• সাজেশন পিডিএফ পেজের পেজ সংখ্যা 43 টি।
• এই সাজেশনের প্রশ্ন সংখ্যা 20 টি।
• নিরক্ষরেখে বলতে পারি এই সাজেশনেরর বাইরে কোন প্রশ্ন উত্তর আসবে না।
• ১০০% তোমরা কমন পাবে।
• এই সাজেশনের প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর সিলেবাস অনুযায়ী এবং ইউনিট অনুযায়ী সাজানো রয়েছে ।
• তোমরা চাইলে খুব সহজে BUY করতে পারো।
• THANK YOU.
এখানে অল্প কিছু প্রশ্নোত্তর আপলোড করা হয়েছে যদি তোমার মনে হয় সাজেশনটি BUY করতে পারো ।
পর্ব- ১ : বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস- প্রাচীন যুগ:
****1) প্রশ্ন. চর্যাপদের প্রাচীন পুঁথি কে, কবে কোথা থেকে আবিষ্কার করেন? চর্যাপদের প্রতিটি কি নামে কোন পত্রিকা থেকে প্রকাশিত হয়? চর্যাপদের সাহিত্য মূল্য বিচার করো।
চর্যাপদের প্রাচীন পুঁথির আবিষ্কার: চর্যাপদ, বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনতম গ্রন্থ হিসেবে পরিচিত, আবিষ্কৃত হয় ১৯০৭ সালে। এই মূল্যবান পুঁথিটি আবিষ্কার করেন বিখ্যাত নেপালি পণ্ডিত হরপ্রসাদ শাস্ত্রী। তিনি নেপালের রয়্যাল লাইব্রেরিতে অনুসন্ধান চালানোর সময় এই প্রাচীন পুঁথিটি খুঁজে পান। চর্যাপদের পুঁথিটি মূলত বৌদ্ধ সিধাচার্যদের দ্বারা রচিত এবং এতে মোট ৫০টি পদ রয়েছে। পুঁথিটি বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন হিসেবে উল্লেখযোগ্য।
চর্যাপদের প্রকাশনা: চর্যাপদের প্রতিটি পদ 'চর্যাগীতি' নামে পরিচিত। এই পুঁথি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯১৬ সালে, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে। প্রকাশিত পুঁথিটি 'বৈজ্ঞানিক সংগ্রহ' নামে পরিচিত পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। পরবর্তীতে, চর্যাপদের বিভিন্ন সংস্করণ প্রকাশিত হয় এবং বিভিন্ন গবেষণাগারে এই পুঁথি নিয়ে গভীরভাবে গবেষণা করা হয়।
চর্যাপদের সাহিত্য মূল্য বিচার: চর্যাপদের সাহিত্য মূল্য অনস্বীকার্য। এটি শুধুমাত্র বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন নয়, বরং এর মাধ্যমে আমরা তৎকালীন সমাজ, সংস্কৃতি এবং ভাষার একটি চিত্র পাই। চর্যাপদের সাহিত্য মূল্য নিম্নে আলোচনা করা হলো:
1. ভাষার প্রাচীনত্ব: চর্যাপদ বাংলা সাহিত্যের প্রথম নিদর্শন হিসেবে ভাষার প্রাচীনত্ব এবং তার বিবর্তনের একটি চিত্র তুলে ধরে। চর্যাপদে ব্যবহৃত ভাষা প্রাচীন বাংলা ভাষার আদিরূপ যা 'অবহট্ঠ' নামে পরিচিত। এটি প্রাচীন বাংলা ভাষার বিকাশ এবং পরবর্তীকালে বাংলা ভাষার রূপান্তরকে বোঝার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
2. ধর্মীয় এবং আধ্যাত্মিক বিষয়বস্তু: চর্যাপদে বৌদ্ধ ধর্মের বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান, সাধনা এবং আধ্যাত্মিক তত্ত্বের বিবরণ পাওয়া যায়। এটি তৎকালীন বৌদ্ধ সমাজ এবং তাদের ধর্মীয় অনুশীলনের একটি স্পষ্ট ধারণা দেয়।
3. কবিতার সৌন্দর্য: চর্যাপদে ব্যবহৃত ছন্দ, অলঙ্কার এবং রূপক প্রতিমা বাংলা কবিতার সৌন্দর্যকে প্রকাশ করে। এর প্রতিটি পদে গভীর ভাবার্থ এবং ছন্দময়তার ছোঁয়া রয়েছে যা প্রাচীন বাংলা কাব্যসাহিত্যের উৎকর্ষ প্রকাশ করে।
4. সমাজের চিত্র: চর্যাপদে তৎকালীন সমাজের বিভিন্ন দিক, যেমন - সামাজিক ব্যবস্থা, মানুষের জীবনযাপন, আচার-অনুষ্ঠান ইত্যাদি বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। এটি তৎকালীন সমাজের একটি মুল্যবান দলিল। 5. সংস্কৃতির প্রতিফলন: চর্যাপদে প্রাচীন বাংলার সাংস্কৃতিক ধারা, লোকজ বিশ্বাস এবং ধর্মীয় সংস্কৃতির প্রতিফলন পাওয়া যায়। এটি প্রাচীন বাংলার সাংস্কৃতিক ইতিহাসকে জানার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। 6. শিক্ষামূলক উপাদান: চর্যাপদে বৌদ্ধ ধর্মের নানা তত্ত্ব এবং শিক্ষামূলক উপাদান পাওয়া যায় যা শিক্ষার্থীদের জন্য মুল্যবান তথ্য প্রদান করে।
চর্যাপদ বাংলা সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হয়। এর মাধ্যমে আমরা প্রাচীন বাংলার ভাষা, সাহিত্য, ধর্ম, সংস্কৃতি এবং সমাজ সম্পর্কে বিশদ ধারণা লাভ করি। চর্যাপদের গুরুত্ব এবং তার সাহিত্যিক মূল্যায়ন বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
****2) প্রশ্ন. বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে চর্যাপদের গুরুত্ব কতখানি বিচার করো। ৫
ভূমিকা:
বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন হিসেবে চর্যাপদ এক অনন্য স্থান অধিকার করে আছে। চর্যাপদ বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনতম পাণ্ডুলিপি হিসেবে পরিচিত যা ৮ম থেকে ১২শ শতকের মধ্যে রচিত। এটি মূলত বৌদ্ধ সহজিয়া সাধকদের দ্বারা রচিত গীতিকবিতা। এই পদগুলি একদিকে ধর্মীয় উপদেশমূলক, অন্যদিকে জীবনদর্শন ও চিন্তাভাবনার গভীরতার প্রতিফলন ঘটিয়েছে।
চর্যাপদের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট: চর্যাপদ রচনার সময়কাল ছিল বৌদ্ধ ধর্মের প্রচলিত যুগ। বৌদ্ধধর্মের সহজিয়া সম্প্রদায়ের সাধকগণ বিভিন্ন ধর্মীয় সাধনা এবং দর্শনকে কবিতার আকারে চর্যাপদে উপস্থাপন করেছেন। চর্যাপদগুলি একদিকে ধর্মীয় ভাবনার গভীরতা প্রকাশ করে, অন্যদিকে তা সাধারণ মানুষের জীবন, চিন্তা ও ভাবনার প্রতিফলন ঘটায়।
ভাষার বিবর্তন: চর্যাপদের ভাষা বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনতম রূপ হিসাবে বিবেচিত হয়। চর্যাপদের ভাষায় তৎকালীন প্রাকৃত ভাষার প্রভাব বিদ্যমান, যা পরবর্তীতে বাংলা ভাষার বিকাশে প্রভাব ফেলেছে। এর ভাষা সহজ ও সরল হলেও তাতে মিশ্রিত রয়েছে প্রতীকী ও আঞ্চলিক ভাষার মিশ্রণ। চর্যাপদের ভাষার মাধ্যমে আমরা তৎকালীন সমাজের ভাষা ও সংস্কৃতি সম্পর্কে অনেক ধারণা পেতে পারি।
সাহিত্যের প্রাচীন নিদর্শন: চর্যাপদ বাংলা সাহিত্যের প্রথম লিখিত দলিল। এই পদগুলি প্রাচীন বাংলার সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাসের এক মূল্যবান দলিল। এতে কেবল ধর্মীয় বা আধ্যাত্মিক ভাবনাই নয়, তৎকালীন সমাজের নানাদিকের প্রতিফলন ঘটেছে। চর্যাপদগুলি মানুষের দৈনন্দিন জীবন, সামাজিক মূল্যবোধ, প্রেম-ভালোবাসা, সাধনা ও চিন্তাভাবনার উপর আলোকপাত করেছে।
ধর্মীয় ও দার্শনিক গুরুত্ব: চর্যাপদ মূলত বৌদ্ধ ধর্মের সহজিয়া সম্প্রদায়ের ধর্মীয় গীতিকবিতা। এই পদগুলি বৌদ্ধ সহজিয়া সাধনার মূলমন্ত্র ও দর্শন তুলে ধরে। সহজিয়া সাধনার মাধ্যমে সহজ পথে মনের মুক্তি ও পরম সত্যের সন্ধানই ছিল এর মূল লক্ষ্য। চর্যাপদে ধর্মীয় ভাবনার সঙ্গে দার্শনিক তত্ত্বের অপূর্ব সংমিশ্রণ ঘটেছে যা তৎকালীন সমাজে গভীর প্রভাব বিস্তার করেছে।
সাংস্কৃতিক ও সামাজিক প্রভাব: চর্যাপদ তৎকালীন বাংলার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনেও বিশাল প্রভাব ফেলেছে। এতে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন দিক যেমন কৃষিকাজ, শ্রমজীবন, প্রেম, প্রণয় ইত্যাদির চিত্র উঠে এসেছে। চর্যাপদের পদগুলিতে ব্যবহৃত প্রতীকী ভাষা ও আঞ্চলিক শব্দসমূহ বাংলার লোকজ সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে গিয়ে এক অনন্য রূপ ধারণ করেছে।
চর্যাপদের সাহিত্যিক মূল্যায়ন: চর্যাপদ কেবল ধর্মীয় বা আধ্যাত্মিক গীতিকবিতা নয়, এটি বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক সাহিত্যিক সৃষ্টি। এর প্রতিটি পদে কাব্যিক সৌন্দর্য, ছন্দময়তা ও ভাষার নান্দনিকতা প্রকাশিত হয়েছে। চর্যাপদে ব্যবহৃত রূপক ও প্রতীকসমূহ বাংলা সাহিত্যের পরবর্তীকালের কবি ও লেখকদের অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে।
উপসংহার:
চর্যাপদ বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে এক অমূল্য রত্ন। এটি বাংলা ভাষার প্রাচীনতম লিখিত নিদর্শন হওয়ার পাশাপাশি তৎকালীন সমাজ, সংস্কৃতি ও ধর্মীয় ভাবনার এক অনন্য দলিল। চর্যাপদ বাংলা সাহিত্যের ভিত্তি স্থাপন করেছে এবং এর প্রভাব পরবর্তীকালের সাহিত্যে স্পষ্টভাবে দেখা যায়। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে চর্যাপদের গুরুত্ব অপরিসীম এবং এটি বাংলা সাহিত্যের গৌরবময় উত্তরাধিকারের অংশ হিসেবে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
****3. প্রশ্ন. বাংলা সাহিত্যের ধারায় 'শ্রীকৃষ্ণকীর্তন' কাব্যের গুরুত্ব সংক্ষেপে আলোচনা কর। ৫
বাংলা সাহিত্যের ধারায় 'শ্রীকৃষ্ণকীর্তন' কাব্যের গুরুত্ব:
‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন ও অমূল্য একটি কাব্য রচনা। এটি বৈষ্ণব পদাবলির একটি গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন, যা চণ্ডীদাস কর্তৃক রচিত। কাব্যটির বিষয়বস্তু কৃষ্ণের লীলা এবং রাধা-কৃষ্ণের প্রেমকাহিনী। 'শ্রীকৃষ্ণকীর্তন' বাংলা সাহিত্যের ধারায় বিশেষ গুরুত্ব রাখে যা নিম্নে আলোচনা করা হলো:
১. প্রাচীন বাংলা সাহিত্যের অন্যতম নিদর্শন:
‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনতম কাব্যগুলির মধ্যে অন্যতম। এটি ১৩শ শতাব্দীর শেষ থেকে ১৪শ শতাব্দীর প্রথম দিকে রচিত। এই কাব্যটি আমাদের প্রাচীন বাংলা সাহিত্যের ধারা ও সংস্কৃতি সম্পর্কে ধারণা প্রদান করে। প্রাচীন বাংলার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনধারা, ধর্মীয় বিশ্বাস, এবং ভাষার বিবর্তন এই কাব্যে প্রতিফলিত হয়েছে।
২. ভাষার বিবর্তন ও বৈচিত্র্য:
‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ কাব্যের ভাষা প্রাচীন বাংলা ভাষার একটি নিদর্শন। কাব্যটিতে প্রাকৃত, অপভ্রংশ ও তৎকালীন বাংলা ভাষার মিশ্রণ লক্ষ্য করা যায়। এটি ভাষার বিবর্তন ও পরিবর্তনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল। কাব্যটিতে ব্যবহৃত শব্দ ও বাক্যগঠন আমাদেরকে তৎকালীন বাংলার ভাষার চলন সম্পর্কে ধারণা প্রদান করে।
৩. রাধা-কৃষ্ণের প্রেমকাহিনী:
‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ কাব্যের প্রধান বিষয়বস্তু রাধা ও কৃষ্ণের প্রেমকাহিনী। এই কাহিনীটি বৈষ্ণব ধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। চণ্ডীদাসের কাব্যে রাধা-কৃষ্ণের প্রেমের অপূর্ব বর্ণনা, তাদের লীলা, প্রেমের বিরহ ও মিলন খুব সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এই প্রেমকাহিনী শুধুমাত্র ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, বাংলা সাহিত্যের রোমান্টিক ধারাতেও একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে।
৪. বৈষ্ণব পদাবলির গুরুত্ব:
‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ বৈষ্ণব পদাবলির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বৈষ্ণব পদাবলি বাংলা সাহিত্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারা যা ভক্তি ও প্রেমের মিশ্রণে রচিত। চণ্ডীদাসের কাব্যে বৈষ্ণব ভক্তির অপূর্ব নিদর্শন পাওয়া যায়। এটি ধর্মীয় সাহিত্য এবং ভক্তি আন্দোলনের একটি মূর্ত প্রতীক।
৫. সমাজ ও সংস্কৃতির প্রতিফলন:
‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ কাব্যে তৎকালীন সমাজ ও সংস্কৃতির প্রতিফলন পাওয়া যায়। কাব্যটিতে কৃষ্ণের লীলার পাশাপাশি তৎকালীন সমাজের দৈনন্দিন জীবন, সংস্কৃতি, এবং সামাজিক সমস্যার চিত্র উঠে এসেছে। এই কাব্য আমাদেরকে তৎকালীন বাংলার সমাজের একটি স্পষ্ট ধারণা প্রদান করে।
৬. সঙ্গীত ও নৃত্যের প্রভাব:
‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ কাব্যের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল এর গীতিকাব্য রূপ। কাব্যটি সঙ্গীত ও নৃত্যের সঙ্গে সম্পর্কিত। বৈষ্ণব পদাবলির গীতিকাব্য রূপ পরবর্তী কালে বাংলা লোকসংগীত, কীর্তন ও অন্যান্য গীতিধারার উপর প্রভাব ফেলেছে।
উপসংহার:
‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ বাংলা সাহিত্যের এক অনন্য সম্পদ। এটি প্রাচীন বাংলার ভাষা, সাহিত্য, সমাজ, সংস্কৃতি এবং ধর্মীয় জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিচ্ছবি। চণ্ডীদাসের এই কাব্য বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে একটি বিশেষ স্থান অধিকার করে এবং এর গুরুত্ব অপরিসীম। ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ আমাদের প্রাচীন সাহিত্য এবং সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিতি করিয়ে দেয় এবং বাংলা সাহিত্যের ধারা বিকাশে একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হয়।
****4. প্রশ্ন: শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য কে, কবে, কোথা থেকে আবিষ্কার করেন? বড়ু চন্ডীদাসের 'শ্রীকৃষ্ণকীর্তন' কাব্যকে আখ্যানকাব্য বলার কারণ ব্যাখ্যা কর। ৩+৭
শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের আবিষ্কার:
'শ্রীকৃষ্ণকীর্তন' বাংলা সাহিত্যের এক অমূল্য রত্ন। এটি আবিষ্কার করেন বসন্তরঞ্জন রায় বিদ্বদ্বল্লভ। ১৯০৯ সালে পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলার কাঁঠালিয়া গ্রামের নরেন্দ্রনাথ করের বাড়ি থেকে এই পাণ্ডুলিপিটি প্রথম আবিষ্কৃত হয়। বসন্তরঞ্জন রায় বিদ্বদ্বল্লভ এটি উদ্ধার করেন এবং এর সাহিত্যিক মূল্যায়ন করেন। তিনি এই কাব্যগ্রন্থটির পাণ্ডুলিপি সংগ্রহ করেন এবং পরবর্তীতে এর প্রথম সংস্করণ প্রকাশ করেন।
বড়ু চন্ডীদাসের 'শ্রীকৃষ্ণকীর্তন' কাব্য:
আখ্যানকাব্যের সংজ্ঞা: আখ্যানকাব্য হল এমন এক ধরনের কবিতা যা মূলত গল্পের আকারে লেখা হয়। এতে একটি নির্দিষ্ট কাহিনী থাকে যা কবিতার মাধ্যমে বর্ণনা করা হয়। আখ্যানকাব্যে সাধারণত নায়ক, নায়িকা এবং অন্যান্য চরিত্রের উপস্থিতি থাকে এবং একটি নির্দিষ্ট ঘটনা বা ঘটনাক্রম নিয়ে কবিতার বিন্যাস হয়। আখ্যানকাব্যের মূল বৈশিষ্ট্য হল এর বর্ণনাত্মক গুণ এবং নাটকীয় উপস্থাপন।
'শ্রীকৃষ্ণকীর্তন' কাব্যকে আখ্যানকাব্য
আখ্যানকাব্যের সংজ্ঞা: আখ্যানকাব্য হল এমন এক ধরনের কবিতা যা মূলত গল্পের আকারে লেখা হয়। এতে একটি নির্দিষ্ট কাহিনী থাকে যা কবিতার মাধ্যমে বর্ণনা করা হয়। আখ্যানকাব্যে সাধারণত নায়ক, নায়িকা এবং অন্যান্য চরিত্রের উপস্থিতি থাকে এবং একটি নির্দিষ্ট ঘটনা বা ঘটনাক্রম নিয়ে কবিতার বিন্যাস হয়। আখ্যানকাব্যের মূল বৈশিষ্ট্য হল এর বর্ণনাত্মক গুণ এবং নাটকীয় উপস্থাপন। 'শ্রীকৃষ্ণকীর্তন' কাব্যকে আখ্যানকাব্য 'শ্রীকৃষ্ণকীর্তন' কাব্যকে আখ্যানকাব্য বলার কারণ: 'শ্রীকৃষ্ণকীর্তন' কাব্যটি বড়ু চন্ডীদাস রচিত একটি আখ্যানকাব্য। এটির আখ্যানকাব্য হিসাবে চিহ্নিত হওয়ার পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে।
১. কাহিনী ভিত্তিক রচনা: 'শ্রীকৃষ্ণকীর্তন' কাব্যটি মূলত শ্রীকৃষ্ণ এবং রাধার প্রেম কাহিনী নিয়ে রচিত। এতে শ্রীকৃষ্ণের দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন ঘটনাকে ভিত্তি করে কাব্যের রচনা করা হয়েছে। রাধা-কৃষ্ণের প্রেম, তাদের বিচ্ছেদ, মিলন এবং বিভিন্ন লীলাকে কেন্দ্র করে কাহিনী বিন্যস্ত হয়েছে।
২. নাটকীয় উপস্থাপন: কাব্যটির প্রতিটি অংশ নাটকীয়তার সাথে উপস্থাপিত হয়েছে। কাব্যটি বিভিন্ন সংলাপ এবং গীতের মাধ্যমে রচিত যা নাটকের মতো মনে হয়। বড়ু চন্ডীদাস প্রতিটি চরিত্রের সংলাপ এবং অভিব্যক্তি এমনভাবে উপস্থাপন করেছেন যে তা পাঠকের মনে একটি জীবন্ত চিত্রের মতো ফুটে ওঠে।
৩. চরিত্রের বৈচিত্র্য: 'শ্রীকৃষ্ণকীর্তন' কাব্যে প্রধান চরিত্র হিসেবে শ্রীকৃষ্ণ এবং রাধা ছাড়াও আরও অনেক চরিত্র রয়েছে। এই চরিত্রগুলি কাব্যের কাহিনীকে আরও সমৃদ্ধ করেছে। শ্রীকৃষ্ণের বন্ধু, রাধার সখী, যশোদা, নন্দ, এবং অন্যান্য চরিত্রগুলি কাব্যের কাহিনীকে গতিশীল করেছে।
৪. রসাত্মকতা: কাব্যটিতে প্রেম, বিরহ, আনন্দ, দুঃখ ইত্যাদি বিভিন্ন রসের সংমিশ্রণ রয়েছে। প্রতিটি রসের মাধ্যমে কাব্যের কাহিনীকে আরও জীবন্ত করা হয়েছে। প্রেমের রসে শ্রীকৃষ্ণ এবং রাধার মিলন, বিরহের রসে তাদের বিচ্ছেদ, আনন্দের রসে তাদের লীলা ইত্যাদি কাব্যটিকে একটি পূর্ণাঙ্গ আখ্যানকাব্যরূপে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
৫. ভাষার সৌন্দর্য: বড়ু চন্ডীদাসের 'শ্রীকৃষ্ণকীর্তন' কাব্যে ব্যবহৃত ভাষা অত্যন্ত সরল, সরস এবং মাধুর্যমণ্ডিত। কাব্যের ভাষা, ছন্দ এবং অলংকার ব্যবহার পাঠকের মনে একটি সুন্দর আবহ সৃষ্টি করে। ভাষার এই সৌন্দর্য কাব্যটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে।
৬. ঐতিহাসিক গুরুত্ব: 'শ্রীকৃষ্ণকীর্তন' কাব্যটি বাংলা সাহিত্যের এক অমূল্য সম্পদ। এটি বাংলা আখ্যানকাব্যের প্রাচীনতম নিদর্শনগুলির মধ্যে একটি। বড়ু চন্ডীদাসের এই কাব্য বাংলা সাহিত্যে আখ্যানকাব্যের ধারা প্রতিষ্ঠা করেছে এবং পরবর্তী কাব্যিক রচনায় এর প্রভাব সুস্পষ্টভাবে লক্ষ্য করা যায়।
উপসংহার:
বড়ু চন্ডীদাসের 'শ্রীকৃষ্ণকীর্তন' কাব্য একটি অমূল্য আখ্যানকাব্য যা বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে আছে। শ্রীকৃষ্ণ এবং রাধার প্রেম কাহিনীকে ভিত্তি করে রচিত এই কাব্যটি ভাষার সৌন্দর্য, নাটকীয় উপস্থাপন, চরিত্রের বৈচিত্র্য এবং রসাত্মকতার মিশেলে একটি পূর্ণাঙ্গ আখ্যানকাব্যরূপে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এর আবিষ্কার বাংলা সাহিত্যের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক এবং এর সাহিত্যিক মূল্যায়ন আমাদের সাহিত্যিক ঐতিহ্যকে আরও সমৃদ্ধ করেছে।
****5. প্রশ্ন: বাংলা রামায়ণের শ্রেষ্ঠ অনুবাদকের কাব্যের বিশিষ্টতা সম্পর্কে আলোচনা কর। (১০)
বাংলা সাহিত্যে রামায়ণ এক বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে। এটি ভারতীয় মহাকাব্যগুলির মধ্যে অন্যতম প্রধান এবং এর অনুবাদ বাংলায় এক বিশাল সাহিত্যিক ঐতিহ্যের অঙ্গ। বাংলা ভাষায় রামায়ণের শ্রেষ্ঠ অনুবাদক হিসাবে অনেক কবি খ্যাতি অর্জন করেছেন, তাদের মধ্যে কৃত্তিবাস ওঝা, কবিকঙ্কন মুকুন্দরাম চক্রবর্তী, এবং মাইকেল মধুসূদন দত্ত উল্লেখযোগ্য। এই অনুবাদকদের কাব্যের বৈশিষ্ট্যগুলি সম্পর্কে আলোচনা করা যাক।
কৃত্তিবাস ওঝার রামায়ণ:
কৃত্তিবাস ওঝা রচিত "কৃত্তিবাসী রামায়ণ" বাংলার রামায়ণ সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ অনুবাদ। কৃত্তিবাস ওঝার রামায়ণের বৈশিষ্ট্য হল:
1. সহজ ভাষা: কৃত্তিবাসের রামায়ণ সাধারণ মানুষের ভাষায় লেখা। এর সরলতা ও সহজবোধ্যতা এটি জনপ্রিয় করে তুলেছে।
2. সংস্কৃতির প্রতিফলন: কৃত্তিবাস রামায়ণ বাংলার স্থানীয় সংস্কৃতির সঙ্গে মূল কাহিনীকে মিলিয়ে রচনা করেছেন। এতে স্থানীয় ঐতিহ্য, আচার-অনুষ্ঠান এবং সামাজিক জীবনের প্রভাব দেখা যায়।
3. কাব্যিক শৈলী: কৃত্তিবাসের রামায়ণ কবিতার আকারে রচিত। তাঁর ভাষার ছন্দ ও অলংকার ব্যবহারের কৌশল পাঠককে মুগ্ধ করে।
4. ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধ: কৃত্তিবাস রামায়ণ ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষার মাধ্যমে পাঠকদের অনুপ্রাণিত করে। এতে ভক্তি, ধর্ম ও নৈতিকতা গুরুত্ব সহকারে উপস্থাপিত হয়েছে।
কবিকঙ্কন মুকুন্দরামের রামায়ণ:
কবিকঙ্কন মুকুন্দরাম চক্রবর্তী রচিত "চণ্ডীমঙ্গল" কাব্যের পাশাপাশি রামায়ণের অনুবাদক হিসাবেও পরিচিত। তাঁর রামায়ণের বৈশিষ্ট্য হল:
1. আঞ্চলিকতা: মুকুন্দরামের রামায়ণে স্থানীয় কথ্য ভাষার ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। এর মাধ্যমে স্থানীয় সংস্কৃতি ও জীবনযাত্রার প্রতিফলন ঘটে। 2. মানবীয় দৃষ্টিকোণ: মুকুন্দরাম রামায়ণ কাহিনীকে মানবীয় দৃষ্টিকোণ থেকে উপস্থাপন করেছেন, যা পাঠকদের মানসিকভাবে যুক্ত করে। 3. সংগীতময়তা: তাঁর রচনায় ছন্দ ও সুরের ব্যবহার পাঠকদের মুগ্ধ করে। তাঁর ভাষার কাব্যিকতা ও সংগীতময়তা অনবদ্য। 4. নৈতিক শিক্ষা: মুকুন্দরামের রামায়ণে নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষা গুরুত্ব পেয়েছে। এতে ধর্মের আদর্শ ও নৈতিকতাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।
মাইকেল মধুসূদন দত্তের রামায়ণ:
মাইকেল মধুসূদন দত্তের "মেঘনাদবধ কাব্য" রামায়ণের একটি অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাংলা অনুবাদ। তাঁর অনুবাদের বৈশিষ্ট্য হল: 1. উচ্চমানের ভাষা: মধুসূদনের রামায়ণ ভাষা ও শৈলীতে অনন্য। তাঁর ভাষার ব্যবহার ও শব্দচয়ন অত্যন্ত সমৃদ্ধ।
2. ইউরোপীয় প্রভাব: মধুসূদন তাঁর রচনায় ইউরোপীয় সাহিত্যিক শৈলীর প্রভাব নিয়ে এসেছেন। এতে তাঁর রচনা আরও সমৃদ্ধ হয়েছে। 3. প্রকৃতির বর্ণনা: মধুসূদনের রামায়ণে প্রকৃতির বর্ণনা বিশেষ উল্লেখযোগ্য। তাঁর রচনায় প্রকৃতির রূপ ও রস তুলে ধরা হয়েছে।
4. মানবীয় মূল্যবোধ: মধুসূদনের রামায়ণ মানবীয় মূল্যবোধকে গুরুত্ব দেয়। এতে মানুষের দুঃখ, বেদনা, ভালোবাসা ও আত্মত্যাগের কাহিনী বিশেষভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
উপসংহার:
বাংলা রামায়ণের শ্রেষ্ঠ অনুবাদকদের কাব্যের বিশিষ্টতা বিভিন্ন দিক থেকে আলোকিত হয়েছে। কৃত্তিবাস ওঝার সরলতা ও সহজবোধ্যতা, মুকুন্দরাম চক্রবর্তীর আঞ্চলিকতা ও মানবীয় দৃষ্টিকোণ এবং মাইকেল মধুসূদন দত্তের উচ্চমানের ভাষা ও ইউরোপীয় প্রভাব এই অনুবাদকদের কাব্যিক বৈশিষ্ট্যকে সমৃদ্ধ করেছে। এদের অনুবাদ শুধু সাহিত্যিক দিক থেকে নয়, ধর্মীয় ও নৈতিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। এদের অনুবাদ বাংলার সাহিত্যিক ঐতিহ্যে এক বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে।
জীবনে সেই সফল হয় যে জীবনে রিক্স নেয়…পেমেন্টের সিস্টেম এমনিই করা হয়েছে যে পেমেন্ট হওয়ার পর পরই PDF সাজেশন টি পাবে.ভালো কমেন্ট করার জন্য ধন্যবাদ.প্রয়োজন আমাকে কন্টাক করতে পারো My WhatshApp Number-7364983019.
অনেক অনেক ধন্যবাদ স্যার, পেমেন্ট করার পর খুব বেশি হলে 10 সেকেন্ড এর মধ্যে আমি পেইড pdf টি পেয়ে গেছি।
অনেক ধন্যবাদ স্যার
খুব রিস্ক নিয়ে আমি পেমেন্ট করলাম
খুব বেশী হলে ১০ সেকেন্ডের মধ্যে আমার ফোনে PDF টি ডাউনলোড হয়ে গেছে
জীবনে সেই সফল হয় যে জীবনে রিক্স নেয়…পেমেন্টের সিস্টেম এমনিই করা হয়েছে যে পেমেন্ট হওয়ার পর পরই PDF সাজেশন টি পাবে.ভালো কমেন্ট করার জন্য ধন্যবাদ.প্রয়োজন আমাকে কন্টাক করতে পারো My WhatshApp Number-7364983019.