Political Science Minor Long Question Answers 2024-2025
এখানে প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর সিলেবাস অনুযায়ী সাজানো আছে
India's Foreign Policy in a Globalizing World
Course Code- POL-MI-T-3
UNIT-1 •ভারতের পররাষ্ট্রনীতি
****1) প্রশ্ন. ভারতীয় বিদেশ নীতি-র প্রধান নির্ধারকসমূহ আলোচনা করো। ৫
Kalyani University BA 3rd Semester Political Science Minor Long Question Answer (SAQ) Suggestion PDF টি পেতে.. আপনি ১১ টাকা পেমেন্ট করুন। পেমেন্টের পর এক সেকেন্ডের মধ্যে কাঙ্ক্ষিত সাজেশনটি পাবেন। ধন্যবাদ। টাকা টি পেমেন্ট করার জন্য নিচে PAY বাটনে ক্লিক করুন।
ভারতীয় বিদেশ নীতি একটি জটিল ও বহুমুখী নীতি, যা দেশের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও স্বার্থ রক্ষার উদ্দেশ্যে গৃহীত হয়। স্বাধীনতা লাভের পর থেকে, ভারত তার বিদেশ নীতিতে বিভিন্ন পরিবর্তন এনেছে এবং বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলেছে। ভারতীয় বিদেশ নীতি গঠনে কয়েকটি প্রধান নির্ধারক ভূমিকা পালন করে, যার মধ্যে অন্যতম হল:
১. ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট:
ভারতের বিদেশ নীতি নির্ধারণে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ব্রিটিশ শাসনের দীর্ঘকালীন প্রভাব ও ঔপনিবেশিক অভিজ্ঞতা ভারতের নীতিতে প্রতিফলিত হয়েছে। এছাড়া, স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় বিভিন্ন নেতার মতাদর্শ এবং চিন্তাধারাও বিদেশ নীতি গঠনে ভূমিকা রেখেছে।
২. ভৌগোলিক অবস্থান:
ভারতের ভৌগোলিক অবস্থানও বিদেশ নীতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ। ভারত একটি বৃহৎ উপমহাদেশীয় দেশ, যার পূর্বে বঙ্গোপসাগর, পশ্চিমে আরব সাগর এবং উত্তরে হিমালয় পর্বতমালা অবস্থিত। এই অবস্থান আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, নিরাপত্তা এবং আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্রে একটি কৌশলগত গুরুত্ব বহন করে।
৩. অর্থনৈতিক স্বার্থ:
ভারতের অর্থনৈতিক স্বার্থও বিদেশ নীতি নির্ধারণে মূল ভূমিকা পালন করে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ, বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ, প্রযুক্তি স্থানান্তর এবং বাণিজ্য সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য ভারত বিভিন্ন দেশের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক স্থাপন করে।
৪. রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ:
ভারতীয় বিদেশ নীতি নির্ধারণে দেশের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ একটি বড় ভূমিকা পালন করে। গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং মানবাধিকার রক্ষার নীতিগুলি বিদেশ নীতির মূল ভিত্তি হিসাবে বিবেচিত হয়। এছাড়া, ভারতের প্রাচীন সংস্কৃতি, সভ্যতা এবং বহুত্ববাদী সমাজব্যবস্থা বিদেশ নীতির অন্যতম প্রধান নির্ধারক।
৫. নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা:
নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত চিন্তাভাবনাও ভারতের বিদেশ নীতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ। পার্শ্ববর্তী দেশগুলির সঙ্গে সীমান্ত বিরোধ, আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা এবং সন্ত্রাসবাদের হুমকি ভারতের নিরাপত্তা নীতিকে প্রভাবিত করে। তাই, প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং কৌশলগত জোট গঠন ভারতের বিদেশ নীতির অন্যতম প্রধান লক্ষ্য।
৬. আন্তর্জাতিক সংস্থা ও জোট:
ভারত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও জোটের সদস্য হওয়ার কারণে, তাদের নীতিও ভারতের বিদেশ নীতিতে প্রতিফলিত হয়। জাতিসংঘ, ব্রিকস, সার্ক, এবং অন্যান্য আঞ্চলিক সংস্থাগুলির সঙ্গে সহযোগিতা ও অংশগ্রহণের মাধ্যমে ভারত তার আন্তর্জাতিক অবস্থান ও প্রভাব বৃদ্ধি করে।
৭. বহির্দেশীয় শক্তির প্রভাব:
বিশ্বের প্রধান শক্তিগুলির সঙ্গে ভারতের সম্পর্কও বিদেশ নীতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক স্থাপন এবং ভারসাম্য বজায় রাখা ভারতের বৈদেশিক নীতির একটি মূল দিক।
৮. উন্নয়ন ও মানবিক সহযোগিতা:
উন্নয়ন ও মানবিক সহযোগিতার ক্ষেত্রেও ভারতের বিদেশ নীতি গুরুত্ব দেয়। উন্নয়নশীল দেশগুলির সঙ্গে সহযোগিতা, উন্নয়ন প্রকল্পে অংশগ্রহণ এবং মানবিক সাহায্য প্রদান করে ভারত আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে একটি পজিটিভ ইমেজ বজায় রাখতে চায়।
৯. পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন:
পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টিও ভারতীয় বিদেশ নীতিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। আন্তর্জাতিক পরিবেশ সংক্রান্ত চুক্তি ও উদ্যোগে অংশগ্রহণ, নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় ভারতের কার্যক্রম বিদেশ নীতিতে গুরুত্ব পেয়েছে।
উপসংহার:
ভারতীয় বিদেশ নীতি একটি বহুমাত্রিক ও সমন্বিত প্রক্রিয়া, যা বিভিন্ন নির্ধারকের মাধ্যমে গঠিত হয়। ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট, ভৌগোলিক অবস্থান, অর্থনৈতিক স্বার্থ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ, নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও জোট, বহির্দেশীয় শক্তির প্রভাব, উন্নয়ন ও মানবিক সহযোগিতা, এবং পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন - এসব নির্ধারকই ভারতের বিদেশ নীতির প্রধান উপাদান। এই নির্ধারকগুলির মাধ্যমে ভারত তার আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও স্বার্থ রক্ষা করে এবং বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
****2) প্রশ্ন. ভারত-পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করো। ৫
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক একটি জটিল ও বহুস্তর বিশিষ্ট বিষয়, যা দীর্ঘ ইতিহাস ও বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষিতে গড়ে উঠেছে। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ উপনিবেশ থেকে মুক্ত হয়ে দুই দেশ পৃথক রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। তৎকালীন সময় থেকে শুরু হওয়া এই সম্পর্কের ভিত্তি ছিল বিরোধ ও বিভাজন, যা আজও বিদ্যমান। এই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মূল দিকগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো।
ইতিহাস ও প্রেক্ষাপট:
ভারত ও পাকিস্তানের সম্পর্কের সূচনা হয় ১৯৪৭ সালের ভারত বিভাজনের মাধ্যমে। বিভাজনের সময় ধর্মের ভিত্তিতে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠিত হয়—হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারত এবং মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ পাকিস্তান। এই বিভাজনের ফলে সীমান্তে ঘটে যাওয়া সহিংসতা ও স্থানান্তরের ঘটনা দুই দেশের মধ্যে তিক্ততার সৃষ্টি করে।
কাশ্মীর সমস্যা:
ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের অন্যতম প্রধান সমস্যা হলো কাশ্মীর। ১৯৪৭ সাল থেকেই কাশ্মীর নিয়ে দুই দেশের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। কাশ্মীরের সিংহভাগ অংশ বর্তমানে ভারতের নিয়ন্ত্রণে, তবে পাকিস্তানও এই অঞ্চলের একটি অংশ দাবি করে। কাশ্মীর ইস্যুতে দুই দেশ তিনবার যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে—১৯৪৭, ১৯৬৫, এবং ১৯৯৯ সালে। এছাড়াও, নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর নিয়মিতভাবে সংঘর্ষ ও গোলাগুলি ঘটে থাকে, যা এই সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলেছে।
রাজনৈতিক সম্পর্ক:
রাজনৈতিক সম্পর্কের দিক থেকে, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধপূর্ণ অবস্থা বিরাজ করছে। যদিও বিভিন্ন সময়ে উভয় দেশের নেতারা আলোচনা ও সমঝোতার চেষ্টা করেছেন, তবে সেই প্রচেষ্টা অধিকাংশ সময়ই ব্যর্থ হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০০১ সালের আগ্রা সম্মেলন এবং ২০০৪ সালের ইসলামাবাদ সম্মেলন। তাছাড়া, উরি হামলা (২০১৬) এবং পুলওয়ামা হামলা (২০১৯) পরবর্তীতে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও তিক্ত হয়েছে।
বাণিজ্যিক সম্পর্ক:
দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক তেমন উন্নত নয়। দুই দেশই একে অপরের ওপর বিভিন্ন বিধিনিষেধ আরোপ করেছে, যা বাণিজ্যিক কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করেছে। ২০১৯ সালে পুলওয়ামা হামলার পর ভারত পাকিস্তান থেকে আমদানি হওয়া সমস্ত পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়িয়ে দেয়। যদিও বিভিন্ন সময়ে বাণিজ্যিক সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য আলোচনা হয়েছে, তবে তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি।
সন্ত্রাসবাদ:
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্কের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো সন্ত্রাসবাদ। ভারত বরাবরই পাকিস্তানকে সন্ত্রাসবাদে মদত দেওয়ার অভিযোগ করে আসছে। মুম্বাই হামলা (২০০৮) এর পর থেকে এই অভিযোগ আরও তীব্র হয়। অন্যদিকে, পাকিস্তান ভারতের অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের সঙ্গে সম্পর্ক থাকার অভিযোগ করে। এই বিষয়টি দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ানোর অন্যতম কারণ।
সাংস্কৃতিক সম্পর্ক:
সাংস্কৃতিক দিক থেকে, ভারত ও পাকিস্তানের জনগণের মধ্যে অনেক মিল রয়েছে। উভয় দেশের সংস্কৃতি, ভাষা, সঙ্গীত, এবং খাদ্যাভ্যাসে অনেক মিল পাওয়া যায়। যদিও দুই দেশের মধ্যে রাজনৈতিক ও সামরিক উত্তেজনা বিরাজমান, তবে সাধারণ জনগণের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময় ও সম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহ আছে। উদাহরণস্বরূপ, পাকিস্তানি টেলিভিশন ধারাবাহিক ও সঙ্গীত ভারতীয় দর্শকদের মধ্যে জনপ্রিয় এবং ভারতীয় চলচ্চিত্র পাকিস্তানেও সমান জনপ্রিয়।
উপসংহার:
ভারত-পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক একটি জটিল ও বহুমাত্রিক বিষয়। ইতিহাস, কাশ্মীর সমস্যা, রাজনৈতিক বিরোধ, বাণিজ্যিক সম্পর্ক, সন্ত্রাসবাদ, এবং সাংস্কৃতিক বিনিময়—সবগুলোই এই সম্পর্কের বিভিন্ন দিককে প্রভাবিত করে। ভবিষ্যতে এই সম্পর্ক কেমন হবে তা অনেকাংশে নির্ভর করবে দুই দেশের নেতাদের রাজনৈতিক সদিচ্ছা, আলোচনা, এবং শান্তি প্রক্রিয়ার ওপর। দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা কমিয়ে আনার জন্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ও আলোচনার গুরুত্ব অপরিসীম। তবুও, সাধারণ জনগণের মধ্যে শান্তি ও সম্প্রীতির আশা সবসময় বিদ্যমান থাকবে। একমাত্র সৌহার্দ্য ও সমঝোতার মাধ্যমেই এই সম্পর্কের উন্নতি সম্ভব।
****3) প্রশ্ন. সাম্প্রতিক গতি প্রকৃতির উল্লেখসহ ভারতের বিদেশনীতির বৈশিষ্ট্য সমূহ আলোচনা কর। ১০
ভারতের বিদেশনীতি দেশটির অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভারতের বিদেশনীতি চিরকাল পরিবর্তনশীল এবং তাৎক্ষণিক পরিস্থিতির উপর নির্ভরশীল। সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের বিদেশনীতির গতি প্রকৃতি
ভারতের বিদেশনীতির বৈশিষ্ট্যসমূহ:
ভারতের বিদেশনীতি দেশটির অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভারতের বিদেশনীতি চিরকাল পরিবর্তনশীল এবং তাৎক্ষণিক পরিস্থিতির উপর নির্ভরশীল। সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের বিদেশনীতির গতি প্রকৃতি
১. নিরপেক্ষতা ও অ-সংযুক্তি (Non-Alignment):
ভারতের স্বাধীনতার পর থেকে বিদেশনীতির একটি মূল বৈশিষ্ট্য ছিল নিরপেক্ষতা ও অ-সংযুক্তি। জওহরলাল নেহরুর নেতৃত্বে ভারত কোন বড় শক্তির সাথে সরাসরি জড়িয়ে পড়তে চায়নি। এই নীতির মাধ্যমে ভারত নিজের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে এবং স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে চেয়েছিল।
২. বহুপাক্ষিকতা (Multilateralism):
ভারত বহুপাক্ষিক সম্পর্ক স্থাপনে বিশ্বাসী। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা যেমন জাতিসংঘ, ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশন, এবং ব্রিকস এর সাথে যুক্ত থেকে ভারত বিশ্ব রাজনীতিতে নিজের অবস্থানকে সুদৃঢ় করার চেষ্টা করে।
৩. আঞ্চলিক সহযোগিতা (Regional Cooperation):
ভারত আঞ্চলিক সহযোগিতায় বিশেষ গুরুত্ব দেয়। সার্ক, বিমসটেক, এবং অন্যান্য আঞ্চলিক সংস্থার মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করে ভারত। এ ধরনের সহযোগিতা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়ক হয়।
৪. অর্থনৈতিক কূটনীতি (Economic Diplomacy):
ভারতের বিদেশনীতির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো অর্থনৈতিক কূটনীতি। বৈদেশিক বাণিজ্য, বিনিয়োগ, এবং প্রযুক্তি স্থানান্তরের মাধ্যমে ভারত তার অর্থনৈতিক স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেয়। সাম্প্রতিক সময়ে, "মেক ইন ইন্ডিয়া" এবং "আত্মনির্ভর ভারত" কর্মসূচির মাধ্যমে ভারত বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছে।
৫. প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সহযোগিতা (Defense and Security Cooperation):
ভারতের বিদেশনীতিতে প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সহযোগিতা একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে। আমেরিকা, রাশিয়া, ইসরায়েল, এবং ফ্রান্সের মতো দেশগুলির সাথে প্রতিরক্ষা চুক্তি এবং সহযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ভারত তার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালী করছে।
সাম্প্রতিক গতি প্রকৃতি:
১. চীন-ভারত সম্পর্ক (China-India Relations):
সাম্প্রতিককালে চীন ও ভারতের মধ্যে সীমান্ত বিরোধ একটি বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০২০ সালের গলওয়ান উপত্যকায় সংঘর্ষের পর থেকে দুই দেশের সম্পর্ক বেশ উত্তেজনাপূর্ণ। ভারত চীনের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নিয়েছে এবং তার উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্ত রক্ষায় বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে।
২. ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল (Indo-Pacific Strategy):
ভারতের বিদেশনীতিতে ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করেছে। এই কৌশলের মাধ্যমে ভারত আমেরিকা, জাপান, এবং অস্ট্রেলিয়ার সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন করে এবং চীনের প্রভাবকে কমানোর চেষ্টা করে। কোয়াড নামে পরিচিত এই জোটটি আঞ্চলিক নিরাপত্তা বজায় রাখতে সহায়ক।
৩. প্রতিবেশী প্রথম নীতি (Neighbourhood First Policy):
ভারতের বিদেশনীতিতে প্রতিবেশী প্রথম নীতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই নীতির মাধ্যমে ভারত তার প্রতিবেশী দেশগুলির সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন করতে চায়। নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ভুটান, এবং বাংলাদেশের সাথে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, এবং নিরাপত্তা সহযোগিতা বাড়ানোর চেষ্টা করছে ভারত।
৪. জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ (Climate Change and Environment):
জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ রক্ষায় ভারত সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। প্যারিস জলবায়ু চুক্তির অন্যতম সদস্য হিসেবে ভারত কার্বন নির্গমন কমানোর লক্ষ্যে কাজ করছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আন্তর্জাতিক মঞ্চে পরিবেশ রক্ষায় বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন।
৫. টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (Sustainable Development Goals):
ভারত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যে (SDGs) গুরুত্ব দেয়। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, এবং দারিদ্র্য বিমোচনে ভারতের বিদেশনীতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকে। আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে ভারত এই লক্ষ্যগুলি অর্জনে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
উপসংহার:
ভারতের বিদেশনীতি পরিবর্তনশীল এবং তাৎক্ষণিক পরিস্থিতির উপর নির্ভরশীল। চীন-ভারত সম্পর্ক, ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল, প্রতিবেশী প্রথম নীতি, জলবায়ু পরিবর্তন, এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য এই নীতির সাম্প্রতিক গতি প্রকৃতি নির্দেশ করে। বহুপাক্ষিকতা, অর্থনৈতিক কূটনীতি, এবং প্রতিরক্ষা সহযোগিতা ভারতের বিদেশনীতির মূল বৈশিষ্ট্য। ভারত আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তার অবস্থানকে সুদৃঢ় করার জন্য একাধিক নীতি এবং কৌশল গ্রহণ করেছে।
****4) প্রশ্ন. ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে জল বণ্টন বিষয়ে দ্বিপাক্ষিক স্বত্ব সম্পর্কে আলোকপাত কর। 5
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে জল বণ্টন একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং জটিল বিষয়, যা উভয় দেশের জন্য পরিবেশগত, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক ক্ষেত্রে গভীর প্রভাব ফেলে। এই প্রসঙ্গে দুই দেশের মধ্যে বিভিন্ন নদীর পানি বণ্টনের সমঝোতা এবং চুক্তি নিয়ে আলোচনা করা হলো।
তিস্তা নদীর জলবণ্টন:
তিস্তা নদীর জলবণ্টন নিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা চলেছে। তিস্তা নদী ভারতের সিকিম থেকে উৎপত্তি হয়ে পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এই নদীর পানি উভয় দেশের কৃষি ও জীববৈচিত্র্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে, বর্ষাকালে নদীটিতে প্রচুর পানি থাকলেও শুষ্ক মৌসুমে পানির পরিমাণ কমে যায়, যার ফলে উভয় দেশেই সেচ কার্যক্রমে সমস্যা দেখা দেয়।
১৯৮৩ সালে দুই দেশের মধ্যে একটি প্রাথমিক সমঝোতা হয় যেখানে তিস্তার পানির ৩৬ শতাংশ বাংলাদেশের এবং ৩৯ শতাংশ ভারতের জন্য নির্ধারণ করা হয়, বাকি ২৫ শতাংশ পানির ব্যবস্থা অন্যান্য সময়ের জন্য রাখা হয়। তবে, এই সমঝোতা চূড়ান্ত চুক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়নি এবং এখনো আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে।
গঙ্গা নদীর জলবণ্টন চুক্তি:
গঙ্গা নদীর জলবণ্টন নিয়ে ১৯৯৬ সালে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি ঐতিহাসিক চুক্তি হয়। এই চুক্তির মাধ্যমে ফারাক্কা বাঁধের মাধ্যমে গঙ্গার পানির বণ্টন নির্ধারিত হয়। চুক্তিটি অনুযায়ী, শুষ্ক মৌসুমে গঙ্গার পানি বাংলাদেশের জন্য ৩৫,০০০ কিউসেক এবং ভারতের জন্য ৪০,০০০ কিউসেক নির্ধারণ করা হয়।
এই চুক্তির ফলে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে সেচ ও কৃষিকাজে উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়। পাশাপাশি, এটি দুই দেশের মধ্যে বিশ্বাস ও সহযোগিতার পরিবেশ তৈরি করে।
দ্বিপাক্ষিক আলোচনা ও সহযোগিতা:
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে জলবণ্টন বিষয়ে আলোচনার জন্য বিভিন্ন পর্যায়ে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক ও যৌথ কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই বৈঠকগুলিতে উভয় দেশের বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী ও পরিবেশবিদরা অংশগ্রহণ করে এবং পানির ন্যায্য বণ্টনের উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন।
২০১০ সালে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীদের মধ্যে একটি যৌথ বিবৃতি দেওয়া হয় যেখানে তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য বণ্টনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়। এরপর থেকে, দুই দেশের মধ্যে বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা চলমান রয়েছে।
চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যত:
তিস্তা নদীর পানি বণ্টনের চুক্তি এখনো চূড়ান্ত হয়নি, যার ফলে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের কৃষকরা শুষ্ক মৌসুমে পানির সংকটে পড়ে। এছাড়া, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যেও তিস্তার পানির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তাই, উভয় দেশের জন্য একটি টেকসই সমাধান খুঁজে বের করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
অন্যদিকে, জলবায়ু পরিবর্তন ও বৃষ্টিপাতের পরিবর্তনশীলতা নদীর পানির প্রবাহে প্রভাব ফেলছে, যা দুই দেশের জন্যই নতুন চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করছে। তাই, জলবণ্টন চুক্তিগুলি নতুন তথ্য ও পরিবেশগত পরিবর্তন বিবেচনা করে আপডেট করা প্রয়োজন।
উপসংহার:
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে জলবণ্টন বিষয়ে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সংবেদনশীল। দুই দেশের মধ্যে আলোচনা ও সহযোগিতার মাধ্যমে একটি টেকসই ও ন্যায্য সমাধান খুঁজে বের করা অপরিহার্য। উভয় দেশের জনগণের স্বার্থ রক্ষা করার জন্য বিজ্ঞানসম্মত ও ন্যায্য পদ্ধতিতে পানির বণ্টন নিশ্চিত করা জরুরি।
এই প্রসঙ্গে, দুই দেশের মধ্যে বিশ্বাস ও সহযোগিতার পরিবেশ বজায় রেখে জলবণ্টন বিষয়ে কার্যকর সমঝোতা করা গেলে উভয় দেশের জন্যই লাভজনক হবে। এটি শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়ন নয়, বরং পরিবেশগত সুরক্ষার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
UNIT-2 •USA এবং USSR/রাশিয়ার সাথে ভারতের সম্পর্ক
****4) প্রশ্ন.ভারতের বিদেশনীতিতে ভারত-মার্কিন সম্পর্কের গতিপ্রকৃতি আলোচনা কর। ১০
ভারতের বিদেশনীতিতে ভারত-মার্কিন সম্পর্কের গতিপ্রকৃতি:
ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্কের ইতিহাস দীর্ঘ এবং জটিল। উভয় দেশই গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী হলেও তাদের সম্পর্ক সবসময় মসৃণ ছিল না। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, বিশেষ করে ২১শ শতাব্দীতে, ভারত-মার্কিন সম্পর্ক উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হয়েছে। এই নিবন্ধে, আমরা ভারতের বিদেশনীতিতে ভারত-মার্কিন সম্পর্কের গতিপ্রকৃতি বিশ্লেষণ করবো।
সম্পর্কের শুরুর দিনগুলো:
ভারত ১৯৪৭ সালে স্বাধীন হওয়ার পর থেকে প্রথম কয়েক দশক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি নিরপেক্ষ অবস্থান গ্রহণ করেছিল। ঠান্ডা যুদ্ধের সময়, ভারত তার নিজস্ব নীতিতে বিশ্বাসী ছিল এবং সাধারণত তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্র তখন সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায়, ভারত-মার্কিন সম্পর্ক সেই সময়ে খুব একটা ঘনিষ্ঠ ছিল না।
ঠান্ডা যুদ্ধের পরে পরিবর্তন:
ঠান্ডা যুদ্ধের সমাপ্তি এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর, ভারতের জন্য নতুন কৌশলগত বাস্তবতা তৈরি হয়। ১৯৯১ সালে ভারতের অর্থনৈতিক সংস্কার এবং উদারীকরণের পর, ভারতের জন্য নতুন আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপনের দরজা খুলে যায়। এর ফলে, যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের সুযোগ তৈরি হয়।
৯/১১ এবং সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতা:
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলার পরে, ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে ঘনিষ্ঠ সহযোগী হয়ে ওঠে। উভয় দেশই সন্ত্রাসবাদের হুমকির মুখে পড়ে এবং এই সাধারণ শত্রুর বিরুদ্ধে একসঙ্গে কাজ করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে।
পরমাণু সহযোগিতা:
২০০৫ সালে ভারত-মার্কিন পরমাণু চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যা উভয় দেশের মধ্যে কৌশলগত অংশীদারিত্বকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যায়। এই চুক্তির মাধ্যমে ভারত পরমাণু শক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায় এবং এর ফলে, ভারতের জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়। এটি ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক যা উভয় দেশের মধ্যে গভীর আস্থা ও সহযোগিতার প্রতীক।
প্রতিরক্ষা ও কৌশলগত অংশীদারিত্ব:
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৬ সালে, ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্র প্রতিরক্ষা সহযোগিতার ক্ষেত্রে 'মেজর ডিফেন্স পার্টনার' হিসেবে ঘোষণা করে। এই চুক্তির মাধ্যমে উভয় দেশই উচ্চতর সামরিক প্রযুক্তি এবং প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম আদান-প্রদান করতে সক্ষম হয়।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক:
ভারত-মার্কিন বাণিজ্যিক সম্পর্কও গত কয়েক বছরে দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৯ সালে, উভয় দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য প্রায় ১৪৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার এবং ভারতের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি বাজার।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সহযোগিতা:
ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্র বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, এবং উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে ঘনিষ্ঠভাবে সহযোগিতা করছে। তথ্যপ্রযুক্তি, মহাকাশ গবেষণা, এবং স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে উভয় দেশের মধ্যে একাধিক যৌথ উদ্যোগ রয়েছে। বিশেষ করে কোভিড-১৯ মহামারীর সময়, উভয় দেশই ভ্যাকসিন এবং চিকিৎসা গবেষণার ক্ষেত্রে একে অপরকে সহযোগিতা করেছে।
শিক্ষাগত এবং সাংস্কৃতিক সম্পর্ক:
ভারত-মার্কিন শিক্ষাগত এবং সাংস্কৃতিক সম্পর্কও দৃঢ়। প্রতি বছর হাজার হাজার ভারতীয় শিক্ষার্থী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষার জন্য যায়। এই শিক্ষার্থীরা কেবল উচ্চশিক্ষা অর্জন করে না, বরং দুই দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক এবং বুদ্ধিবৃত্তিক বিনিময়ের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ভবিষ্যতের দৃষ্টিভঙ্গি:
ভারত-মার্কিন সম্পর্ক ভবিষ্যতে আরও গভীর এবং বিস্তৃত হতে পারে। উভয় দেশই ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে আগ্রহী। এছাড়াও, জলবায়ু পরিবর্তন, সাইবার নিরাপত্তা, এবং মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে যৌথ উদ্যোগ উভয় দেশের মধ্যে সম্পর্ককে আরও মজবুত করতে পারে।
উপসংহার:
ভারত-মার্কিন সম্পর্কের গতিপ্রকৃতি গত কয়েক দশকে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেছে। উভয় দেশের কৌশলগত, অর্থনৈতিক, এবং সাংস্কৃতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ভবিষ্যতে এই সম্পর্ক আরও গভীর এবং বিস্তৃত হবে বলে আশা করা যায়। ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্রের এই সম্পর্ক শুধু দুটি দেশের জন্যই নয়, বরং পুরো বিশ্বের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ।
****5) প্রশ্ন.সাম্প্রতিক প্রবণতার নিরিখে ভারতবর্ষ ও রাশিয়ার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আলোচনা কর। ১০
সাম্প্রতিক প্রবণতার নিরিখে ভারতবর্ষ ও রাশিয়ার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক:
ভারতবর্ষ ও রাশিয়ার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ইতিহাস, ভৌগোলিক সন্নিকটতা, এবং রাজনৈতিক স্বার্থের মিশেলে গড়ে উঠেছে। দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের মূলভিত্তি হলো সহযোগিতা, বিশেষত প্রতিরক্ষা ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই সম্পর্ক আরও মজবুত হয়েছে বিভিন্ন প্রবণতার মাধ্যমে। এই নিবন্ধে আমরা সাম্প্রতিক প্রবণতার আলোকে ভারত-রাশিয়া দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিস্তারিত বিশ্লেষণ করব।
প্রতিরক্ষা সহযোগিতা:
ভারত ও রাশিয়া দীর্ঘদিন ধরে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা বজায় রেখেছে। সাম্প্রতিক সময়ে, দুই দেশের মধ্যে বিভিন্ন প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, রাশিয়া থেকে ভারত এস-৪০০ ট্রাইয়াম্ফ বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সরবরাহ চুক্তি করেছে। এটি ভারতের প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। এছাড়া, যৌথ সামরিক মহড়া এবং প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি হস্তান্তরও দুই দেশের সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করেছে।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক:
অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে সম্পর্ক ক্রমবর্ধমান। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক লেনদেনের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারত রাশিয়া থেকে তেল, গ্যাস, এবং কয়লা আমদানি করে থাকে, যা তার জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অন্যদিকে, রাশিয়া ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি ও ওষুধ শিল্পে বিনিয়োগ করে আসছে। দুই দেশই বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে একসঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে।
পারমাণবিক শক্তি:
পারমাণবিক শক্তি ক্ষেত্রেও ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে দীর্ঘমেয়াদী সহযোগিতা রয়েছে। রাশিয়ার সহায়তায় ভারতের কুদানকুলাম পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প সফলভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে। এছাড়া, দুই দেশ পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের ক্ষেত্রে সহযোগিতা আরও বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।
রাজনৈতিক সম্পর্ক:
ভারত ও রাশিয়া আন্তর্জাতিক মঞ্চে একে অপরকে সমর্থন করে আসছে। উভয় দেশই ব্রিকস, শাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও), এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থায় ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে। সাম্প্রতিক সময়ে, রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের প্রেক্ষিতে ভারত একটি নিরপেক্ষ অবস্থান গ্রহণ করেছে, যা রাশিয়ার প্রতি ভারতের সমর্থন এবং কৌশলগত স্বার্থের প্রতিফলন।
সাংস্কৃতিক ও শিক্ষামূলক সম্পর্ক:
ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময়ও সম্পর্ককে দৃঢ় করেছে। দুই দেশের মধ্যে শিক্ষামূলক বিনিময় কর্মসূচি এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জনগণের মধ্যে সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হয়েছে। রাশিয়ার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভারতীয় শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ রয়েছে, যা দুই দেশের জনগণের মধ্যে সাংস্কৃতিক সম্প্রীতির সেতুবন্ধন সৃষ্টি করেছে।
ভবিষ্যৎ প্রবণতা:
ভারত-রাশিয়া সম্পর্কের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা উজ্জ্বল। দুই দেশই বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। বিশেষ করে, প্রতিরক্ষা, প্রযুক্তি, এবং জ্বালানি ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য নতুন চুক্তি ও প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে। দুই দেশের নেতৃত্বও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও মজবুত করার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
উপসংহার:
ভারত ও রাশিয়ার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক সাম্প্রতিক প্রবণতার নিরিখে আরও মজবুত এবং দৃঢ় হয়েছে। প্রতিরক্ষা, অর্থনীতি, পারমাণবিক শক্তি, রাজনৈতিক, এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সহযোগিতার মাধ্যমে এই সম্পর্ক ভবিষ্যতে আরও বিকশিত হবে। বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ প্রেক্ষাপটে, ভারত-রাশিয়া সম্পর্ক আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাস এবং সহযোগিতার ভিত্তিতে গড়ে ওঠা এই সম্পর্ক শুধু দ্বিপাক্ষিক পর্যায়ে নয়, বরং আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায়ও বিশেষ অবদান রাখবে।
****6) প্রশ্ন.আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ নিয়ে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ। ৫/১০
ভূমিকা:
আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ হলো একটি গ্লোবাল সমস্যার নাম, যা বর্তমান বিশ্বে বড় ধরনের প্রভাব ফেলছে। এটি শুধুমাত্র কোনো নির্দিষ্ট দেশ বা অঞ্চলের সমস্যা নয়, বরং বিশ্বব্যাপী শান্তি, নিরাপত্তা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য একটি গুরুতর হুমকি। বিভিন্ন রাজনৈতিক, ধর্মীয়, এবং আদর্শগত উদ্দেশ্য নিয়ে পরিচালিত সন্ত্রাসবাদ কার্যক্রমগুলো বিশ্বে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করছে।
সন্ত্রাসবাদের সংজ্ঞা:
সন্ত্রাসবাদ হলো এমন একটি কর্মকাণ্ড, যা হিংস্রতা বা হুমকির মাধ্যমে নির্দিষ্ট রাজনৈতিক, ধর্মীয় বা আদর্শগত লক্ষ্য অর্জনের চেষ্টা করে। এটি সাধারণত নিরীহ মানুষের ওপর হামলা, ভীতি প্রদর্শন এবং আতঙ্ক সৃষ্টি করার মাধ্যমে কার্যকর হয়। আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ হলো যখন এই সন্ত্রাসী কার্যক্রম আন্তর্জাতিক সীমান্ত অতিক্রম করে এবং বিভিন্ন দেশের উপর প্রভাব ফেলে।
আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের কারণ:
আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের মূল কারণগুলো বিভিন্ন, যা নিম্নরূপে আলোচনা করা হলো: 1. রাজনৈতিক কারণ: অনেক সময় সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলো রাজনৈতিক পরিবর্তন আনার উদ্দেশ্যে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালায়। নির্দিষ্ট শাসনব্যবস্থা বা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করার জন্য তারা এই পথ বেছে নেয়।
2. ধর্মীয় উগ্রবাদ: ধর্মীয় বিশ্বাসকে বিকৃত করে কিছু উগ্রবাদী গোষ্ঠী সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করে। তাদের লক্ষ্য হলো ধর্মীয় শাসন প্রতিষ্ঠা বা অন্য ধর্মাবলম্বীদের ওপর আক্রমণ করা।
3. আর্থ-সামাজিক বৈষম্য: দরিদ্রতা, বেকারত্ব, এবং শিক্ষার অভাবও সন্ত্রাসবাদের মূল কারণ হতে পারে। অর্থনৈতিক অসমতা এবং সামাজিক অবিচার মানুষের মধ্যে হতাশা এবং ক্ষোভের সৃষ্টি করে, যা সন্ত্রাসবাদে রূপান্তরিত হতে পারে।
4. আদর্শগত পার্থক্য: বিভিন্ন আদর্শগত বিশ্বাসের পার্থক্যের কারণে কিছু গোষ্ঠী সহিংস কার্যক্রমে লিপ্ত হয়। যেমন, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, বা জাতীয়তাবাদের মতাদর্শ নিয়ে বিরোধিতা।
সন্ত্রাসবাদের প্রভাব:
আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের প্রভাব বিভিন্ন স্তরে পড়ে, যা নিম্নরূপে বর্ণনা করা হলো:
1. মানবাধিকার লঙ্ঘন: সন্ত্রাসবাদী হামলায় অসংখ্য নিরীহ মানুষ প্রাণ হারায় এবং আহত হয়। এটি সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি করে।
2. অর্থনৈতিক ক্ষতি: সন্ত্রাসী হামলা অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নষ্ট করে। পর্যটন, ব্যবসা এবং বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যা দেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলে।
3. রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা: সন্ত্রাসবাদী হামলা দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করে। সরকারকে সন্ত্রাস মোকাবেলায় অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়, যা রাজনৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
4. আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অবনতি: সন্ত্রাসবাদ আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও সমস্যা সৃষ্টি করে। এক দেশ অপর দেশের উপর সন্ত্রাসী হামলার অভিযোগ তুলে, যা দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটায়।
সন্ত্রাসবাদের প্রতিরোধ:
সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে, যা নিম্নরূপে আলোচনা করা হলো:
1. বুদ্ধিমত্তা সংগ্রহ ও শেয়ারিং: বিভিন্ন দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে এবং সন্ত্রাসী কার্যক্রম সম্পর্কে তথ্য আদান-প্রদান করতে হবে।
2. অর্থায়ন বন্ধ করা: সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলোর অর্থায়ন বন্ধ করতে হবে। এর জন্য ব্যাংকিং ব্যবস্থা এবং অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নজরদারিতে রাখতে হবে।
3. শিক্ষা ও সচেতনতা: সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে সমাজকে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সংগঠিত করতে হবে।
4. রাজনৈতিক সমাধান: বিভিন্ন রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানে রাজনৈতিক সংলাপ এবং আলোচনার মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদের মূল কারণগুলো দূর করতে হবে।
উপসংহার:
আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ একটি জটিল এবং বহুমুখী সমস্যা, যা সমাধানে বিশ্বব্যাপী সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, এবং সামাজিক ক্ষেত্রগুলোতে সন্ত্রাসবাদের মূল কারণগুলো চিহ্নিত করে এবং সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে আমরা এই সমস্যার সমাধান করতে পারি। সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের একসঙ্গে কাজ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যাতে আমরা একটি নিরাপদ এবং শান্তিপূর্ণ বিশ্ব গড়ে তুলতে পারি।
UNIT-3 •চীনের সাথে ভারতের সম্পর্ক
****7) প্রশ্ন.সাম্প্রতিক আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ইন্দো-টীন সম্পর্ক পর্যালোচনা কর। ১০
ভারত ও চীন, দুই বৃহত্তম অর্থনীতির শক্তিশালী দেশ। এদের মধ্যে সম্পর্ক নানা মাত্রায় পরিবর্তন হয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, বিশেষ করে ২০২০ সাল থেকে ইন্দো-চীন সম্পর্কের মধ্যে বিভিন্ন উত্থান-পতন লক্ষ্য করা গেছে। এই প্রবন্ধে সাম্প্রতিক সময়ের ইন্দো-চীন সম্পর্কের প্রধান দিকগুলো পর্যালোচনা করা হবে।
১. সীমান্ত সমস্যা ও গালওয়ান সংঘর্ষ:
২০২০ সালের জুন মাসে গালওয়ান উপত্যকায় ভারত ও চীনের মধ্যে সশস্ত্র সংঘর্ষ ঘটে, যা দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী সীমান্ত বিরোধকে আরও বাড়িয়ে তোলে। এই সংঘর্ষে উভয় পক্ষেরই সেনা হতাহত হয়, যা দুই দেশের মধ্যে তীব্র উত্তেজনার সৃষ্টি করে। এই ঘটনার পর থেকে উভয় দেশই সীমান্ত এলাকায় তাদের সামরিক উপস্থিতি বাড়িয়েছে।
২. অর্থনৈতিক সম্পর্ক:
যদিও রাজনৈতিক ও সামরিক ক্ষেত্রে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে, ইন্দো-চীন অর্থনৈতিক সম্পর্ক এখনও গুরুত্বপূর্ণ। চীন ভারতের অন্যতম বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার। ভারত চীনের কাছ থেকে প্রচুর পরিমাণে পণ্য আমদানি করে, বিশেষ করে ইলেকট্রনিকস ও মেশিনারি। তবে, সাম্প্রতিক সময়ে ভারত চীনের বিরুদ্ধে বাণিজ্য বৈষম্য দূর করার উদ্যোগ নিয়েছে এবং দেশীয় উৎপাদন বাড়ানোর জন্য 'মেক ইন ইন্ডিয়া' কর্মসূচি জোরদার করেছে।
৩. কূটনৈতিক পদক্ষেপ:
সীমান্ত সমস্যা ও অন্যান্য ইস্যু নিয়ে আলোচনা ও সমাধানের লক্ষ্যে উভয় দেশ কূটনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বিভিন্ন উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক ও আলোচনা হয়েছে যাতে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা কমানো যায়। তবে, বাস্তবিক সমাধান এখনও দূরে।
৪. আঞ্চলিক প্রভাব ও ভূ-রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা:
ভারত ও চীন উভয়ই এশিয়ার দুটি প্রধান শক্তি। উভয় দেশই তাদের আঞ্চলিক প্রভাব বাড়ানোর চেষ্টা করছে। চীন 'বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ' (BRI) এর মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করার চেষ্টা করছে, যেখানে ভারত তার প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে আঞ্চলিক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চায়।
৫. প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা:
সীমান্ত এলাকায় সংঘর্ষের পর থেকে ভারত তার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালী করেছে। চীনও তার সামরিক শক্তি বাড়িয়েছে এবং আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াচ্ছে। উভয় দেশই আধুনিক যুদ্ধ সরঞ্জাম ও প্রযুক্তি উন্নয়নের জন্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
৬. প্রভাব ও মিত্রতা:
ভারত ও চীন উভয়ই বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও ফোরামের সদস্য। এই দুই দেশই বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের মতামত প্রকাশ করে থাকে। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভারতের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রতা চীনের সঙ্গে উত্তেজনা বাড়িয়েছে। অন্যদিকে, চীন রাশিয়া ও পাকিস্তানের সঙ্গে তার সম্পর্ক মজবুত করছে।
৭. ভবিষ্যতের সম্ভাবনা:
ইন্দো-চীন সম্পর্ক ভবিষ্যতে কেমন হবে তা বলা মুশকিল। উভয় দেশই তাদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে। তবে, এই সম্পর্কের উন্নতি বা অবনতির উপর নির্ভর করবে উভয় দেশের নেতৃত্বের রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও কূটনৈতিক তৎপরতার উপর।
সাম্প্রতিক সময়ের ইন্দো-চীন সম্পর্ক পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, উভয় দেশের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে উত্তেজনা ও সহযোগিতা দুইই রয়েছে। সীমান্ত সমস্যা ও ভূ-রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার কারণে সম্পর্কের মধ্যে উত্তেজনা রয়েছে, কিন্তু অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক ক্ষেত্রেও সহযোগিতা বিদ্যমান। ভবিষ্যতে এই সম্পর্ক কিভাবে পরিবর্তিত হবে তা সময়ই বলবে, তবে উভয় দেশেরই প্রয়োজন নিজেদের মধ্যে স্থিতিশীল সম্পর্ক বজায় রাখা, যা উভয়ের জন্যই মঙ্গলজনক হবে।
UNIT-4 •দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত: আঞ্চলিক কৌশল নিয়ে বিতর্ক
****8) প্রশ্ন.ভারতের বিদেশ নীতির ক্ষেত্রে ASEAN-এর ভূমিকা আলোচনা কর।৫/১০
ভারত এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের মধ্যে সম্পর্ক একটি দীর্ঘ ইতিহাসের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত। বৌদ্ধ ধর্ম, বাণিজ্য এবং সাংস্কৃতিক বিনিময়ের মাধ্যমে এই সম্পর্ক শক্তিশালী হয়েছে। আধুনিক যুগে, ভারতের বিদেশ নীতিতে ASEAN (Association of Southeast Asian Nations) বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দশটি দেশ নিয়ে গঠিত এই সংস্থাটি আঞ্চলিক সহযোগিতা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং নিরাপত্তার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভারতের 'লুক ইস্ট পলিসি' এবং পরবর্তীকালে 'অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি'-এর মাধ্যমে ASEAN-কে আরও গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রাখা হয়েছে।
১. ভারতের বিদেশ নীতির প্রেক্ষাপট:
ভারতের বিদেশ নীতি সবসময়ই স্বায়ত্তশাসন, শান্তি এবং আঞ্চলিক ভারসাম্যের উপর ভিত্তি করে তৈরি। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করার জন্য ১৯৯১ সালে 'লুক ইস্ট পলিসি' ঘোষণা করা হয়। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল ASEAN-এর দেশগুলোর সঙ্গে অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং কৌশলগত সম্পর্ক গড়ে তোলা।
পরবর্তীতে ২০১৪ সালে 'অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি' চালু করে, যা এই সম্পর্ককে আরও গতিশীল করেছে। এখন ভারতের বিদেশ নীতিতে ASEAN কেবলমাত্র অর্থনৈতিক অংশীদার নয়, বরং একটি কৌশলগত সহযোগীও বটে।
২. অর্থনৈতিক সহযোগিতা:
ভারতের এবং ASEAN-এর মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর।
• বাণিজ্য সম্পর্ক: ভারত এবং ASEAN-এর মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (FTA) কার্যকর রয়েছে, যা উভয় পক্ষের বাণিজ্য বৃদ্ধি করেছে। ২০২৩ সালে, ভারত এবং ASEAN-এর দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ১১০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে।
• অবকাঠামোগত উন্নয়ন: ভারত এবং ASEAN যৌথভাবে অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ করছে। যেমন, ভারত-মায়ানমার-থাইল্যান্ড ত্রিদেশীয় মহাসড়ক একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। এটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং ভারতের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ বাড়াবে।
• অর্থনৈতিক প্ল্যাটফর্ম: ভারত ASEAN-India Business Council এবং ASEAN-India Investment Forum-এর মতো প্ল্যাটফর্মে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে।
৩. নিরাপত্তা এবং কৌশলগত সম্পর্ক:
ভারত এবং ASEAN-এর মধ্যে কৌশলগত সম্পর্ক ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। • মেরিটাইম নিরাপত্তা: ভারত এবং ASEAN-এর মধ্যে সমুদ্র নিরাপত্তা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ভারত দক্ষিণ চীন সাগরে নৌ চলাচলের স্বাধীনতা সমর্থন করে এবং এই অঞ্চলে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে চায়। • প্রতিরক্ষা সহযোগিতা: ভারত এবং ASEAN-এর সদস্য দেশগুলো যৌথ সামরিক মহড়া এবং প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। উদাহরণস্বরূপ, SIMBEX (Singapore-India Maritime Bilateral Exercise) এবং MILAN মহড়া। • সন্ত্রাসবাদ দমন: সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় ভারত এবং ASEAN যৌথভাবে কাজ করছে। উভয় পক্ষ তথ্য বিনিময় এবং নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করে।
৪. সাংস্কৃতিক এবং শিক্ষা বিনিময়:
ভারত এবং ASEAN-এর মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
• সাংস্কৃতিক সংযোগ: ভারতীয় সংস্কৃতি, বিশেষত বৌদ্ধ ধর্ম, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে গভীর প্রভাব ফেলেছে। প্রতি বছর ASEAN-India Day এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই সম্পর্ক উদযাপিত হয়।
• শিক্ষা এবং প্রযুক্তি: ভারত ASEAN দেশগুলোর সঙ্গে শিক্ষা এবং প্রযুক্তি ক্ষেত্রেও সহযোগিতা করে। যেমন, ITEC (Indian Technical and Economic Cooperation) প্রোগ্রামের মাধ্যমে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ছাত্রদের স্কলারশিপ প্রদান করা হয়।
৫. চ্যালেঞ্জ এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা:
ভারত এবং ASEAN-এর সম্পর্কের উন্নয়নে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে।
• চীন-ভারত প্রতিযোগিতা: চীন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে গভীর সম্পর্ক গড়ে তুলছে, যা ভারতের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। • অর্থনৈতিক বৈষম্য: ASEAN দেশগুলোর মধ্যে আর্থিক বৈষম্য থাকায় ভারসাম্যপূর্ণ বাণিজ্য সম্পর্ক বজায় রাখা কঠিন। • অবকাঠামো সমস্যা: ভারত এবং ASEAN-এর মধ্যে আরও উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাব রয়েছে।
উপসংহার:
ভারতের বিদেশ নীতিতে ASEAN একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। অর্থনৈতিক, কৌশলগত এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে উভয়ের মধ্যে সম্পর্ক ক্রমশ শক্তিশালী হচ্ছে। ভারতের 'অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি' এবং ASEAN-এর সহযোগিতা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা এবং উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভবিষ্যতে, এই সম্পর্ক আরও গভীর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা ভারত এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জন্য পারস্পরিক উপকার বয়ে আনবে।
****9) প্রশ্ন.ভারতবর্ষের জোট নিরপেক্ষ নীতির উৎস এবং বিবর্তনের বিষয় আলোচনা কর। তুমি কি মনে কর ঠান্ডা যুদ্ধের পরবর্তী সময়ে এই নীতিটি বর্তমানে এখনো প্রাসঙ্গিক? ১০
ভারতবর্ষের জোট নিরপেক্ষ নীতি (Non-Aligned Policy) স্বাধীনতার পর থেকেই আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর, ভারত তার নিজস্ব পররাষ্ট্র নীতি গঠন করার সময় আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি এবং জাতীয় স্বার্থের প্রতি নজর রেখেছিল। এই নীতির মূল উদ্দেশ্য ছিল, শীতল যুদ্ধের (Cold War) দ্বিমুখী বিশ্বে দুইটি মহাশক্তি, সোভিয়েত ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা এবং কোনো জোটের সঙ্গে জড়িয়ে না পড়া।
জোট নিরপেক্ষ নীতির উৎস:
জোট নিরপেক্ষ নীতির উৎসের সন্ধান করলে দেখা যায়, ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু এই নীতির প্রণেতা ছিলেন। নেহেরুর আদর্শিক দৃঢ়তা, আন্তর্জাতিক সম্পর্কের প্রতি তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি এবং ভারতের জাতীয় স্বার্থের মধ্যে একটি সামঞ্জস্য বজায় রাখার ইচ্ছা ছিল এই নীতির মূল চালিকা শক্তি। নেহেরু বিশ্বাস করতেন যে, যুদ্ধ এবং সামরিক জোটে জড়িয়ে না পড়ে ভারত তার স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে পারবে।
নেহেরুর চিন্তাধারার মূলে ছিল পঞ্চশীল নীতি, যা তিনি চীন-ভারত সম্পর্কের উন্নয়নের লক্ষ্যে গ্রহণ করেছিলেন। পঞ্চশীল নীতির পাঁচটি মূলভিত্তি হল:
1. একে অপরের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতার প্রতি পারস্পরিক শ্রদ্ধা।
2. একে অপরের বিরুদ্ধে আগ্রাসন না চালানো।
3. একে অপরের অভ্যন্তরীণ বিষয়াবলীতে হস্তক্ষেপ না করা।
4. পারস্পরিক সুবিধার জন্য সাম্য ও সহযোগিতা।
5. শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান।
জোট নিরপেক্ষ নীতির বিবর্তন:
শীতল যুদ্ধের সময়ে, জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন (Non-Aligned Movement) নামে একটি বড় আন্তর্জাতিক আন্দোলনের জন্ম হয়, যা বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশগুলিকে একত্রিত করেছিল। ভারত এই আন্দোলনের অন্যতম প্রধান উদ্যোক্তা ছিল এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মঞ্চে এর জন্য শক্তিশালী সমর্থন যুগিয়েছিল। এই আন্দোলনের মাধ্যমে, ভারত ও অন্যান্য জোট নিরপেক্ষ দেশগুলি তাদের নিজস্ব উন্নয়ন এবং স্বার্থের জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং শান্তির পক্ষে জোরালো অবস্থান নেয়।
ঠান্ডা যুদ্ধের পরবর্তী সময়ে জোট নিরপেক্ষ নীতির প্রাসঙ্গিকতা:
ঠান্ডা যুদ্ধের পরবর্তী সময়ে, বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন পরিবর্তন এসেছে এবং এক মেরুকেন্দ্রিক বিশ্বব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তবে, এমন পরিস্থিতিতে জোট নিরপেক্ষ নীতি কতটা প্রাসঙ্গিক তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
একদিকে বলা যায় যে, শীতল যুদ্ধের সময়কার দ্বিমুখী বিশ্বের পরিবর্তে বর্তমানে এক মেরুকেন্দ্রিক বা বহুমুখী বিশ্বব্যবস্থায়, জোট নিরপেক্ষ নীতি আগের মত কার্যকর নয়। বর্তমান সময়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশ তাদের নিজস্ব অর্থনৈতিক এবং নিরাপত্তা স্বার্থে বিভিন্ন জোট ও সমঝোতা করে চলেছে।
অন্যদিকে, বলা যায় যে, জোট নিরপেক্ষ নীতি এখনো প্রাসঙ্গিক কারণ এটি ভারতকে স্বাধীন ও স্বাধীন সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ দেয়। এই নীতি ভারতের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় সহায়ক হয়েছে এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে স্বাধীনভাবে অবস্থান নিতে সহায়তা করেছে। ভারতের বর্তমান পররাষ্ট্র নীতি এবং বহুপাক্ষিক সহযোগিতা এই নীতিরই সম্প্রসারণ হিসাবে দেখা যেতে পারে।
বর্তমানে, ভারত আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে শক্তিশালী অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে এবং বিভিন্ন বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে, জোট নিরপেক্ষ নীতি ভারতের স্বার্থ রক্ষা এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়ক হতে পারে।
উপসংহার:
ভারতবর্ষের জোট নিরপেক্ষ নীতির উৎস এবং বিবর্তনের দিকে তাকালে দেখা যায় যে, এটি দেশের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে কাজ করেছে। যদিও ঠান্ডা যুদ্ধের পরবর্তী সময়ে বিশ্ব রাজনীতিতে পরিবর্তন এসেছে, তবুও এই নীতির মূল আদর্শ এবং উদ্দেশ্য এখনও প্রাসঙ্গিক রয়েছে। বর্তমান সময়ে ভারত তার পররাষ্ট্র নীতিতে আরও প্রগতিশীল ও বহুমুখী দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করে চলেছে, যা জোট নিরপেক্ষ নীতিরই একটি আধুনিক রূপ হিসাবে বিবেচিত হতে পারে।
UNIT-5 • ভারতের আলোচনার ধরন এবং কৌশল: বাণিজ্য, পরিবেশ, শক্তি এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
****10) প্রশ্ন. বিদেশ নীতির ক্ষেত্রে উদীয়মান শক্তি হিসাবে ভারতের ভূমিকার মূল্যায়ন করো। ১০
বর্তমান বিশ্বের বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে ভারতের বিদেশ নীতি একটি উল্লেখযোগ্য স্থান অধিকার করেছে। উদীয়মান শক্তি হিসাবে ভারতের প্রভাব ও ভূমিকাকে গুরুত্ব সহকারে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, এটি কেবলমাত্র আঞ্চলিক স্থিতিশীলতায় নয়, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিসরেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। ভারতের বিদেশ নীতি বর্তমানে বিভিন্ন ক্ষেত্র যেমন অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা, কূটনীতি এবং প্রযুক্তিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলছে।
অর্থনৈতিক শক্তি হিসাবে উদীয়মান ভারত:
ভারতের অর্থনৈতিক বিকাশ গত দুই দশকে এক উল্লেখযোগ্য গতি অর্জন করেছে। বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারত বর্তমানে বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতি। উদীয়মান বাজার হিসাবে ভারতের বিনিয়োগ পরিবেশ, নীতিগত সংস্কার এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ভারতের বিদেশ নীতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করছে। ভারত-মার্কিন বাণিজ্য, ভারত-ইইউ বাণিজ্য এবং রাশিয়া-ভারত বাণিজ্য এর অন্যতম উদাহরণ।
প্রতিরক্ষা ও সামরিক ক্ষেত্রে ভারতের ভূমিকা:
ভারতের প্রতিরক্ষা নীতি ও সামরিক শক্তি বৃদ্ধি আন্তর্জাতিক পরিসরে দেশের প্রভাবকে ব্যাপকভাবে প্রসারিত করেছে। ভারতের প্রতিরক্ষা বাজেট বর্তমানে বিশ্বের বৃহত্তমগুলির মধ্যে একটি। ভারতীয় সামরিক বাহিনীর আধুনিকীকরণ ও শক্তিবৃদ্ধির পাশাপাশি, দেশের প্রতিরক্ষা উৎপাদনেও আত্মনির্ভরশীলতা বাড়ানোর প্রচেষ্টা চলছে। ভারতের উদীয়মান শক্তি হিসাবে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হল ১৯৯৮ সালে পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষার মাধ্যমে দেশটির সামরিক ক্ষমতার প্রদর্শন। এছাড়াও, ভারতীয় নৌবাহিনী ভারত মহাসাগর অঞ্চলে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা ভূমিকা পালন করে চলেছে।
কূটনৈতিক পরিসরে ভারতের উদীয়মান শক্তি:
ভারতের কূটনৈতিক নীতি ও উদ্যোগগুলি বৈশ্বিক রাজনীতিতে দেশের স্থানকে সুদৃঢ় করেছে। ভারতের ‘পড়শি প্রথম’ নীতি, ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ নীতি এবং সম্প্রতি চালু হওয়া ‘ইন্ডো-প্যাসিফিক’ কৌশল দেশটির কূটনৈতিক পরিসরকে আরও বিস্তৃত করেছে। ভারত উন্নয়নশীল দেশগুলির সাথে সহযোগিতার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী নেতৃত্বের একটি নতুন মাত্রা স্থাপন করছে। এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (AIIB) এবং ব্রিকস ব্যাঙ্ক-এর সাথে ভারতের সক্রিয় ভূমিকা এর অন্যতম উদাহরণ।
প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনে ভারতের অগ্রগতি:
ভারতের প্রযুক্তি ক্ষেত্রের অগ্রগতি বিদেশ নীতির ক্ষেত্রে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করেছে। তথ্যপ্রযুক্তি, স্পেস টেকনোলজি এবং উদ্ভাবনী ক্ষেত্রগুলিতে ভারতের সাফল্য বৈশ্বিক প্রযুক্তি পরিসরে দেশের অবস্থানকে শক্তিশালী করেছে। ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ISRO) এর মঙ্গলায়ন মিশন এবং চন্দ্রায়ন মিশন আন্তর্জাতিক মহাকাশ সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। এছাড়াও, ভারতের প্রযুক্তি নীতি এবং স্টার্টআপ সংস্কৃতি উদীয়মান প্রযুক্তি শক্তি হিসাবে দেশের সুনাম বৃদ্ধি করেছে।
উদীয়মান শক্তি হিসাবে ভারতের ভবিষ্যৎ:
উদীয়মান শক্তি হিসাবে ভারতের ভবিষ্যৎ অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। বৈশ্বিক অর্থনীতি, রাজনীতি ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে ভারতের অগ্রগতি এবং কৌশলগত উদ্যোগগুলি আন্তর্জাতিক পরিসরে দেশের স্থানকে আরও সুদৃঢ় করছে। তবে, ভারতের সামনে এখনও অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যেমন আর্থ-সামাজিক অসমতা, পরিবেশগত সংকট এবং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা। এই চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবিলায় ভারতের বিদেশ নীতি আরও কার্যকর ও সমন্বিত হওয়া প্রয়োজন।
উপসংহার:
বিদেশ নীতির ক্ষেত্রে উদীয়মান শক্তি হিসাবে ভারতের ভূমিকা এক বহুমুখী এবং কার্যকরী পরিসর সৃষ্টি করেছে। অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা, কূটনীতি এবং প্রযুক্তিতে ভারতের অগ্রগতি এবং উদ্ভাবনগুলি আন্তর্জাতিক পরিসরে দেশের অবস্থানকে শক্তিশালী করেছে। ভবিষ্যতে, ভারতের এই ভূমিকা আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা যায়, যা কেবলমাত্র আঞ্চলিক স্থিতিশীলতায় নয়, বৈশ্বিক শান্তি ও উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
****11) প্রশ্ন. ভারতের পরিবেশ সংক্রান্ত কৌশল বা কর্মসূচি ও নীতি সম্পর্কে আলোচনা কর। ১০/৫
ভারত একটি বৈচিত্র্যময় ও পরিবেশগতভাবে সংবেদনশীল দেশ। এর পরিবেশ সংক্রান্ত কৌশল, কর্মসূচি ও নীতি বিভিন্ন স্তরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যাতে দেশের পরিবেশের সুরক্ষা ও সংরক্ষণ নিশ্চিত করা যায়। ভারতের পরিবেশ সংক্রান্ত নীতিমালা এবং কর্মসূচি সমূহ সাধারণত চারটি মূল স্তম্ভের উপর ভিত্তি করে গঠিত হয়েছে: আইন প্রণয়ন, নীতি নির্ধারণ, কর্মসূচি বাস্তবায়ন এবং সচেতনতা বৃদ্ধি।
১. আইন প্রণয়ন:
ভারতের পরিবেশ সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন শুরু হয় ১৯৭০-এর দশকে। ১৯৭২ সালে স্টকহোম সম্মেলনের পর ভারত তার পরিবেশ সংক্রান্ত আইন প্রণয়নে তৎপর হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি আইন হল:
• পরিবেশ (সংরক্ষণ) আইন, ১৯৮৬: এটি একটি সামগ্রিক আইন যা পরিবেশ সংক্রান্ত সব ধরনের কার্যক্রম ও নীতিকে নিয়ন্ত্রণ করে।
• জল (প্রদূষণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ) আইন, ১৯৭৪: এই আইনের মাধ্যমে জল দূষণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। • বায়ু (প্রদূষণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ) আইন, ১৯৮১: এই আইনের মাধ্যমে বায়ু দূষণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
২. নীতি নির্ধারণ:
পরিবেশ সংক্রান্ত নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে ভারতের প্রধান নীতিমালা হল:
• জাতীয় পরিবেশ নীতি, ২০০৬: এটি পরিবেশ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতিমালা। এই নীতির প্রধান উদ্দেশ্য হল পরিবেশগত স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা এবং উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
• বায়ু গুণমান মানদণ্ড, ২০০৯: এই নীতি বায়ু গুণমানের মানদণ্ড নির্ধারণ করে এবং বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দেয়।
৩. কর্মসূচি বাস্তবায়ন:
পরিবেশ সংক্রান্ত কর্মসূচির বাস্তবায়নে ভারত সরকার বিভিন্ন প্রকল্প ও কর্মসূচি গ্রহণ করেছে: • স্বচ্ছ ভারত অভিযান: এই কর্মসূচির লক্ষ্য হল সারা দেশে পরিচ্ছন্নতা বৃদ্ধি করা এবং কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নত করা।
• জাতীয় সবুজ মিশন: এই কর্মসূচির লক্ষ্য হল বৃক্ষরোপণ, বনায়ন এবং বন সংরক্ষণ। • জাতীয় সৌর মিশন: এর মাধ্যমে সৌর শক্তির ব্যবহার বাড়ানো এবং পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির উৎসকে উৎসাহিত করা হয়। • ন্যাশনাল ক্লিন এনার্জি ফান্ড (এনসিইএফ): এই তহবিলের মাধ্যমে পরিষ্কার এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎসকে প্রচার করা হয়।
৪. সচেতনতা বৃদ্ধি:
পরিবেশ সংরক্ষণে জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ভারত সরকার ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে: • পরিবেশ দিবস উদযাপন: প্রতি বছর ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস উদযাপিত হয়, যার মাধ্যমে পরিবেশ সংক্রান্ত সচেতনতা বৃদ্ধি করা হয়।
• শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচি: স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পরিবেশ সংক্রান্ত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচি পরিচালনা করা হয়। • গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম: পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহারে গুরুত্ব দেয়া হয়।
চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা:
ভারতের পরিবেশ সংক্রান্ত নীতিমালা এবং কর্মসূচি যথেষ্ট কার্যকর হলেও কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। শিল্পায়ন, নগরায়ন এবং জনসংখ্যার বৃদ্ধির ফলে পরিবেশ দূষণের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাছাড়া, পরিবেশ সংরক্ষণে আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। তবে, সরকারের পরিকল্পনা এবং সাধারণ জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এই চ্যালেঞ্জগুলির মোকাবেলা করা সম্ভব।
উপসংহার:
ভারতের পরিবেশ সংক্রান্ত কৌশল, কর্মসূচি ও নীতি সমূহ একটি সামগ্রিক এবং সমন্বিত পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। আইনের প্রণয়ন, নীতি নির্ধারণ, কর্মসূচির বাস্তবায়ন এবং সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশের পরিবেশ সংরক্ষণে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। তবে, এই প্রক্রিয়াকে আরও কার্যকর করতে সরকারের পাশাপাশি জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রয়োজন। সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে ভারত তার পরিবেশের সংরক্ষণ ও উন্নয়নে সফল হবে বলে আশা করা যায়।
******12) প্রশ্ন. জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে আন্তর্জাতিক স্তরে ভারতের ভূমিকা লেখ। ৫/১০
জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে আন্তর্জাতিক স্তরে ভারতের ভূমিকা:
জলবায়ু পরিবর্তন বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জগুলির মধ্যে একটি। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইড এবং অন্যান্য গ্রিনহাউস গ্যাসের উচ্চ মাত্রার উপস্থিতি তাপমাত্রা বৃদ্ধি করছে এবং পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। এই প্রেক্ষাপটে, আন্তর্জাতিক স্তরে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ভারতের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
১. আন্তর্জাতিক জলবায়ু সম্মেলনসমূহে ভারতের অংশগ্রহণ:
ভারত জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সম্মেলন এবং আলোচনায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। বিশেষ করে, জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন (UNFCCC) এবং প্যারিস চুক্তিতে ভারতের অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য। ২০১৫ সালে প্যারিসে অনুষ্ঠিত COP21-এ ভারত গুরুত্ব সহকারে অংশগ্রহণ করে এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভারত এই চুক্তির অধীনে ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমন ৩৩-৩৫% হ্রাস করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।
২. পরিবেশ বান্ধব নীতিমালা গ্রহণ:
ভারত সরকার পরিবেশ সংরক্ষণ এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বিভিন্ন নীতিমালা গ্রহণ করেছে। "ন্যাশনাল অ্যাকশন প্ল্যান অন ক্লাইমেট চেঞ্জ" (NAPCC) এর অধীনে আটটি মিশন চালু করা হয়েছে যা টেকসই উন্নয়ন এবং পরিবেশ সংরক্ষণে সহায়ক। এর মধ্যে অন্যতম হল সোলার মিশন, যা নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার বাড়ানোর জন্য কাজ করছে।
৩. নবায়নযোগ্য শক্তির উন্নয়ন:
ভারত নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস উন্নয়নে বেশ গুরুত্ব দিচ্ছে। ২০২২ সালের মধ্যে ১৭৫ গিগাওয়াট নবায়নযোগ্য শক্তি উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, যার মধ্যে ১০০ গিগাওয়াট সৌর শক্তি অন্তর্ভুক্ত। ভারত বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম সৌর শক্তি উৎপাদনকারী দেশ। এছাড়া, বায়ু শক্তি এবং জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রেও ভারত বড় মাপের উদ্যোগ নিচ্ছে।
৪. আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও অংশীদারিত্ব:
ভারত আন্তর্জাতিক স্তরে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বিভিন্ন দেশের সাথে সহযোগিতা এবং অংশীদারিত্ব বৃদ্ধি করছে। বিশেষ করে, ভারতের নেতৃত্বে ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠিত "ইন্টারন্যাশনাল সোলার অ্যালায়েন্স" (ISA) একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। এই জোটের উদ্দেশ্য হল সৌর শক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি এবং সদস্য দেশগুলির মধ্যে প্রযুক্তি এবং জ্ঞান বিনিময়। এছাড়া, ভারত এবং ফ্রান্সের যৌথ উদ্যোগে এই জোট গঠিত হয়, যা বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মধ্যে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।
৫. জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় স্থানীয় উদ্যোগ:
ভারত সরকার স্থানীয় স্তরে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করছে। জল সংরক্ষণ, বনায়ন, এবং বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় প্রকল্প এবং প্রোগ্রাম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। "স্মার্ট সিটিজ মিশন" এবং "স্বচ্ছ ভারত অভিযান" এর মত উদ্যোগগুলি স্থানীয় স্তরে পরিবেশ সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
৬. জনসচেতনতা ও শিক্ষা:
ভারত সরকার জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশ সংরক্ষণ সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন প্রচারমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। স্কুল এবং কলেজ পর্যায়ে পরিবেশ শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এছাড়া, গণমাধ্যম এবং সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে সাধারণ জনগণকে জলবায়ু পরিবর্তনের গুরুত্ব এবং এর মোকাবিলায় করণীয় সম্পর্কে সচেতন করা হচ্ছে।
৭. আন্তর্জাতিক অনুদান ও অর্থায়ন:
ভারত জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় উন্নয়নশীল দেশগুলির জন্য আন্তর্জাতিক অনুদান এবং অর্থায়নের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বারবার এই বিষয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে বক্তব্য রেখেছেন। ভারত উন্নয়নশীল দেশগুলির জন্য আর্থিক সহায়তা এবং প্রযুক্তি স্থানান্তরের পক্ষে সমর্থন জানাচ্ছে।
উপসংহার:
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক স্তরে ভারতের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং উল্লেখযোগ্য। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে ভারতের দায়িত্ব শুধু নিজ দেশেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং অংশীদারিত্বের মাধ্যমে বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলির সাথেও সম্পর্কিত। ভারতের বিভিন্ন উদ্যোগ এবং নীতিমালা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় একটি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করছে এবং ভবিষ্যতে এই প্রচেষ্টা আরও সম্প্রসারিত হবে বলে আশা করা যায়।
****13) প্রশ্ন. SAARC এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যগুলি সম্পর্কে আলোচনা কর। ৫
দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (SAARC) হল একটি আঞ্চলিক আন্তঃসরকার সংস্থা যা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে অর্থনৈতিক এবং আঞ্চলিক উন্নয়নের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। SAARC গঠিত হয় ১৯৮৫ সালে, এবং এর সদর দপ্তর স্থাপিত হয় নেপালের কাঠমান্ডুতে। SAARC এর মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যগুলি নীচে আলোচনা করা হল:
১. আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধি:
SAARC এর অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হল দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা। এর মাধ্যমে সদস্য দেশগুলির মধ্যে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, প্রযুক্তি, এবং পরিবেশ সংরক্ষণ ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানো হয়। বিভিন্ন দেশ একে অপরের সাথে সহযোগিতার মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং স্থিতিশীলতা অর্জন করতে পারে।
২. অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি:
SAARC এর একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হল অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং সমৃদ্ধি বৃদ্ধি করা। এর মাধ্যমে সদস্য দেশগুলির মধ্যে বাণিজ্যিক বাধা কমানো, মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (SAFTA) প্রতিষ্ঠা, এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য একটি সাধারণ প্ল্যাটফর্ম প্রদান করা হয়। অর্থনৈতিক সহযোগিতার মাধ্যমে আঞ্চলিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়।
৩. সামাজিক উন্নয়ন:
SAARC সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রেও কাজ করে। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, দারিদ্র্য বিমোচন, এবং মহিলাদের ক্ষমতায়ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হয়। সদস্য দেশগুলি একে অপরের অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান বিনিময় করে সামাজিক সমস্যার সমাধান করতে পারে।
৪. সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সংরক্ষণ:
SAARC এর আরেকটি লক্ষ্য হল সদস্য দেশগুলির মধ্যে সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সংরক্ষণ ও উন্নয়ন। এর মাধ্যমে সাংস্কৃতিক বিনিময়, ঐতিহাসিক স্থাপত্য সংরক্ষণ, এবং পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন করা হয়। সাংস্কৃতিক সহযোগিতা মানুষের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও বন্ধুত্ব বৃদ্ধি করতে সহায়ক হয়।
৫. আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তা:
SAARC আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় কাজ করে। সদস্য দেশগুলির মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান, সন্ত্রাসবিরোধী পদক্ষেপ, এবং নিরাপত্তা সহযোগিতা বৃদ্ধি করার মাধ্যমে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা হয়। এছাড়া, বিভিন্ন আঞ্চলিক সংঘাত সমাধানে এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় SAARC গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৬. পরিবেশ সংরক্ষণ ও দুর্যোগ মোকাবিলা:
SAARC এর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হল পরিবেশ সংরক্ষণ এবং দুর্যোগ মোকাবিলায় সহযোগিতা বৃদ্ধি করা। পরিবেশ সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবিলা করতে সদস্য দেশগুলি একসাথে কাজ করে। এছাড়া, প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ এবং সহযোগিতার মাধ্যমে ক্ষয়ক্ষতি কমানোর চেষ্টা করা হয়।
৭. স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা:
SAARC স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য কাজ করে। বিভিন্ন সংক্রামক রোগ, শিশু মৃত্যুহার কমানো, এবং স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়নের ক্ষেত্রে সদস্য দেশগুলির মধ্যে অভিজ্ঞতা বিনিময় এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়।
উপসংহার:
SAARC এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যগুলি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, শান্তি, ও স্থিতিশীলতা বৃদ্ধিতে সহায়ক। সদস্য দেশগুলির মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা ও সমন্বয়ের মাধ্যমে আঞ্চলিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব। SAARC এর মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়া একটি শক্তিশালী এবং উন্নত অঞ্চলে পরিণত হতে পারে।
*****14) প্রশ্ন. SAARC (সার্ক)-এর সদস্য হিসাবে ভারতের ভূমিকা আলোচনা কর। ১০/৫
দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা বা SAARC (South Asian Association for Regional Cooperation) ১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এর সদস্য দেশগুলি হল আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, মালদ্বীপ, নেপাল, পাকিস্তান, এবং শ্রীলঙ্কা। SAARC এর লক্ষ্য দক্ষিণ এশিয়ায় অর্থনৈতিক ও আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা। ভারত, এই সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য দেশ হিসাবে, শুরু থেকেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।
ভারতের ভূমিকাঃ:
১. অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি:
ভারত SAARC এর অধীনে অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ভারতের বৃহত্তম অর্থনীতি এবং শক্তিশালী বাণিজ্য কাঠামো দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলির সাথে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সুযোগ বাড়ানোর জন্য সহায়ক হয়েছে। ভারতীয় বাজারে অন্যান্য সদস্য দেশগুলির পণ্যের প্রবেশাধিকারের সুযোগ বৃদ্ধি করা হয়েছে, যা এই দেশগুলির অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়তা করছে।
২. উন্নয়ন প্রকল্প ও আর্থিক সহায়তা:
ভারত SAARC এর বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে আর্থিক সহায়তা প্রদান করে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবহন, এবং তথ্য প্রযুক্তি ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধি করার জন্য বিভিন্ন প্রকল্প চালু করা হয়েছে। ভারতের নেতৃত্বে বিভিন্ন শিক্ষা ও স্বাস্থ্য প্রকল্পগুলি সদস্য দেশগুলির মধ্যে জীবনমান উন্নত করতে সহায়ক হয়েছে।
৩. দারিদ্র্য দূরীকরণ:
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে দারিদ্র্য একটি সাধারণ সমস্যা। ভারত SAARC এর মাধ্যমে দারিদ্র্য দূরীকরণের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ভারতের কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পগুলি অন্যান্য সদস্য দেশগুলিতে খাদ্য নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
৪. সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতা:
দক্ষিণ এশিয়া সন্ত্রাসবাদের কারণে প্রবলভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। ভারত SAARC এর মাধ্যমে সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতা বাড়াতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। ভারতের প্রস্তাবিত সন্ত্রাসবিরোধী কৌশলগুলি সদস্য দেশগুলির মধ্যে তথ্য বিনিময় ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে সহায়ক হয়েছে।
৫. সাংস্কৃতিক বিনিময়:
ভারত SAARC এর মাধ্যমে সাংস্কৃতিক বিনিময়ের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সাংস্কৃতিক উৎসব, শিক্ষা বিনিময় প্রোগ্রাম, এবং ঐতিহ্যগত শিল্পের প্রসার SAARC সদস্য দেশগুলির মধ্যে সাংস্কৃতিক সম্পর্ক উন্নত করতে সহায়ক হয়েছে।
৬. পরিবেশগত সুরক্ষা:
দক্ষিণ এশিয়া পরিবেশগত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। ভারত SAARC এর মাধ্যমে পরিবেশগত সুরক্ষা ও টেকসই উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা, বনায়ন প্রকল্প, এবং পরিবেশ সুরক্ষা নীতিমালা গঠনে ভারতের নেতৃত্ব গুরুত্বপূর্ণ।
SAARC এর চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যতঃ
SAARC এর কার্যক্রমে ভারতের ভূমিকা ইতিবাচক হলেও, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। রাজনৈতিক সংঘাত, আন্তঃরাষ্ট্রিক সম্পর্কের জটিলতা, এবং অর্থনৈতিক বৈষম্য SAARC এর কার্যকরতা হ্রাস করেছে। তবে, ভারত এই চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবিলার জন্য ক্রমাগত কাজ করছে এবং SAARC এর কার্যকরতা বৃদ্ধি করার চেষ্টা করছে।
উপসংহার:
SAARC এর সদস্য হিসাবে ভারতের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং বহুমুখী। অর্থনৈতিক উন্নয়ন, দারিদ্র্য দূরীকরণ, সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতা, সাংস্কৃতিক বিনিময়, এবং পরিবেশগত সুরক্ষায় ভারতের নেতৃত্ব দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক সহযোগিতাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে। যদিও চ্যালেঞ্জগুলি বিদ্যমান, তবুও ভারতের অব্যাহত প্রচেষ্টা SAARC এর লক্ষ্য পূরণে সহায়ক হবে এবং দক্ষিণ এশিয়ায় স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করবে।
*****15) প্রশ্ন. SAARC এর শীর্ষ সম্মেলনে গৃহীত SAPTA এবং SAFTA-র ভূমিকা পর্যালোচনা কর। ৫
দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (SAARC) প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৮৫ সালে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে অর্থনৈতিক ও সামাজিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে। SAARC-এর প্রধান লক্ষ্য হল আঞ্চলিক অগ্রগতি ও উন্নয়ন। SAARC-এর শীর্ষ সম্মেলনে গৃহীত দুটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ হল SAPTA (SAARC Preferential Trading Arrangement) এবং SAFTA (South Asian Free Trade Area)।
SAPTA: SAARC Preferential Trading Arrangement:
SAPTA প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯৫ সালে, SAARC-এর সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে বাণিজ্যিক সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল সদস্য দেশগুলির মধ্যে পারস্পরিক বাণিজ্য বাড়ানো এবং আঞ্চলিক বাণিজ্যিক বাধাগুলি কমানো। 1. বাণিজ্য বৃদ্ধির সুবিধা: SAPTA সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে শুল্ক হ্রাস এবং অন্যান্য বাণিজ্যিক বাধা কমানোর মাধ্যমে বাণিজ্য বৃদ্ধি করেছে। এর ফলে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে পণ্য ও সেবার বাণিজ্য বেড়েছে।
2. বৈচিত্র্যময় পণ্য বিনিময়: SAPTA এর মাধ্যমে সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে বৈচিত্র্যময় পণ্য বিনিময় বৃদ্ধি পেয়েছে, যা অর্থনৈতিক বৈচিত্র্য ও সম্প্রসারণে সহায়ক হয়েছে। 3. বাণিজ্যিক আলোচনা: SAPTA-এর মাধ্যমে সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে নিয়মিত বাণিজ্যিক আলোচনা ও সহযোগিতা বৃদ্ধি পেয়েছে, যা আঞ্চলিক বাণিজ্য উন্নয়নে সহায়ক হয়েছে।
SAFTA: South Asian Free Trade Area:
SAFTA প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০৬ সালে, SAPTA-এর উন্নত সংস্করণ হিসেবে। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল একটি মুক্ত বাণিজ্য এলাকা তৈরি করা, যেখানে সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে শুল্ক ও অন্যান্য বাণিজ্যিক বাধা হ্রাস করা হবে। 1. মুক্ত বাণিজ্য এলাকা: SAFTA-এর মাধ্যমে সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে একটি মুক্ত বাণিজ্য এলাকা গঠিত হয়েছে, যা আঞ্চলিক বাণিজ্যকে আরো সহজ ও সুবিধাজনক করেছে। 2. শুল্ক হ্রাস: SAFTA-এর মাধ্যমে সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে শুল্ক হ্রাস করা হয়েছে, যা পণ্য ও সেবার মূল্য কমিয়ে আঞ্চলিক বাণিজ্য বাড়িয়েছে। 3. আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা: SAFTA-এর মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছে, যা তাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়ক হয়েছে। 4. বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি: SAFTA-এর মাধ্যমে সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা আঞ্চলিক উন্নয়নে বড় ভূমিকা পালন করেছে।
SAPTA এবং SAFTA-র ভূমিকা:
• আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধি: SAPTA এবং SAFTA-এর মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধি পেয়েছে, যা অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে সহায়ক হয়েছে।
• বাণিজ্যিক বাধা কমানো: SAPTA এবং SAFTA-এর মাধ্যমে শুল্ক ও অন্যান্য বাণিজ্যিক বাধা কমানো হয়েছে, যা পণ্য ও সেবার বিনিময় সহজ ও সুবিধাজনক করেছে। • অর্থনৈতিক উন্নয়ন: SAPTA এবং SAFTA-এর মাধ্যমে আঞ্চলিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়েছে, যা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে সহায়ক হয়েছে। • সামাজিক উন্নয়ন: SAPTA এবং SAFTA-এর মাধ্যমে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা আঞ্চলিক সামাজিক উন্নয়নে সহায়ক হয়েছে।
উপসংহার:
SAPTA এবং SAFTA দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি, শুল্ক ও বাণিজ্যিক বাধা কমানো, এবং আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এই উদ্যোগগুলি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে সহায়ক হয়েছে এবং আঞ্চলিক অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। SAARC-এর শীর্ষ সম্মেলনে গৃহীত এই উদ্যোগগুলি আঞ্চলিক বাণিজ্য ও সহযোগিতার একটি মডেল হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
*****16) প্রশ্ন. ভারতের পারমাণবিক নীতি সংক্রান্ত নাতিদীর্ঘ একটি টীকা লেখো।৫
ভারতের পারমাণবিক নীতি দেশের নিরাপত্তা, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা রক্ষার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্বাধীনতার পর থেকেই ভারত তার পারমাণবিক নীতি গঠনে একটি সুসংবদ্ধ দৃষ্টিভঙ্গি অনুসরণ করেছে। এই নীতি প্রধানত তিনটি স্তম্ভের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে: প্রতিরোধ, শান্তিপূর্ণ ব্যবহার এবং বৈশ্বিক পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ।
১. পারমাণবিক প্রতিরোধ ক্ষমতা:
ভারতের পারমাণবিক নীতির অন্যতম প্রধান স্তম্ভ হলো প্রতিরোধ ক্ষমতা। ১৯৯৮ সালে পোখরান-II পরীক্ষার মাধ্যমে ভারত তার পারমাণবিক ক্ষমতা প্রদর্শন করে। এই পরীক্ষার মাধ্যমে ভারত তার প্রতিরোধ ক্ষমতার স্বীকৃতি দেয় এবং একটি পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ভারতের এই প্রতিরোধ ক্ষমতা মূলত দেশের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয়।
ভারত তার পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার সম্পর্কে একটি "No First Use" (NFU) নীতি অনুসরণ করে। অর্থাৎ, ভারত কখনোই প্রথমে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করবে না। এটি প্রতিরোধ ক্ষমতার একটি নৈতিক দিক হিসেবে বিবেচিত হয় এবং আন্তর্জাতিক মহলে ভারতের দায়িত্বশীলতা প্রদর্শন করে।
২. পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার:
ভারতের পারমাণবিক নীতির দ্বিতীয় স্তম্ভ হলো পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার। ভারতের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে অগ্রগতির একটি প্রধান দিক হলো পারমাণবিক শক্তির ব্যবহার। পারমাণবিক শক্তির মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন, চিকিৎসা, কৃষি, এবং শিল্পক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতি সাধন করা হয়েছে। ভারতের পারমাণবিক শক্তি কমিশন (Atomic Energy Commission) এবং ভারতের পারমাণবিক শক্তি নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (Atomic Energy Regulatory Board) এই খাতে নীতি প্রণয়ন এবং নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য ভারত আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (IAEA) এর সাথে সহযোগিতা করে। IAEA এর সাথে ভারতের এই সহযোগিতা আন্তর্জাতিক মহলে ভারতের বিশ্বাসযোগ্যতা এবং নৈতিকতা প্রদর্শন করে।
৩. বৈশ্বিক পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ:
ভারতের পারমাণবিক নীতির তৃতীয় স্তম্ভ হলো বৈশ্বিক পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ। ভারত সবসময়ই পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের পক্ষে কথা বলে এসেছে। ভারতের বিশ্বাস যে, পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার রোধ এবং পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভারত পরমাণু অস্ত্র প্রসার রোধ চুক্তি (NPT) এবং কমপ্রিহেনসিভ টেস্ট ব্যান ট্রিটি (CTBT) স্বাক্ষর না করলেও, পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা বন্ধ রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
ভারত সবসময়ই একটি ন্যায্য ও ভারসাম্যপূর্ণ পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ প্রক্রিয়ার পক্ষে কথা বলে। ভারতের এই অবস্থান মূলত আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং কূটনীতিতে তার দায়িত্বশীলতার প্রতিফলন।
উপসংহার:
ভারতের পারমাণবিক নীতি দেশের নিরাপত্তা, উন্নয়ন এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক রক্ষার ক্ষেত্রে একটি সুসংবদ্ধ ও দায়িত্বশীল দৃষ্টিভঙ্গি প্রদর্শন করে। প্রতিরোধ ক্ষমতা, শান্তিপূর্ণ ব্যবহার এবং বৈশ্বিক নিরস্ত্রীকরণ এই নীতির মূল ভিত্তি। আন্তর্জাতিক মহলে ভারতের এই নীতি তার বিশ্বাসযোগ্যতা এবং নৈতিকতা প্রদর্শন করে, যা একটি শক্তিশালী এবং স্থিতিশীল রাষ্ট্র হিসেবে ভারতের অবস্থানকে সুদৃঢ় করে।