরিদ্র, শিক্ষিত ও অশিক্ষিত, বিভিন্ন পেশার মানুষদের মধ্যে পার্থক্য থাকে। সমাজ বিজ্ঞানীরা এসব শ্রেণিবিন্যাস ও বৈষম্যের কারণ ও প্রভাব বিশ্লেষণ করেন। জাতি, ধর্ম, লিঙ্গ, বর্ণ ও অর্থনৈতিক অবস্থার ভিত্তিতে মানুষ কীভাবে বিভিন্ন শ্রেণিতে বিভক্ত হয় এবং তা সমাজে কী ধরনের প্রভাব ফেলে তা সমাজ বিজ্ঞানীরা বোঝার চেষ্টা করেন।
৪. পরিবার ও বিবাহ: পরিবার সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি। সমাজ বিজ্ঞানীরা পরিবার কাঠামো, বিবাহ প্রথা, পারিবারিক সম্পর্ক, সন্তান লালন-পালন ও পরিবারের সামাজিক ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করেন। সমাজের পরিবর্তনের সাথে সাথে পারিবারিক কাঠামোরও পরিবর্তন ঘটে, যা সমাজ বিজ্ঞানীদের গবেষণার একটি প্রধান ক্ষেত্র।
৫. সংস্কৃতি ও সামাজিকীকরণ: সংস্কৃতি হল মানুষের জীবনযাত্রার মূল ভিত্তি। ভাষা, ধর্ম, কৃষ্টি, রীতিনীতি, মূল্যবোধ, শিল্প, সাহিত্য ইত্যাদি সংস্কৃতির অন্তর্ভুক্ত। সমাজ বিজ্ঞানীরা সংস্কৃতির বিকাশ ও পরিবর্তন, এর সামাজিক প্রভাব এবং বিভিন্ন সমাজে সংস্কৃতির পার্থক্য নিয়ে গবেষণা করেন। সামাজিকীকরণ হল সেই প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে ব্যক্তি তার সমাজের সংস্কৃতি ও মূল্যবোধ রপ্ত করে।
৬. শিক্ষা ও সমাজ: শিক্ষা সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। এটি ব্যক্তি ও সমাজের উন্নতির জন্য অপরিহার্য। সমাজ বিজ্ঞানীরা শিক্ষা ব্যবস্থার গঠন, কার্যকারিতা, শিক্ষার মাধ্যমে সামাজিক পরিবর্তন এবং শিক্ষার বৈষম্য নিয়ে গবেষণা করেন।
৭. অর্থনীতি ও সমাজ: অর্থনীতি এবং সমাজ একে অপরের সাথে জড়িত। সমাজ বিজ্ঞানীরা অর্থনৈতিক কাঠামো, পুঁজিবাদ, সমাজতন্ত্র, শ্রমবাজার, উৎপাদন, বিতরণ ও ভোগের সামাজিক প্রভাব বিশ্লেষণ করেন। অর্থনৈতিক পরিবর্তন কীভাবে সমাজকে প্রভাবিত করে এবং কীভাবে সামাজিক নীতিগুলো অর্থনীতির উপর প্রভাব ফেলে তা সমাজ বিজ্ঞানীদের গবেষণার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
৮. রাজনীতি ও সমাজ: রাজনীতি সমাজ বিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র। সমাজ বিজ্ঞানীরা রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান, সরকার, ক্ষমতা কাঠামো, নীতি নির্ধারণ প্রক্রিয়া, নির্বাচন এবং রাজনৈতিক আচরণ নিয়ে গবেষণা করেন। সমাজে ক্ষমতার বণ্টন কীভাবে হয় এবং এটি কীভাবে জনগণের উপর প্রভাব ফেলে তা সমাজ বিজ্ঞানীরা বিশ্লেষণ করেন।
৯. অপরাধ ও সমাজ: সমাজ বিজ্ঞানের অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হল অপরাধ ও বিচ্যুতি। সমাজ বিজ্ঞানীরা অপরাধের কারণ, অপরাধ প্রবণতা, সামাজিক নিয়ন্ত্রণ, আইনি ব্যবস্থা এবং সংশোধনমূলক কার্যক্রম নিয়ে গবেষণা করেন। অপরাধ দমনে আইন ও সামাজিক নীতিগুলোর ভূমিকা কী তা বিশ্লেষণ করা হয়।
১০. নগর ও গ্রামীণ সমাজ: সমাজ বিজ্ঞানীরা নগর ও গ্রামীণ সমাজের গঠন, জীবনযাত্রার পার্থক্য, নগরায়ণ, শিল্পায়ন এবং নগর সমস্যাগুলি বিশ্লেষণ করেন। গ্রাম ও শহরের জীবনধারার মধ্যে কী কী পার্থক্য রয়েছে এবং কীভাবে আধুনিক নগরসমাজ গঠিত হচ্ছে তা সমাজ বিজ্ঞানীরা বোঝার চেষ্টা করেন।
উপসংহার: সমাজ বিজ্ঞান একটি ব্যাপক ও গুরুত্বপূর্ণ শাস্ত্র, যা সমাজের বিভিন্ন দিক বিশ্লেষণ করে। এটি মানুষের আচরণ, সামাজিক পরিবর্তন, প্রতিষ্ঠান, সংস্কৃতি, রাজনীতি, অর্থনীতি এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলির উপর আলোকপাত করে। সমাজ বিজ্ঞান সমাজের বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত করে এবং তার সমাধানের পথ নির্দেশ করে। এটি আমাদের সমাজকে গভীরভাবে বুঝতে এবং উন্নত করতে সাহায্য করে।
****2) প্রশ্ন. শিক্ষামূলক সমাজবিজ্ঞান কাকে বলে? এর গুরুত্ব আলোচনা কর।৫
শিক্ষামূলক সমাজবিজ্ঞান: সংজ্ঞা ও ধারণা
শিক্ষামূলক সমাজবিজ্ঞান (Educational Sociology) হল সমাজবিজ্ঞানের একটি বিশেষ শাখা, যা শিক্ষা এবং সমাজের পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে গবেষণা করে। এটি বোঝায় যে কীভাবে শিক্ষা সমাজের গঠন, সংস্কৃতি, মূল্যবোধ এবং সামাজিক পরিবর্তনে প্রভাব ফেলে। সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, শিক্ষা শুধুমাত্র পাঠ্যপুস্তক-ভিত্তিক জ্ঞান অর্জনের মাধ্যম নয়, বরং এটি সমাজ গঠনের গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। এই শাখাটি মূলত শিক্ষা ব্যবস্থার সামাজিক দিকগুলো বিশ্লেষণ করে এবং কিভাবে শিক্ষা সামাজিক অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখে তা নির্ধারণ করে।
শিক্ষাবিদ এবং সমাজবিজ্ঞানী এমিল দুর্খাইম (Emile Durkheim) শিক্ষামূলক সমাজবিজ্ঞানকে প্রথম সুনির্দিষ্টভাবে প্রতিষ্ঠিত করেন। তার মতে, শিক্ষা হলো সমাজের একটি প্রধান কাঠামো, যা নতুন প্রজন্মের মধ্যে সামাজিক মূল্যবোধ, নৈতিকতা এবং সংস্কৃতি সঞ্চারিত করতে সাহায্য করে।
শিক্ষামূলক সমাজবিজ্ঞানের গুরুত্ব:
১. সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ায় ভূমিকা: শিক্ষামূলক সমাজবিজ্ঞান মানুষের সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এটি ব্যক্তি ও সমাজের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করে এবং ব্যক্তিকে সামাজিক মূল্যবোধ ও সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত করে। পরিবার, বিদ্যালয় এবং সম্প্রদায় এই সামাজিকীকরণের প্রধান মাধ্যম।
২. সামাজিক সংহতি ও একতা বজায় রাখা: শিক্ষা সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের মধ্যে সংহতি ও সমন্বয় বজায় রাখতে সাহায্য করে। শিক্ষামূলক সমাজবিজ্ঞান সমাজের ভেতরে জাতি, ধর্ম, ভাষা ও সংস্কৃতির বৈচিত্র্য থাকা সত্ত্বেও একটি ঐক্যবদ্ধ সামাজিক পরিবেশ গড়ে তুলতে সহায়তা করে।
৩. সামাজিক পরিবর্তন ও অগ্রগতির সহায়ক: সমাজ ক্রমাগত পরিবর্তনশীল এবং শিক্ষা এই পরিবর্তনের অন্যতম চালিকা শক্তি। শিক্ষামূলক সমাজবিজ্ঞান এই পরিবর্তনগুলোর বিশ্লেষণ করে এবং সমাজকে উন্নতির পথে পরিচালিত করতে সাহায্য করে। এটি নতুন ধারণা, প্রযুক্তি এবং সংস্কৃতির সঙ্গে সমাজকে পরিচিত করায়।
৪. নৈতিকতা ও মূল্যবোধ গঠন: একটি সুস্থ সমাজ গঠনের জন্য নৈতিক শিক্ষা অপরিহার্য। শিক্ষামূলক সমাজবিজ্ঞান ব্যক্তি এবং সমাজের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, নৈতিকতা এবং সামাজিক দায়িত্ববোধ গড়ে তুলতে সহায়তা করে। এটি শিক্ষার মাধ্যমে নৈতিক মূল্যবোধ ও সৎচরিত্র গঠনে সাহায্য করে।
৫. সামাজিক সমস্যার সমাধান: শিক্ষামূলক সমাজবিজ্ঞান সমাজে বিদ্যমান বিভিন্ন সমস্যা যেমন দারিদ্র্য, বেকারত্ব, লিঙ্গ বৈষম্য, অপরাধ এবং সামাজিক বৈষম্য বিশ্লেষণ করে এবং এসব সমস্যার সমাধানের উপায় নির্দেশ করে। এটি শিক্ষার মাধ্যমে সামাজিক সমস্যা দূর করার কার্যকরী কৌশল প্রস্তাব করে।
৬. অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা: একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর প্রয়োজন। শিক্ষামূলক সমাজবিজ্ঞান ব্যক্তি ও সমাজের মধ্যে শিক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরে এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে সহায়তা করে।
৭. গণতন্ত্র ও নাগরিক সচেতনতা বৃদ্ধি: গণতান্ত্রিক সমাজে নাগরিকদের সচেতনতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষামূলক সমাজবিজ্ঞান ব্যক্তি ও সমাজকে গণতান্ত্রিক চেতনা, অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন করে এবং সক্রিয় নাগরিকত্ব বিকাশে সাহায্য করে।
উপসংহার: শিক্ষামূলক সমাজবিজ্ঞান সমাজের অগ্রগতি, সংহতি এবং পরিবর্তনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে সামাজিক ন্যায়বিচার, নৈতিকতা ও মানবিক মূল্যবোধ গঠনে সহায়তা করে। ফলে, একটি সুস্থ, সচেতন এবং প্রগতিশীল সমাজ গঠনের জন্য শিক্ষামূলক সমাজবিজ্ঞানের গুরুত্ব অপরিসীম।
ইউনিট II: সামাজিক কারণ, সমস্যা এবং শিক্ষা
****3) প্রশ্ন. সংস্কৃতি কী? সংস্কৃতির প্রকৃতি বা বৈশিষ্ট্যগুলি লেখ। শিক্ষা ও সংস্কৃতির সম্পর্ক আলোচনা কর। (৫+৫=১০)
সংস্কৃতি কী?
সংস্কৃতি হল একটি সমাজের মানুষের জীবনধারা, চিন্তাধারা, আচার-অনুষ্ঠান, বিশ্বাস, মূল্যবোধ, নৈতিকতা, শিল্প, সাহিত্য, ধর্ম এবং প্রথার সমষ্টি। এটি একটি জাতির পরিচয় বহন করে এবং প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে প্রবাহিত হয়। সংস্কৃতি কেবলমাত্র বাহ্যিক আচরণ বা রীতিনীতি নয়, এটি মানুষের অন্তর্নিহিত জ্ঞান ও বিশ্বাসের প্রতিফলন। সংস্কৃতি সামাজিক এবং ঐতিহাসিক বিকাশের ফল, যা একটি জনগোষ্ঠীর মানসিকতা ও জীবনযাত্রার ধরনকে প্রতিফলিত করে।
সংস্কৃতির প্রকৃতি বা বৈশিষ্ট্যগুলি:
১. অর্জিত গুণ: সংস্কৃতি জন্মগত নয়; এটি অভিজ্ঞতার মাধ্যমে অর্জিত হয়। পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সমাজ ও পরিবেশ থেকে মানুষ সংস্কৃতি গ্রহণ করে।
২. প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তর সংক্রমিত: সংস্কৃতি এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে প্রবাহিত হয়। এটি মৌখিক, লিখিত বা ব্যবহারিক শিক্ষার মাধ্যমে স্থানান্তরিত হয়।
৩. গতিশীলতা: সংস্কৃতি একটি স্থির বিষয় নয়; এটি পরিবর্তনশীল। নতুন প্রযুক্তি, সামাজিক পরিবর্তন এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে সংস্কৃতির ধরণ পরিবর্তিত হয়।
৪. সামাজিক রীতিনীতির প্রতিফলন: সংস্কৃতি সমাজের মূল্যবোধ ও রীতিনীতির উপর ভিত্তি করে গঠিত হয়। একটি নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর ধর্ম, আইন, আচরণ এবং আচার-অনুষ্ঠান সংস্কৃতির মূল অংশ।
৫. বৈচিত্র্যময়: প্রতিটি সমাজের সংস্কৃতি ভিন্ন। অঞ্চলভেদে সংস্কৃতির পার্থক্য দেখা যায়, যা মানুষের জীবনধারার বৈচিত্র্য সৃষ্টি করে।
৬. প্রভাবশালী: সংস্কৃতি ব্যক্তির জীবনযাত্রা, চিন্তা-চেতনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রভাব ফেলে। এটি মানুষের নৈতিকতা ও মূল্যবোধের ভিত্তি গঠন করে।
৭. অদৃশ্য কিন্তু কার্যকর: সংস্কৃতি সাধারণত অদৃশ্য হলেও এটি মানুষের চিন্তা ও আচরণের ওপর ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে।
৮. অভ্যাস ও আচার-অনুষ্ঠানের সংকলন: প্রতিটি সংস্কৃতি কিছু নির্দিষ্ট আচার-অনুষ্ঠান ও অভ্যাসের মাধ্যমে প্রকাশ পায়, যা সমাজের মানুষ মেনে চলে।
শিক্ষা ও সংস্কৃতির সম্পর্ক:
শিক্ষা ও সংস্কৃতি একে অপরের পরিপূরক। শিক্ষা সংস্কৃতির ধারক ও বাহক হিসেবে কাজ করে এবং সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
১. সংস্কৃতি সংরক্ষণে শিক্ষা: শিক্ষা পূর্ববর্তী প্রজন্মের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেয়। এটি সংস্কৃতির স্থায়িত্ব ও বিকাশ নিশ্চিত করে।
২. সংস্কৃতির বিকাশ: শিক্ষা সংস্কৃতির উন্নয়নে সহায়তা করে। নতুন নতুন জ্ঞান ও প্রযুক্তির সংযোজনের মাধ্যমে সংস্কৃতি সমৃদ্ধ হয়।
৩. নৈতিক মূল্যবোধ ও আচরণ গঠনে ভূমিকা: শিক্ষা মানুষের মধ্যে নৈতিক মূল্যবোধ, সামাজিক আচরণ ও সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা তৈরি করে।
৪. সামাজিক পরিবর্তনে অবদান: শিক্ষা মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি প্রসারিত করে এবং সংস্কৃতির গতিশীলতা নিশ্চিত করে। নতুন ভাবনা ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে সংস্কৃতির পরিবর্তন ঘটে।
৫. ভিন্ন সংস্কৃতির সাথে মেলবন্ধন: শিক্ষা মানুষকে বিভিন্ন সংস্কৃতি সম্পর্কে সচেতন করে এবং আন্তঃসাংস্কৃতিক বোঝাপড়ার উন্নতি ঘটায়। এটি গ্লোবালাইজেশনের যুগে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৬. ব্যক্তি ও সমাজ উন্নয়নে ভূমিকা: শিক্ষা ব্যক্তি ও সমাজকে সুসংগঠিত জীবনযাপনের জন্য প্রস্তুত করে। এটি মানুষের সৃজনশীলতা ও মানসিক বিকাশের সহায়ক।
৭. অসাম্প্রদায়িকতা ও সহনশীলতা বৃদ্ধি: শিক্ষা মানুষের মধ্যে সহনশীলতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সম্প্রীতির মনোভাব গড়ে তোলে, যা সুস্থ সাংস্কৃতিক পরিবেশ তৈরি করে।
উপসংহার: সংস্কৃতি মানুষের জীবনযাত্রার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। শিক্ষা সংস্কৃতির ধারক ও বাহক হিসেবে কাজ করে এবং সংস্কৃতির সংরক্ষণ, বিকাশ ও পরিবর্তনে ভূমিকা রাখে। শিক্ষা ও সংস্কৃতির মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক সমাজের অগ্রগতি ও মানব সভ্যতার বিকাশে সহায়তা করে। তাই শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে সংস্কৃতির ইতিবাচক দিকগুলো সংরক্ষণ করা এবং ক্ষতিকর দিকগুলো দূর করা সম্ভব।
**4) প্রশ্ন. বেকারত্ব কী? বেকারত্বের কারণ বা উৎসগুলি লেখ। বেকারত্ব দূরীকরণে শিক্ষার ভূমিকা আলোচনা কর। (২+৩+৫) (2023)
বেকারত্ব কী?
বেকারত্ব হল এমন একটি অবস্থা, যখন একজন কর্মক্ষম ব্যক্তি কাজের ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও উপযুক্ত কর্মসংস্থান পাচ্ছেন না। এটি সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা, যা একটি দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে বড় বাধা সৃষ্টি করে। বেকারত্বের ফলে ব্যক্তি, সমাজ এবং দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এটি দারিদ্র্য, অপরাধ প্রবণতা এবং মানসিক অস্থিরতার অন্যতম কারণ হতে পারে।
বেকারত্বের কারণ বা উৎসগুলি:
বেকারত্বের বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে, যা সামাজিক, অর্থনৈতিক ও শিক্ষাগত দিক থেকে বিশ্লেষণ করা যায়। প্রধান কারণগুলি নিচে উল্লেখ করা হলো—
১. জনসংখ্যা বৃদ্ধি: ভারতের মতো জনবহুল দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগের তুলনায় কর্মপ্রার্থীর সংখ্যা অনেক বেশি। ফলে প্রচুর মানুষ কর্মহীন থাকেন।
২. প্রযুক্তির উন্নয়ন: প্রযুক্তির অগ্রগতির ফলে বহু ক্ষেত্রে স্বয়ংক্রিয় মেশিনের ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে, যা কর্মসংস্থানের সুযোগ কমিয়ে দিয়েছে।
৩. শিল্প ও কারখানার অভাব: শিল্প ও কারখানার পরিমাণ কম থাকায় কর্মসংস্থানের সুযোগও সীমিত হয়ে যায়। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে কর্মসংস্থানের অভাব তীব্রভাবে অনুভূত হয়।
৪. শিক্ষাব্যবস্থার ত্রুটি: বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা কর্মমুখী না হওয়ায় শিক্ষিত যুবসমাজ দক্ষতা না থাকার কারণে চাকরি পেতে ব্যর্থ হয়।
৫. দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি: কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি এবং রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে যোগ্য ব্যক্তিরা চাকরি পান না, ফলে বেকারত্ব বৃদ্ধি পায়।
৬. কৃষির ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা: ভারতের অধিকাংশ মানুষ কৃষির ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু কৃষিতে সীমিত কর্মসংস্থানের সুযোগ থাকায় প্রচুর মানুষ কর্মহীন থাকে।
৭. দক্ষতার অভাব: বর্তমান শ্রমবাজারে অনেক নতুন নতুন ক্ষেত্র সৃষ্টি হলেও দক্ষ শ্রমিকের অভাবে কর্মসংস্থান ঠিকমতো হয় না।
বেকারত্ব দূরীকরণে শিক্ষার ভূমিকা:
শিক্ষা হলো সমাজ ও অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি। বেকারত্ব দূরীকরণে শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে, যা বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করা যায়—
১. কর্মমুখী শিক্ষার প্রসার: শিক্ষাকে যদি বাস্তব জীবনের সঙ্গে সংযুক্ত করা যায় এবং কর্মমুখী করা হয়, তবে তা দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে সহায়তা করবে। কারিগরি শিক্ষা, পেশাদার প্রশিক্ষণ এবং দক্ষতা উন্নয়নমূলক কোর্স চালু করা হলে বেকারত্ব কমতে পারে।
২. প্রযুক্তিগত শিক্ষা: প্রযুক্তিগত শিক্ষার গুরুত্ব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তি, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, মেশিন লার্নিং, রোবোটিক্স প্রভৃতি বিষয়ে শিক্ষা দিলে ছাত্রছাত্রীরা সহজেই কাজের সুযোগ পাবে।
৩. উদ্যোগী ও আত্মনির্ভরশীল শিক্ষা: শিক্ষাব্যবস্থায় যদি উদ্যোগী ও আত্মনির্ভরশীল হওয়ার শিক্ষা প্রদান করা হয়, তবে তরুণ সমাজ চাকরির জন্য অপেক্ষা না করে নিজেদের উদ্যোগে ব্যবসা বা নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারবে।
৪. গ্রামীণ উন্নয়নমূলক শিক্ষা: গ্রামাঞ্চলে কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধির জন্য কৃষিভিত্তিক শিক্ষা, পশুপালন, মৎস্যচাষ, হস্তশিল্প ও ক্ষুদ্র শিল্প সংক্রান্ত শিক্ষা দেওয়া উচিত।
৫. ভাষাগত দক্ষতা ও গ্লোবালাইজড শিক্ষা: আজকের যুগে ইংরেজি ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক ভাষায় দক্ষতা অর্জন করলে বৈশ্বিক চাকরির বাজারে প্রতিযোগিতা করা সম্ভব হবে।
৬. কর্মসংস্থান সংক্রান্ত পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা: ছাত্রছাত্রীদের ক্যারিয়ার গঠনের জন্য সঠিক দিকনির্দেশনা ও পরামর্শ প্রদান করা হলে তারা উপযুক্ত কর্মসংস্থানের সুযোগ খুঁজে পাবে।
৭. সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ: সরকারি ও বেসরকারি খাতে প্রশিক্ষণমূলক প্রকল্প চালু করলে তরুণরা দক্ষতা অর্জন করতে পারবে এবং সহজে কাজের সুযোগ পাবে।
উপসংহার: বেকারত্ব একটি গুরুতর সামাজিক সমস্যা, যা সমাধান করা জরুরি। এর জন্য শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তির ব্যবহার এবং সরকার ও বেসরকারি খাতের যৌথ উদ্যোগ প্রয়োজন। কর্মমুখী ও প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষার প্রসার, উদ্যোক্তা গঠনের সুযোগ বৃদ্ধি এবং দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নের মাধ্যমে বেকারত্ব দূর করা সম্ভব। শিক্ষা যদি বাস্তবজীবনমুখী হয়, তবে এটি শুধু ব্যক্তিগত উন্নয়ন নয়, বরং সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নেও সহায়ক হবে।
ইউনিট III: সামাজিক গোষ্ঠী এবং শিক্ষা
****5) প্রশ্ন. গৌণ গোষ্ঠী কাকে বলে? গৌণ গোষ্ঠীর শিক্ষাগত বৈশিষ্ট্য বা তাৎপর্য গুলি লেখ। ৫
ভূমিকা: মানুষ সমাজবদ্ধ জীব। সমাজবদ্ধ জীব হিসেবে মানুষ বিভিন্ন গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত থাকে। সামাজিক সম্পর্কের ভিত্তিতে গোষ্ঠীগুলিকে দুটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায়—প্রাথমিক গোষ্ঠী এবং গৌণ গোষ্ঠী। গৌণ গোষ্ঠী সমাজবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা যা ব্যক্তি ও সমাজের মধ্যে সম্পর্কের একটি বিশেষ ধরণ ব্যাখ্যা করে। শিক্ষার ক্ষেত্রেও গৌণ গোষ্ঠীর বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে।
গৌণ গোষ্ঠী কাকে বলে?
গৌণ গোষ্ঠী হলো সেই গোষ্ঠী যেখানে ব্যক্তিরা নির্দিষ্ট লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, বা স্বার্থের ভিত্তিতে পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে। এই গোষ্ঠীগুলির সদস্যদের মধ্যে ব্যক্তিগত সম্পর্কের পরিবর্তে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক বেশি থাকে। সমাজবিজ্ঞানী চার্লস কুলি প্রথম প্রাথমিক ও গৌণ গোষ্ঠীর ধারণা প্রদান করেন। গৌণ গোষ্ঠী মূলত বৃহত্তর সামাজিক কাঠামোর অংশ এবং এতে সম্পর্কগুলি আনুষ্ঠানিক, কর্মমুখী ও স্বল্পস্থায়ী হয়।
গৌণ গোষ্ঠীর বৈশিষ্ট্য:
গৌণ গোষ্ঠীর কিছু উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ:
1. আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক: এই গোষ্ঠীর সদস্যদের মধ্যে সম্পর্ক মূলত আনুষ্ঠানিক ও নির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন দ্বারা পরিচালিত হয়। ব্যক্তিগত আবেগের চেয়ে কর্তব্য বা স্বার্থ এখানে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
2. বিশেষ উদ্দেশ্যপূর্ণ: গৌণ গোষ্ঠীগুলি বিশেষ কোনো উদ্দেশ্য সাধনের জন্য গঠিত হয়, যেমন—বিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয়, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক দল, শ্রমিক ইউনিয়ন ইত্যাদি।
3. অস্থায়ী সম্পর্ক: প্রাথমিক গোষ্ঠীর মতো গৌণ গোষ্ঠীর সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী হয় না। কাজের প্রয়োজনে বা বিশেষ কোনো লক্ষ্য অর্জিত হলে সম্পর্ক শেষ হয়ে যায়।
4. আনুষ্ঠানিক নিয়ন্ত্রণ: গোষ্ঠীর কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নির্দিষ্ট আইন-কানুন, বিধি-নিষেধ এবং কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত থাকে।
5. বৃহৎ পরিসর: এই গোষ্ঠীর পরিসর সাধারণত বড় হয়, যেখানে একাধিক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সম্পৃক্ত থাকে।
6. ব্যক্তিগত অনুভূতির অভাব: গৌণ গোষ্ঠীর সদস্যদের মধ্যে আবেগের পরিবর্তে পেশাদারিত্ব ও দাপ্তরিক সম্পর্ক বেশি দেখা যায়।
গৌণ গোষ্ঠীর শিক্ষাগত বৈশিষ্ট্য বা তাৎপর্য:
গৌণ গোষ্ঠী শিক্ষাক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর কিছু শিক্ষাগত তাৎপর্য নিম্নরূপ:
1. প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার ভিত্তি: বিদ্যালয়, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি গৌণ গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। শিক্ষার আনুষ্ঠানিক রূপ এই গোষ্ঠীর মাধ্যমে পরিচালিত হয়।
2. শৃঙ্খলাবোধ গঠনে সহায়ক: গৌণ গোষ্ঠীর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা নির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন ও শৃঙ্খলার মধ্যে থেকে শিক্ষা লাভ করে, যা তাদের ভবিষ্যৎ জীবনে সাহায্য করে।
3. জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন: শিক্ষার মাধ্যমে গৌণ গোষ্ঠীর সদস্যরা নতুন নতুন জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করতে পারে, যা তাদের কর্মজীবনে সহায়ক হয়।
4. পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি: বিদ্যালয় ও উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের কর্মজীবনে সফল হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও দক্ষতা প্রদান করে।
5. সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়া: গৌণ গোষ্ঠী শিক্ষার্থীদের সামাজিকীকরণে সাহায্য করে। এটি তাদের সামাজিক দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন করে তোলে।
6. প্রতিযোগিতামূলক মানসিকতা গঠন: গৌণ গোষ্ঠী শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রতিযোগিতার মনোভাব গড়ে তোলে, যা তাদের কর্মক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনে সহায়তা করে।
7. বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রসার: আধুনিক শিক্ষায় গৌণ গোষ্ঠী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা কার্যক্রম এর অন্যতম উদাহরণ।
উপসংহার: গৌণ গোষ্ঠী সামাজিক ও শিক্ষাগত জীবনে অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে। এটি ব্যক্তির দক্ষতা বৃদ্ধি, জ্ঞান অর্জন এবং পেশাগত জীবনে সফলতা লাভে সহায়ক। বিদ্যালয়, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গৌণ গোষ্ঠীর মাধ্যমে সমাজের উন্নতি সাধন করে। তাই শিক্ষাক্ষেত্রে গৌণ গোষ্ঠীর গুরুত্ব অনস্বীকার্য।
****6) প্রশ্ন. সামাজিকীকরণ বলতে কী বোঝো? এর বৈশিষ্ট্যগুলি লেখ। সামাজিকীকরণে পরিবারের ভূমিকা আলোচনা কর। 10
সামাজিকীকরণ কী?
সামাজিকীকরণ হলো একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে ব্যক্তি সমাজের নিয়ম, মূল্যবোধ, সংস্কৃতি, আচরণ এবং প্রথাগুলি শেখে এবং আত্মস্থ করে। এটি একটি জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া যা শৈশব থেকে শুরু হয়ে বার্ধক্য পর্যন্ত চলতে থাকে। সামাজিকীকরণের মাধ্যমে ব্যক্তি সমাজের একজন সক্রিয় ও দায়িত্বশীল সদস্য হিসেবে গড়ে ওঠে। এই প্রক্রিয়ায় ব্যক্তি সমাজের অন্যান্য সদস্যদের সাথে যোগাযোগ করে, তাদের থেকে শেখে এবং নিজের আচরণ ও বিশ্বাসকে সমাজের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে তোলে।
সামাজিকীকরণের বৈশিষ্ট্যসমূহ:
১. জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া: সামাজিকীকরণ শুধুমাত্র শৈশবে সীমাবদ্ধ নয়, এটি জীবনব্যাপী চলমান প্রক্রিয়া। ব্যক্তি জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে নতুন নতুন ভূমিকা ও দায়িত্ব গ্রহণ করে এবং সেই অনুযায়ী নিজেকে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে তোলে।
২. শেখার প্রক্রিয়া: সামাজিকীকরণ একটি শেখার প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় ব্যক্তি সমাজের নিয়ম, মূল্যবোধ, আচরণ এবং প্রথাগুলি শেখে। এটি আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক উভয় প্রকার শিক্ষার মাধ্যমে সম্পন্ন হয়।
৩. সামাজিক মিথস্ক্রিয়া: সামাজিকীকরণ সামাজিক মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে ঘটে। ব্যক্তি পরিবার, বন্ধু, শিক্ষক, সহকর্মী এবং সমাজের অন্যান্য সদস্যদের সাথে মিথস্ক্রিয়া করে এবং তাদের থেকে শেখে।
৪. সাংস্কৃতিক প্রেরণা: সামাজিকীকরণের মাধ্যমে সমাজের সংস্কৃতি এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে প্রেরিত হয়। ব্যক্তি সমাজের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, রীতিনীতি এবং প্রথাগুলি শেখে এবং তা নিজের জীবনে প্রয়োগ করে।
৫. ব্যক্তিত্ব গঠন: সামাজিকীকরণ ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই প্রক্রিয়ায় ব্যক্তি সমাজের নিয়ম ও মূল্যবোধের সাথে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেয় এবং একটি সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্ব গড়ে তোলে।
৬. ভূমিকা গ্রহণ: সামাজিকীকরণের মাধ্যমে ব্যক্তি সমাজে বিভিন্ন ভূমিকা গ্রহণ করে। যেমন- ছাত্র, শিক্ষক, পিতামাতা, সন্তান ইত্যাদি। এই ভূমিকাগুলি পালনের মাধ্যমে ব্যক্তি সমাজের সাথে নিজেকে যুক্ত করে।
সামাজিকীকরণে পরিবারের ভূমিকা:
সামাজিকীকরণের প্রক্রিয়ায় পরিবার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পরিবার হলো সামাজিকীকরণের প্রথম ও প্রধান মাধ্যম। শিশু জন্মের পর থেকে পরিবারের সদস্যদের সাথে মিথস্ক্রিয়া করে এবং তাদের থেকে সমাজের নিয়ম, মূল্যবোধ, আচরণ এবং প্রথাগুলি শেখে। পরিবারের ভূমিকা নিম্নরূপ:
১. প্রাথমিক শিক্ষা: পরিবার শিশুর প্রথম শিক্ষক। শিশু পরিবার থেকেই প্রথম ভাষা, আচরণ, নৈতিকতা এবং সামাজিক নিয়মগুলি শেখে। পরিবারের সদস্যদের আচরণ এবং মূল্যবোধ শিশুর উপর গভীর প্রভাব ফেলে।
২. নৈতিকতা ও মূল্যবোধের শিক্ষা: পরিবার শিশুকে নৈতিকতা ও মূল্যবোধের শিক্ষা দেয়। পরিবারের সদস্যদের আচরণ, কথাবার্তা এবং মূল্যবোধ শিশুর নৈতিক চরিত্র গঠনে সাহায্য করে। পরিবার শিশুকে সত্যবাদিতা, ন্যায়পরায়ণতা, দয়া, সহানুভূতি ইত্যাদি গুণাবলি শেখায়।
৩. সামাজিক নিয়ম ও প্রথার শিক্ষা: পরিবার শিশুকে সমাজের নিয়ম ও প্রথাগুলি শেখায়। যেমন- বড়দের সম্মান করা, ছোটদের স্নেহ করা, সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা ইত্যাদি। এই শিক্ষাগুলি শিশুকে সমাজের একজন দায়িত্বশীল সদস্য হিসেবে গড়ে তোলে।
৪. ভাষা ও সংস্কৃতির শিক্ষা: পরিবার শিশুকে মাতৃভাষা এবং সংস্কৃতির শিক্ষা দেয়। শিশু পরিবার থেকেই প্রথম ভাষা শেখে এবং সেই ভাষার মাধ্যমে সমাজের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে পারে। পরিবারের সদস্যদের সাথে কথোপকথন, গল্প বলা, গান গাওয়া ইত্যাদি মাধ্যমে শিশু সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হয়।
৫. আত্মবিশ্বাস ও নিরাপত্তা প্রদান: পরিবার শিশুকে আত্মবিশ্বাস ও নিরাপত্তা প্রদান করে। পরিবারের সদস্যদের ভালোবাসা, স্নেহ এবং সহযোগিতা শিশুর মধ্যে আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলে এবং তাকে সামাজিকভাবে সক্রিয় ও দায়িত্বশীল করে তোলে।
৬. ভূমিকা গ্রহণের শিক্ষা: পরিবার শিশুকে সমাজে বিভিন্ন ভূমিকা গ্রহণের শিক্ষা দেয়। যেমন- পিতামাতার ভূমিকা, সন্তানের ভূমিকা, ভাইবোনের ভূমিকা ইত্যাদি। এই ভূমিকাগুলি পালনের মাধ্যমে শিশু সমাজের সাথে নিজেকে যুক্ত করে এবং সামাজিক দায়িত্ববোধ গড়ে তোলে।
উপসংহার: সামাজিকীকরণ হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া যা ব্যক্তিকে সমাজের একজন সক্রিয় ও দায়িত্বশীল সদস্য হিসেবে গড়ে তোলে। এই প্রক্রিয়ায় পরিবার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পরিবার শিশুকে প্রাথমিক শিক্ষা, নৈতিকতা, মূল্যবোধ, সামাজিক নিয়ম, ভাষা, সংস্কৃতি এবং ভূমিকা গ্রহণের শিক্ষা দেয়। পরিবারের সদস্যদের আচরণ, মূল্যবোধ এবং শিক্ষা শিশুর ব্যক্তিত্ব গঠনে এবং সামাজিকীকরণে গভীর প্রভাব ফেলে। তাই, সামাজিকীকরণের প্রক্রিয়ায় পরিবারের ভূমিকা অপরিসীম।
ইউনিট IV: সামাজিক পরিবর্তন এবং শিক্ষা
****7) প্রশ্ন. সামাজিক পরিবর্তনের কারণগুলি লেখ। 5
সামাজিক পরিবর্তন হলো সমাজের গঠন, সংস্কৃতি, মূল্যবোধ, প্রথা, প্রতিষ্ঠান এবং আচরণের পরিবর্তন। এটি একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া যা সময়ের সাথে সাথে ঘটে এবং বিভিন্ন কারণ দ্বারা প্রভাবিত হয়। সামাজিক পরিবর্তনের কারণগুলি বহুমুখী এবং জটিল। নিম্নে সামাজিক পরিবর্তনের প্রধান কারণগুলি আলোচনা করা হলো:
১. প্রযুক্তিগত উন্নয়ন:
প্রযুক্তির উন্নয়ন সামাজিক পরিবর্তনের অন্যতম প্রধান কারণ। প্রযুক্তির অগ্রগতি মানুষের জীবনযাত্রার মান, যোগাযোগ ব্যবস্থা, শিক্ষা, চিকিৎসা এবং কর্মক্ষেত্রকে আমূল পরিবর্তন করে। উদাহরণস্বরূপ, ইন্টারনেট এবং সোশ্যাল মিডিয়ার আবির্ভাব মানুষের সামাজিক সম্পর্ক এবং যোগাযোগের ধরণকে বদলে দিয়েছে। প্রযুক্তির উন্নয়ন শিল্প বিপ্লবের মাধ্যমে সমাজে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে, যা শ্রমিক শ্রেণির উদ্ভব এবং নগরায়ণকে ত্বরান্বিত করেছে।
২. অর্থনৈতিক কারণ:
অর্থনৈতিক পরিবর্তন সামাজিক পরিবর্তনের একটি গুরুত্বপূর্ণ চালিকা শক্তি। অর্থনৈতিক ব্যবস্থার পরিবর্তন, যেমন পুঁজিবাদের উত্থান বা সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রয়োগ, সমাজের গঠন এবং শ্রেণিবিন্যাসকে প্রভাবিত করে। উদাহরণস্বরূপ, শিল্পায়নের ফলে গ্রামীণ সমাজ থেকে নগরায়ণের দিকে ব্যাপক স্থানান্তর ঘটেছে, যা পরিবার কাঠামো, শ্রমের ধরণ এবং সামাজিক সম্পর্ককে পরিবর্তন করেছে।
৩. রাজনৈতিক কারণ:
রাজনৈতিক পরিবর্তনও সামাজিক পরিবর্তনের একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। সরকারের নীতি, আইন, এবং রাজনৈতিক আন্দোলন সমাজের গঠন এবং মূল্যবোধকে প্রভাবিত করে। উদাহরণস্বরূপ, স্বাধীনতা আন্দোলন, নারী অধিকার আন্দোলন, বা বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলন সমাজে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে। রাজনৈতিক বিপ্লব বা সংস্কারও সামাজিক কাঠামো এবং প্রতিষ্ঠানগুলিকে আমূল পরিবর্তন করতে পারে।
৪. সাংস্কৃতিক কারণ:
সংস্কৃতি হলো সমাজের মূল ভিত্তি, এবং সাংস্কৃতিক পরিবর্তন সামাজিক পরিবর্তনের দিকে নিয়ে যায়। শিক্ষা, ধর্ম, শিল্প, সাহিত্য এবং মিডিয়া সংস্কৃতিকে প্রভাবিত করে এবং এর মাধ্যমে সমাজের মূল্যবোধ এবং আচরণ পরিবর্তিত হয়। উদাহরণস্বরূপ, নারীর শিক্ষা এবং কর্মক্ষেত্রে অংশগ্রহণের ফলে নারীর সামাজিক অবস্থান এবং ভূমিকা পরিবর্তিত হয়েছে। সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানও সমাজে নতুন ধারণা এবং প্রথার প্রবর্তন করতে পারে।
৫. জনসংখ্যাগত কারণ:
জনসংখ্যার পরিবর্তন সামাজিক কাঠামো এবং প্রতিষ্ঠানগুলিকে প্রভাবিত করে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি, হ্রাস, বা স্থানান্তর সামাজিক পরিবর্তনের দিকে নিয়ে যায়। উদাহরণস্বরূপ, জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে নগরায়ণ, বেকারত্ব, এবং সম্পদের উপর চাপ বৃদ্ধি পায়, যা সামাজিক সমস্যা এবং পরিবর্তনের দিকে নিয়ে যায়। আবার, জনসংখ্যা হ্রাস বা প্রবীণ জনসংখ্যার বৃদ্ধি সামাজিক সেবা এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনে।
৬. পরিবেশগত কারণ:
প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তনও সামাজিক পরিবর্তনের কারণ। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, জলবায়ু পরিবর্তন, এবং সম্পদের অভাব মানুষের জীবনযাত্রা এবং সামাজিক কাঠামোকে প্রভাবিত করে। উদাহরণস্বরূপ, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কৃষি ব্যবস্থা এবং খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে, যা গ্রামীণ সমাজ থেকে নগরায়ণের দিকে ব্যাপক স্থানান্তর ঘটাচ্ছে।
৭. শিক্ষা:
শিক্ষা সামাজিক পরিবর্তনের একটি শক্তিশালী হাতিয়ার। শিক্ষার মাধ্যমে নতুন ধারণা, মূল্যবোধ এবং দক্ষতা ছড়িয়ে পড়ে, যা সমাজের গতিশীলতা এবং উন্নয়নে ভূমিকা রাখে। শিক্ষার প্রসার নারীর ক্ষমতায়ন, সামাজিক সমতা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৮. বৈশ্বিকীকরণ:
বৈশ্বিকীকরণের ফলে বিশ্বের বিভিন্ন সমাজ একে অপরের সাথে সংযুক্ত হয়েছে। এই সংযোগের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক আদান-প্রদান ঘটে, যা স্থানীয় সমাজে পরিবর্তন আনে। উদাহরণস্বরূপ, বৈশ্বিক সংস্কৃতি এবং পণ্যের প্রসার স্থানীয় সংস্কৃতি এবং অর্থনীতিকে প্রভাবিত করেছে।
উপসংহার:
সামাজিক পরিবর্তন একটি জটিল এবং বহুমুখী প্রক্রিয়া যা বিভিন্ন কারণ দ্বারা প্রভাবিত হয়। প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, অর্থনৈতিক পরিবর্তন, রাজনৈতিক আন্দোলন, সাংস্কৃতিক পরিবর্তন, জনসংখ্যাগত পরিবর্তন, পরিবেশগত কারণ, শিক্ষা এবং বৈশ্বিকীকরণ সামাজিক পরিবর্তনের প্রধান কারণ। এই কারণগুলি একে অপরের সাথে সম্পর্কিত এবং সমাজের গতিশীলতা এবং উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সামাজিক পরিবর্তনকে বুঝতে হলে এই কারণগুলির গভীরভাবে বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন।
****8) প্রশ্ন. সামাজিক স্তরবিন্যাস কর। সামাজিক স্তরবিন্যাসের বৈশিষ্ট্যগুলি লেখ। ৫
সামাজিক স্তরবিন্যাস (Social Stratification):
সামাজিক স্তরবিন্যাস হলো সমাজের বিভিন্ন স্তর বা শ্রেণিতে মানুষের বিভাজন। এটি এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে সমাজের সদস্যদেরকে তাদের সামাজিক মর্যাদা, সম্পদ, ক্ষমতা এবং সুযোগ-সুবিধার ভিত্তিতে বিভিন্ন স্তরে বিভক্ত করা হয়। সামাজিক স্তরবিন্যাস প্রায় সব সমাজেই বিদ্যমান, তবে এর প্রকৃতি এবং মাত্রা সমাজভেদে ভিন্ন হতে পারে। এটি সমাজের একটি সার্বজনীন এবং অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য।
সামাজিক স্তরবিন্যাসের বৈশিষ্ট্যগুলি:
1. সার্বজনীনতা (Universality): সামাজিক স্তরবিন্যাস প্রায় সব সমাজেই বিদ্যমান। এটি একটি সার্বজনীন সামাজিক ঘটনা। প্রতিটি সমাজেই কিছু না কিছু রূপে স্তরবিন্যাস দেখা যায়, যদিও এর প্রকৃতি এবং মাত্রা ভিন্ন হতে পারে।
2. সামাজিক অসমতা (Social Inequality): সামাজিক স্তরবিন্যাসের মূল ভিত্তি হলো সামাজিক অসমতা। সমাজের বিভিন্ন স্তরের মধ্যে সম্পদ, ক্ষমতা, মর্যাদা এবং সুযোগ-সুবিধার অসম বণ্টন দেখা যায়। উচ্চ স্তরের লোকেরা সাধারণত নিম্ন স্তরের লোকদের চেয়ে বেশি সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে।
3. স্থায়িত্ব (Persistence): সামাজিক স্তরবিন্যাস সাধারণত স্থায়ী হয়। এটি দীর্ঘ সময় ধরে বজায় থাকে এবং প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে স্থানান্তরিত হয়। তবে, সামাজিক গতিশীলতার মাধ্যমে ব্যক্তিরা এক স্তর থেকে অন্য স্তরে যেতে পারে।
4. বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে বিভাজন (Division based on Characteristics):
সামাজিক স্তরবিন্যাস বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে গঠিত হয়। যেমন- সম্পদ, শিক্ষা, পেশা, বংশ, জাতি, লিঙ্গ ইত্যাদি। এই বৈশিষ্ট্যগুলির ভিত্তিতে সমাজের সদস্যদেরকে বিভিন্ন স্তরে বিভক্ত করা হয়।
5. সামাজিক মর্যাদা (Social Status): সামাজিক স্তরবিন্যাসে মর্যাদা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সমাজের বিভিন্ন স্তরের লোকেরা ভিন্ন ভিন্ন মর্যাদা ভোগ করে। উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন লোকেরা সাধারণত সমাজে বেশি সম্মানিত এবং প্রভাবশালী হয়।
6. সামাজিক গতিশীলতা (Social Mobility): সামাজিক স্তরবিন্যাসে গতিশীলতা দেখা যায়। ব্যক্তিরা তাদের প্রচেষ্টা এবং সামর্থ্যের মাধ্যমে এক স্তর থেকে অন্য স্তরে উঠতে বা নামতে পারে। তবে, এই গতিশীলতার মাত্রা সমাজভেদে ভিন্ন হয়।
7. সামাজিক ভূমিকা এবং দায়িত্ব (Social Roles and Responsibilities): সামাজিক স্তরবিন্যাসের প্রতিটি স্তরের লোকেরা নির্দিষ্ট ভূমিকা এবং দায়িত্ব পালন করে। উচ্চ স্তরের লোকেরা সাধারণত নেতৃত্ব এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের দায়িত্ব পালন করে, অন্যদিকে নিম্ন স্তরের লোকেরা সাধারণত শ্রম এবং সেবামূলক কাজ করে।
8. সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য (Cultural Characteristics): সামাজিক স্তরবিন্যাসের প্রতিটি স্তরের লোকেরা ভিন্ন ভিন্ন সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে। যেমন- উচ্চ স্তরের লোকেরা সাধারণত উচ্চ শিক্ষিত এবং সংস্কৃতিবান হয়, অন্যদিকে নিম্ন স্তরের লোকেরা সাধারণত কম শিক্ষিত এবং সংস্কৃতিতে পিছিয়ে থাকে।
9. সামাজিক নিয়ন্ত্রণ (Social Control): সামাজিক স্তরবিন্যাস সমাজে শৃঙ্খলা এবং নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে সাহায্য করে। উচ্চ স্তরের লোকেরা সাধারণত সমাজের নিয়ম-কানুন এবং মূল্যবোধ নির্ধারণ করে, অন্যদিকে নিম্ন স্তরের লোকেরা তা মেনে চলে।
10. সামাজিক সংঘাত (Social Conflict): সামাজিক স্তরবিন্যাসের কারণে সমাজে সংঘাতের সৃষ্টি হতে পারে। উচ্চ এবং নিম্ন স্তরের লোকেরা তাদের স্বার্থ এবং অধিকারের জন্য সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে পারে। এই সংঘাত সমাজের স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে পারে।
উপসংহার:
সামাজিক স্তরবিন্যাস সমাজের একটি অপরিহার্য এবং জটিল প্রক্রিয়া। এটি সমাজের সদস্যদের মধ্যে সম্পদ, ক্ষমতা, মর্যাদা এবং সুযোগ-সুবিধার অসম বণ্টন সৃষ্টি করে। তবে, এটি সমাজে শৃঙ্খলা এবং নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতেও সাহায্য করে। সামাজিক স্তরবিন্যাসের বৈশিষ্ট্যগুলি সমাজের গঠন এবং কার্যক্রমকে প্রভাবিত করে। তাই, সামাজিক স্তরবিন্যাসের প্রকৃতি এবং প্রভাব সম্পর্কে সচেতন হওয়া প্রয়োজন।